বার্তা সংস্থা ইকনা: তিনি হচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ বিভাগের নেতৃস্থানীয় সিনিয়র কনস্টেবল মাহা সুকার। তার পদাঙ্ক অনুসরণের জন্য ইসলামি বিশ্বাসের অন্যান্য নারীরাও অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। বিশ্বব্যাপী পুলিশ বাহিনীর জন্য তিনি এক অনুকরণীয় উদাহরণ বলে তার ভক্তরা মনে করছেন।
সিনিয়র কনস্টেবল মাহা সুকার দক্ষিণ-পূর্ব মেলবোর্নের ডান্ডেনং’র একজন সুপরিচিত মুখ। তিনি ২০০০ সালে লেবানন থেকে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসী হন। এর এক বছর পর বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের প্রেক্ষিতে দেশটির পুলিশ বিভাগে তার যোগদান করার ইচ্ছা তুমুল বিতর্কের জন্ম দেয়।
মাহা সুকার জানান, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার পর তার প্রতি সমাজের মানুষের মনোভাবের পরির্বতন ঘটে। তাদের মনোভাব পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে শুরু করেন নতুন আরেকটি মিশন।
তিনি বলেন, ‘১১ সেপ্টেম্বরের পর সেই একই লোকেরা আমার দিকে তাকিয়ে খারাপ ভাষায় কথা বলতে শুরু করে। আমি ভাবলাম: কি তাদের এমন পরিবর্তন করে দিল? গতকাল আমি যে মানুষ ছিলাম, আজকেও তো তেমনটাই আছি। তাই আমি মানুষের দৃষ্টিকোণ পরিবর্তন করতে চেয়েছিলাম।’
এবং ২০০৪ সালে প্রথম হিজাব পরিহিত কর্মকর্তা হিসেবে তিনি দেশটিতে ইতিহাস রচনা করেন। একই বছরের নভেম্বর মাসে মাহা সুকার তার মাথায় ওপরে পবিত্র কোরআন রেখে ভিক্টোরিয়া পুলিশের কাছ থেকে শপথ নেন এবং তৎকালীন পুলিশ কমিশনার ক্রিস্টিন নিক্সনের কাছ থেকে তার ব্যাজ গ্রহণ করেন।
মাহা বলেন, ‘এটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরনীয় একটি দিন। এমনকি আমার বিবাহের দিন থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। দিনটির কথা মনে হলে আমার এখনো হাসি পায়। আমার শপথের জন্য হিজাব সমস্যার সৃষ্টি করে। আমার মাথায় হিজাব থাকলেও আমি যে তাদের (পুলিশের) একটা অংশ হতে পারি- এ কথাটি ভিক্টোরিয়া পুলিশকে বিশ্বাস করার জন্য সত্যিই আমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছিল। আমি তাদের বলেছিলাম, একমাত্র পার্থক্য হচ্ছে আমাকে হয়তো একটু আলাদা দেখাবে কিন্তু আমিতো একই রকম দায়িত্ব পালন করব।’
সুকার আরো জানান, তিনি এখনো তার হিজাব সম্পর্কে মাঝে মাঝে অনেকের অনেক প্রশ্ন পান। কিন্তু হিজাব সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারনা ভেঙ্গে দেয়ার প্রতিটি সুযোগকে তিনি হাসি মুখে বরণ করে নেন।
তিনি বলেন, ‘আমি একজন পুলিশ অফিসার, যাকে রাতের ও বিকালের শিপ্টেও কাজ করতে হয়। হিজারের মাধ্যমে আমি যদি নিপীড়িত হই, তাহলে কিভাবে আমি এটা করতে পারি? আমি এটা পরতে পছন্দ করি। আমার বাবা-মা আমাকে এটা পরার জন্য কখনো বলেনি। তবুও আমি এটা পরতে পছন্দ করি।’
সুকার সম্পর্কে ভারপ্রাপ্ত ইন্সপেক্টর ক্রিস এডওয়ার্ডস বলেন, সুকার পুলিশে আগত নতুন সদস্যদের ধর্মীয় ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের পাশাপাশি মুসলিমদের নিয়ে তাদের মনোভাবের পরিবর্তন আনতে সহায়তা করেছেন।
ভিক্টোরিয়া পুলিশ মুসলিম অ্যাসোসিয়েশনের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, গত এক দশকে ওই রাজ্যে মুসলমান পুলিশ কর্মকর্তার সংখ্যা প্রায় ১৩০ জন। তারপরেও ১৪ হাজারেরও বেশি সদস্যের এই বাহিনীতে নেতৃস্থানীয় সিনিয়র কনস্টেবল সুকারের মতো কর্মকর্তারা এখনো সংখ্যালঘু।
এটি পরিবর্তনের জন্য তিনি কিছু কাজ করছেন বলে জানান।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমি সর্বদা মানুষকে বলে থাকি যে, আমরা সম্প্রদায়ের একটি অংশ এবং সম্প্রদায়ের অংশ হওয়ার জন্য আমাদেরকে সেই সম্প্রদায়ের সাহায্য করতে হবে। একই সময়ে আমাদের সম্প্রদায় সম্পর্কে পুলিশকে আরো বেশি করে বুঝাতে সাহায্য করছি।’
iqna