মানবজমিনের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা ইকনা: নেদারল্যান্ডসের স্কুল, হাসপাতাল, সরকারি ভবন, গণ পরিবহন সহ বিভিন্ন স্থানে বোরকা নিষিদ্ধ হচ্ছে। পার্লামেন্টে এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন দেশটির বেশির ভাগ এমপি। এ বিলটি এখন পাঠানো হবে সিনেটে। যদি সিনেট এ প্রস্তাবটি পাস করে তাহলে তা আইনে পরিণত হবে। এ নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের ৩৪৩ পাউন্ড জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে বিলে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এমন আইন চালু হয়েছে। নরওয়ে ও জার্মানি এমন আইন করার কথা বিবেচনা করছে। অন্যদিকে সরকার যদি বোরকা নিষিদ্ধ করে তাহলে তাতে সমর্থন দেয়ার কথা জানিয়েছে শতকরা ৫৭ ভাগ বৃটিশ। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। এতে বলা হয়, মঙ্গলবার প্রস্তাবটি পার্লামেন্টে ভোটে দেয়া হয়। এতে আসন রয়েছে মোট ১৫০টি। এর মধ্যে ১৩২ জন এমপিই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পুরো মুখ ঢাকা মুখোশ ও হেলমেট সহ সারা মুখ ঢেকে থাকে এমন কিছু পরা নিষিদ্ধ। উল্লেখ্য, নেদারল্যান্ডসে খুব কম সংখ্যক নারী আছেন, যারা ইসলামিক পোশাক পরেন। তারা নেকাব ও বোরকা ব্যবহার করেন। এ পোশাক নিষিদ্ধ করা নিয়ে কয়েক বছর ধরে সেখানে উত্তপ্ত বিতর্ক হয়েছে। এ বিলটি আইনে পরিণত হলেও নেদারল্যান্ডসের রাস্তায় তা দেখা যেতে পারে। অর্থাৎ একেবারে পুরোদমে নিষিদ্ধ হচ্ছে না এ পোশাক। এক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু বোরকা পুরোপুরি নিষিদ্ধের দাবি করেছে বিরোধী দল ফ্রিডম পার্টি। আগামী মার্চে সেখানে পার্লামেন্ট নির্বাচন। এ নির্বাচনের আগে জনমত জরিপে এগিয়ে আছে এ দলটি। এর প্রতিষ্ঠাতা গির্ট উইল্ডার্স সীমিত আকারে বোরকা নিষিদ্ধকে সঠিক দিকনির্দেশনায় একধাপ অগ্রগতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তবে তিনি নেদারল্যান্ডসে বোরকা পুরোপুরি বন্ধ করার আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। বলেছেন, আগামী বছর নির্বাচনে যদি তার দল বিজয়ী হয় তাহলে তিনি এ আন্দোলন বেগবান করবেন। নেদারল্যান্ডসের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোনাল্ড প্লাস্টার্ক বোরকা নিষিদ্ধের এ বিল আনেন গত বছর। এতে অবশ্য সমর্থন ছিল মন্ত্রীপরিষদের। ওই বিল আনার পর সরকার একটি বিবৃতি দেয়। তাতে বলা হয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবামুলক প্রতিষ্ঠান, সরকারি ভবনসমুহ ও গণ পরিবহনে ভবিষ্যতে মুখ ঢাকা পোশাক গ্রহণ করা হবে না। এতে আরও বলা হয়, মানুষ যেসব পোশাক পরতে চায় এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে জনগণের স্বাধীনতায় ভারসাম্য আনার চেষ্টা করেছে সরকার। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুত্তি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে এই নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা হবে। যেখানে মানুষের মুখ দেখার প্রয়োজন হবে অথবা নিরাপত্তার কারণে এমন পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে। তবে এই বিলের পিছনে কোনো ধর্মীয় কারণ নেই। উল্লেখ্য, এরই মধ্যে ইউরোপের কয়েকটি দেশে বোরকা নিষিদ্ধ হয়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হতে যাচ্ছে নেদারল্যান্ডস। এক্ষেত্রে ধর্মের ওপর আঘাত আসছে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন। অনেক চ্যালেঞ্জ এসেছে। তা সত্ত্বেও এ পথেই এগুচ্ছে নেদারল্যান্ডস। বিশেষ করে ফ্রান্সে বোরকা নিষিদ্ধ নিয়ে হুলস্থুল কা- ঘটে গেছে। সেখানকার একটি আদালত এমন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। তবে কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা বোরকা নিষিদ্ধই রাখবেন। এ দেশটিতে বোরকা নিষিদ্ধের ধারা শুরু হয় ২০১০ সালে। ওদিকে বোরকা নিষিদ্ধ করা হলে ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘন হয় বলে যে অভিযোগ করা হয় তা গত বছর প্রত্যাখ্যান করে ইউরোপিয়ান কোর্ট অব হিউম্যান রাইটস। তারা বরং বোরকা নিষিদ্ধের পক্ষেই সমর্থন দেয়। ফ্রান্সে বোরকা নিষিদ্ধ করা সংক্রান্ত আইনে বলা হয়েছে, কোনো নারী যদি প্রকাশ্য স্থানে পুরো মুখ ঢাকা বোরকা পরেন তাহলে তাকে ১২৭ পাউন্ড পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে। বোরকার বিরুদ্ধে প্রায় একই রকম পদক্ষেপ নিয়েছে বেলজিয়াম ও সুইজারল্যান্ডের কিছু অংশ। একই রকম পদক্ষেপ নিয়েছে ইউরোপীয় আরও কিছু দেশ। বেলজিয়ামে গত বছর যে আইন হয়েছে তার অধীনে বোরকা বা নেকাব পরলে তার বিরুদ্ধে ৬৬৫ পাউন্ড জরিমানা করা যাবে। একই সঙ্গে তিনি যে সুযোগ সুবিধা পান তা বন্ধ করে দেয়া হবে। এ উদ্যোগের নিন্দা জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তারা এমন উদ্যোগকে বুলগেরিয়ায় অসহিষ্ণুতা, অহেতুক ভীতি ও বর্ণবাদ বলে আখ্যায়িত করে। ওদিকে নরওয়েতেও বোরকা পরেন খুব কম নারী। তা সত্ত্বেও সরকার সেখানকার স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বোরকা নিষিদ্ধ করার কথা বিবেচনা করছে। একই রকম নীতি গ্রহণ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন জার্মানির কিছু সিনিয়র রাজনীতিক। ওদিকে ইউগভের এক জরিপে দেখা গেছে, বৃটেনে বোরকা নিষিদ্ধকে সমর্থন করেছেন শতকরা ৫৭ ভাগ মানুষ।