IQNA

ইমাম আলী ইবনে মুসা রেজার (আ.) মহিমান্বিত জন্ম দিবস

20:03 - August 03, 2017
সংবাদ: 2603563
১১ ই জিলকাদ ইসলামের ইতিহাসের এক মহা-খুশির দিন। কারণ, আজ হতে ১২৮৯ চন্দ্রবছর আগে ১৪৮ হিজরির এই দিনে মদিনায় ইমাম মুসা ইবনে জাফর সাদিক (আ.)'র ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য হযরত ইমাম রেজা (আ.)।

শাবিস্তানের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা ইকনা'র রিপোর্ট: বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইত তথা মাসুম বংশধররা ছিলেন খোদায়ী নানা গুণ ও সৌন্দর্যের প্রকাশ। তাঁরা ছিলেন মানব জাতির জন্য পূর্ণাঙ্গ বা পরিপূর্ণ আদর্শ। তাঁদের মহত গুণ ও যোগ্যতাগুলো সত্য-সন্ধানী এবং খোদা-প্রেমিকদের জন্য অফুরন্ত শিক্ষা ও প্রেরণার উতস হয়ে আছে।

শেখ সাদুক (র) হযরত ইমাম রেজা (আ.) সম্পর্কে এক বইয়ে লিখেছেন, অসাধারণ নানা গুণ ও যোগ্যতার জন্য আলী ইবনে মুসা রেজা (আ.) রেজা বা সন্তুষ্ট, সাদিক বা সত্যবাদী, ফাজেল বা গুণধর, মু'মিনদের চোখের প্রশান্তি বা আলো ও কাফির বা অবিশ্বাসীদের ক্ষোভের উতস প্রভৃতি উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন।

তবে আলী ইবনে মুসা রেজা (আ.)'র একটি বড় উপাধি হল 'আলেমে আ'লে মুহাম্মাদ' বা মুহাম্মাদ (সা.)'র আহলে বাইতের আলেম।

ইমাম রেজা (আ)'র সমসাময়িক যুগে জনগণের কাছে বিশ্বনবীর (সা.) পবিত্র বংশধারায় জন্ম-নেয়া মহান ইমামগণের বার্তা পৌঁছে যাবার ফলে জনগণের অনেকেই ইসলামের প্রকৃত রূপ ও সত্য বুঝতে থাকে এবং তারা নবীবংশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে থাকে।

বিশেষ করে বাদশাহ মামুনের অপততপরতার বিরুদ্ধে ইমাম রেজা (আ.) যখন দাঁড়িয়ে গেলেন, তখন ইরাকের অধিকাংশ জনগণ মামুনের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিল। হযরত আলী(আ.)’র  পবিত্র খান্দানের কেউ বাদশাহর বিরুদ্ধে গেলে বাদশাহি যে হারাতে হবে-এই আশঙ্কা মামুনের মধ্যে ছিল। যার ফলে মামুন একটা আপোষ-নীতির কৌশল গ্রহণ করে।

বাদশাহ মামুন ইমামকে খোরাসানে আসার আমন্ত্রণ জানায়। ইমাম প্রথমত রাজি হন নি, কিন্তু পরবর্তীকালে তাঁকে আমন্ত্রণ গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়। বাধ্য হয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি বসরা অভিমুখে যাত্রা করেন। কিন্তু পথিমধ্যে তিনি তাঁর গতিপথ পরিবর্তন করে ইরানের দিকে পাড়ি দেন। উল্লেখ্য যে, নবীবংশের মধ্যে ইমাম রেজা(আ.)ই প্রথম ইরান সফর করেন।

যাই হোক, যাত্রাপথে তিনি যেখানেই গেছেন জনগণ তাঁকে সাদরে ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করে। ইমামও নবী করিম (সা.), তাঁর আহলে বাইত ও নিষ্পাপ ইমামদের চরিত্র-বৈশিষ্ট্য এবং ইসলামের সঠিক বিধি-বিধান সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করেন। সেইসাথে তাঁর সফরের উদ্দেশ্য অর্থাৎ বাদশাহর আমন্ত্রণের কথাও তাদেরকে জানান।

চতুর বাদশাহ মামুন ইমামের আগমনে তার সকল সভাসদ এবং অন্যান্য লোকজনকে সমবেত করে বলে, হে লোকেরা ! আমি আব্বাস এবং আলীর বংশধরদের মধ্যে অনুসন্ধান করে দেখেছি , আলী বিন মূসা বিন রেজার মতো উত্তম লোক দ্বিতীয় কেউ নেই। তাই আমি চাচ্ছি যে , খেলাফতের দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেব এবং এই দায়িত্ব তাঁর ওপর ন্যস্ত করবো।

ইমাম, মামুনের রাজনৈতিক এই দুরভিসন্ধি সম্পর্কে জানতেন। তাই তিনি জবাবে বললেন, মহান আল্লাহ যদি খিলাফত তোমার জন্যে নির্ধারিত করে থাকেন, তাহলে তা অন্যকে দান করা উচিত হবে না। আর যদি তুমি আল্লাহর পক্ষ থেকে খেলাফতের অধিকারী না হয়ে থাক, তাহলে আল্লাহর খেলাফতের দায়িত্ব কারো উপর ন্যস্ত করার কোনো অধিকার তোমার নেই। ইমাম শেষ পর্যন্ত মামুনের কথায় খেলাফতের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করায় মামুন ইমামকে তার ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী হতে বাধ্য করে।

ইমাম রেজা (আ.) শেষ পর্যন্ত নিরুপায় হয়ে কিছু শর্তসাপেক্ষে তা গ্রহণ করে। শর্তগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুটি ছিল এরকম-এক, তিনি প্রশাসনিক কোনো দায়িত্ব পালন করবেন না। দূরে থেকে তিনি খেলাফতের সম্পর্ক রক্ষা করবেন।

তিনি কেন এ ধরনের শর্তারোপ করেছিলেন , তার কারণ দায়িত্ব গ্রহণকালে প্রদত্ত তাঁর মোনাজাত থেকেই সুস্পষ্ট হয়ে যায়। তিনি মুনাজাতে বলেছিলেন: হে আল্লাহ ! তুমি ভালো করেই জানো , আমি বাধ্য হয়ে এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। সুতরাং আমাকে এজন্যে পাকড়াও করো না। যেমনিভাবে তুমি ইউসূফ ও দানিয়েল ( আ ) কে পাকড়াও করো নি। হে আল্লাহ ! তোমার পক্ষ থেকে কোনো দায়িত্ব ও কর্তব্য ছাড়া আর কোনো কর্তৃত্ব হতে পারে না। আমি যেন তোমার দ্বীনকে সমুন্নত রাখতে পারি, তোমার নবীর সুন্নতকে যথার্থভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি।
captcha