বার্তা সংস্থা ইকনা: তিনি গতকাল সকালে ইরানের পবিত্র কোম অঞ্চল থেকে আসা সর্বস্তরের হাজার হাজার নাগরিকের এক সমাবেশে বলেছেন, অচল-হয়ে-পড়া বুড়ো উপনিবেশবাদী ব্রিটেন আবারও পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে এসেছে এবং এ অঞ্চলের কোনো কোনো সরকারের সহযোগিতা নিয়ে তার স্বার্থ হাসিল করতে চায়। আর এ জন্যই নিজে বাস্তব হুমকি হওয়া সত্ত্বেও ইরানকে ‘হুমকি’ বলে দাবি করছে ব্রিটেন।
স্বৈরাচারী শাহ সরকারের বিরুদ্ধে কোমের জনগণের রক্তাক্ত গণ-অভ্যুত্থানের ৩৯ তম বার্ষিকী উপলক্ষে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ১৯৭৮ সালের এই গণ-অভ্যুত্থানের জের ধরে গোটা ইরানে শাহ-বিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং এক বছর পর গণ-বিক্ষোভের মুখে সফল হয় ইসলামী বিপ্লব।
তিনি বলেন, ব্রিটিশ শক্তি ও তার সহযোগীরা বর্তমানে ইরানসহ এ অঞ্চলের দেশগুলোর বিষয়ে নানা ষড়যন্ত্র করছে। ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন ও লিবিয়াকে টুকরো টুকরো করা তাদের অন্যতম লক্ষ্য; আর ইরানের বিষয়েও তাদের একই ইচ্ছা থাকলেও ইরানের জনমতকে তীব্র ভয় পায় বলে তা তারা মুখে আনছে না।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ব্রিটেন পরমাণু-সমঝোতা পরবর্তী সময়ে ইরানের ওপর নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ষড়যন্ত্রে মশগুল রয়েছে এবং ইরানসহ এ অঞ্চলের নানা ব্যক্তিকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে যাতে তারা ইসলামী এই রাষ্ট্র ব্যবস্থা আর ইরানি জাতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
তিনি ইরানের বিরুদ্ধে ব্রিটেনের শত্রুতামূলক নানা পদক্ষেপের প্রত্যক্ষ কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলেছেন, এর চেয়েও বেশি খবিস তথা নোংরা শত্রু কি থাকতে পারে?
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা মার্কিন সরকার, ব্রিটেন, বলদর্পী আন্তর্জাতিক মহল ও ইহুদিবাদী ইসরাইলকে স্বাধীন ইরানের প্রধান শত্রু বলে অভিহিত করেন। আর অন্যদিকে হতাশা, আদর্শিক লক্ষ্যহীনতা, বিমর্ষতা, অলসতা, ভুল নীতি ও খারাপ আচরণ, নানা মতভেদ এবং সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিকে ইরানের ঘরোয়া শত্রু বলে সতর্ক করে দেন।
তিনি ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ও কঠোরতা বজায় রেখে আরও বেশি ছাড় আদায় করতে পরবর্তী মার্কিন সরকারের প্রতি দেশটির কথিত 'ভদ্র' পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির উপদেশের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, এটা কি শত্রুতা নয়?
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা সর্বস্তরের নাগরিকদের জন্য শত্রুদের চিহ্নিত করা এবং তাদের পরিকল্পিত নান লক্ষ্য সনাক্ত করার ওপর জোর দিয়ে বলেছেন, শত্রুদের মূল লক্ষ্য হল ইরানি জাতি ও ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা। তারা ইরানের কোনো কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মাঝে মধ্যে শত্রুতা করেছে এ কারণে যে এইসব ব্যক্তি আর প্রতিষ্ঠান শত্রুদের মোকাবেলায় রুখে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শত্রুরা সেই ধর্মকে ভয় পায় যা রাজনীতি থেকে অবিচ্ছিন্ন এবং যা সরকার, অর্থনীতি, প্রশাসনসহ জীবনের সব ক্ষেত্রে ইসলামী নীতির সঠিক অর্থকে বাস্তবায়ন করতে চায়।
শত্রুদের মোকাবেলায় জাতীয় শক্তির নানা উপাদান জোরদারের ওপর জোর দিয়ে আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, জনগণের ও বিশেষ করে যুব সমাজের ঈমান জাতীয় শক্তি ও গতিশীলতা জোরদারের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। আর শিক্ষা ও বিজ্ঞান-চর্চাসহ সব ক্ষেত্রে ধর্মীয় জ্ঞান তথা ধর্মের উপস্থিতি ঈমান জোরদারের অন্যতম শর্ত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বিজাতীয়দের শত্রুতা অকার্যকর করার জন্য প্রতিরোধমূলক অর্থনীতি জোরদারের ওপর আবারও গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
উল্লেখ্য স্বৈরাচারী শাহ সরকারের বিরুদ্ধে কোমের জনগণের রক্তাক্ত গণ-অভ্যুত্থানের ৩৯ তম বার্ষিকী উপলক্ষে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ১৯৭৭ সালের এই গণ-অভ্যুত্থানের জের ধরে গোটা ইরানে শাহ-বিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল।