IQNA

সুদানে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলার ঘটনায় জাতিসংঘ মহাসচিবের তীব্র নিন্দা

0:04 - December 15, 2025
সংবাদ: 3478610
ইকনা- সুদানে জাতিসংঘের এক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় ছয় শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। তাঁরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘আমি সুদানের কাদুগলিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর লজিস্টিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে নৃশংস ড্রোন হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের লক্ষ্য করে হামলা আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।

সুদানের কোরদোফান অঞ্চলের কাদুগলি শহরে অবস্থিত জাতিসংঘের ভবনটিতে গতকাল শনিবার এ হামলা হয়।

গুতেরেসের বিবৃতিতে বলা হয়, হামলায় আরও আট শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন। হতাহত ব্যক্তিদের সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। তাঁরা ইউএন ইন্টারিম সিকিউরিটি ফোর্স ফর আবেইয়ের (ইউএনআইএসএফএ) হয়ে দায়িত্বরত ছিলেন।

গুতেরেস বলেন, ‘দক্ষিণ কোরদোফানে আজ (শনিবার) শান্তিরক্ষীদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

হামলায় নিহত শান্তিরক্ষীদের সবাই বাংলাদেশি। তাঁরা ইউএন ইন্টারিম সিকিউরিটি ফোর্স ফর আবেইয়ের (ইউএনআইএসএফএ) হয়ে দায়িত্বরত ছিলেন। হামলায় আরও আট শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন।

সুদানের সেনাবাহিনী ওই হামলার দায় র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) নামে দেশটির আধা সামরিক বাহিনীর ওপর চাপিয়েছে।

সুদানে দুই বছরের বেশি সময় ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। দেশটির সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে এ লড়াই চলছে।

আরএসএফ তাৎক্ষণিকভাবে হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

সুদানের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, এ হামলা বিদ্রোহী মিলিশিয়া এবং এর পেছনে যাঁরা আছেন, তাঁদের ধ্বংসাত্মক কৌশলের স্পষ্ট প্রকাশ।

সুদান সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করেছে। ভিডিওতে একটি স্থান থেকে ঘন কালো ধোঁয়া আকাশে উঠতে দেখা যাচ্ছে। তারা বলেছে, এটি জাতিসংঘের স্থাপনা।

বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী হতাহত হওয়ার এ ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

দক্ষিণ কোরদোফানে আজ (শনিবার) শান্তিরক্ষীদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

যেখানে হামলা হয়েছে, সেই তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল আবেই নিয়ে সুদান ও দক্ষিণ সুদানের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। ২০১১ সালে সুদান থেকে আলাদা হয়ে দক্ষিণ সুদান একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এর পর থেকে সেখানে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশন মোতায়েন রয়েছে।

দুই দেশের সীমান্তে অবস্থিত আবেই বিশেষ প্রশাসনিক মর্যাদার অঞ্চল।

গুতেরেস সুদানকে এখনই একটি যুদ্ধবিরতিতে উপনীত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানে গৃহযুদ্ধ চলছে। সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে ক্ষমতা দখলের এ লড়াই রাজধানী খার্তুম ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।

সংঘাতে এ পর্যন্ত ৪০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, নিহত ব্যক্তিদের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি।

সাম্প্রতিক সময়ে সুদানের কোরদোফানকে ঘিরে মূল লড়াই হচ্ছে, বিশেষ করে আরএসএফ এল-ফাশের এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর। পশ্চিমাঞ্চলের দারফুরে এটাই সুদান সেনাবাহিনীর সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটি ছিল।

সুদানে শান্তিরক্ষীদের ওপর এ হামলার মাত্র এক মাস আগে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ইউএনআইএসএফএ শান্তিরক্ষা মিশনের মেয়াদ আরও এক বছরের জন্য নবায়ন করার পক্ষে ভোট দেয়।

এ গৃহযুদ্ধ বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে এবং সুদানের কয়েকটি অঞ্চলকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

সুদানে শান্তিরক্ষীদের ওপর এ হামলার মাত্র এক মাস আগে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ইউএনআইএসএফএ শান্তি রক্ষা মিশনের মেয়াদ আরও এক বছরের জন্য নবায়ন করার পক্ষে ভোট দেয়।

বিশ্বের যুদ্ধ ও সংঘাতকবলিত বিভিন্ন অঞ্চলে মোতায়েন জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের অন্যতম প্রধান অবদানকারী দেশ হলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশি সেনারা দীর্ঘদিন ধরে আবেইয়ে মোতায়েন রয়েছেন।

 

captcha