
কুরআন ও হাদীসের অকাট্য দলীল সুদ কে শুধু হারাম বলেই ক্ষান্ত হয় নি। তা যে সর্বাধিক ঘৃণ্য ও বীভৎস তাহা ও স্পষ্ট করে তুলেছে। সব গুনাহ সর্বতোভাবে এক ও অভিন্ন নহে। কোন কোন কবীরাহ্ গুনাহ অপর কোন কবীরাহ্ গুনাহ অপেক্ষা অধিক মারাত্মক ও ভয়াবহ হতে পারে। সুদ এই পর্যায়ের একটি গুনাহ। এটা গোটা অর্থনীতি ও অর্থব্যবস্থাকেই সম্পূর্ণ নাপাক বানিয়ে দেয়। এর দরুন ব্যক্তির মনে স্বার্থপরতা ও স্বার্থান্বেষণ তীব্র হয়ে ওঠে। স্বার্থান্ধ মানুষ ভাল-মন্দ-ন্যায়-অন্যায় যে কোন পথে ও উপায়ে স্বীয় হীন-স্বার্থোদ্ধারের জন্য পাগলের মত ছুটতে থাকে। স্বার্থলিপ্সা কুটিল হইতেও কুটিলতর পন্থা উদ্ভাবন ও অবলম্বনের জন্য প্রতি মুহূর্তেই উদগ্রীব হয়ে থাকে। মানবীয় দায়-সহানুভূতি, কল্যাণ কামনা ও সম্প্রীতি হৃদয়-মন হইতে কর্পূরের ন্যায় উঠে যায়। সাধারণ মানবীয় মন-মানসিকতা ও চরিত্রহীন হতেও হীন হয়ে যায়।
ইসলাম অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করিয়াছে। এই জন্য বিপুলভাবে উৎসাহ দিয়েছে ও বিভিন্ন কথা ও যুক্তির মাধ্যমে জনগণকে সে জন্য উদ্বুদ্ধ করিতে চেষ্টা করা হয়েছে। সামাজিক ন্যাং বিচার এবং নিরপেক্ষ ও ভারসাম্যপূর্ণ বন্টন ব্যবস্থা কার্যকর করাই ইসলামী অর্থ ব্যবস্থার উন্নয়নের চরম লক্ষ্যরূপ ঘোষিত হয়েছে।
অর্থনৈততিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ণ ইসলামী অর্থনীতির একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অবশ্য এই পরিকল্পনা একটা সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট ধারণা ও মৌলিক প্রতিশ্রুতির উপর ভিত্তি করিয়া রচনা করতে হবে। এই পর্যায়ে সিদ্ধান্ত সূত্র (Primises) রূপ তিনটি নিতিবাচক ও দুটি ইতিবাচক মৌলনীতির উল্লেখ করা যায়।
ইসলামী অর্থনীতিতে উন্নয়ন মূল্যবোধ নিরপেক্ষ হইতে পারে না। তাহা নকলবিশির কলাকৌশলও হইতে পারে না। বিনিয়োগযোগ্য বাড়তি মূলধন প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে সহজ শিল্পোয়ানের পথেও উহা অগ্রসর হইতে পারে না। উপরন্তু জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সঞ্জাত ও কাঠামো লব্ধ উন্নত অর্থনীতি পশ্চাত্যে দেশসমূহে কিছুটা কল্যাণবহ হইলেও আমাদের মত অবস্থা সহিত উহার প্রকৃত সঙ্গতি ও সামঞ্জস্য নাই বললেও অত্যুক্তি হইবে না। তাই উন্নয়নের ক্ষেত্রে অন্ধভাবে পশ্চিমা প্রক্রিয়ার অনুসরণ করে যাওয়া আত্মঘাতী ব্যাপার হয়ে দাড়াতে বাধ্য।