IQNA

ফাতেমা যাহরার (আ.) বিবাহ কিভাবে সম্পন্ন হয়?

18:26 - August 25, 2017
9
সংবাদ: 2603692
একদিকে হযরত ফাতেমা যাহরা (আঃ)-এর অতুলনীয় ফজিলতপূর্ণ বৈশিষ্ট্য এবং অপর দিকে রাসূল (সাঃ)-এর সাথে সম্পৃক্ততা ও বংশীয় শ্রেষ্ঠতার কারণে রাসূল (সাঃ)-এর অনেক খ্যাতনামা সাহাবীগণ তাঁর সাথে বিবাহের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তারা সবাই না-সুচক জবাব পান। লক্ষণীয় হচ্ছে রাসূল (সাঃ) তাদের প্রস্তাবের জবাবে বলতেন, “ ফাতেমার (বিবাহের) বিষয়টি আল্লাহর হাতে ন্যস্ত।”

বার্তা সংস্থা ইকনা: সবচেয়ে বেশি বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে আব্দুর রহমান ইব্নে আওফের প্রস্তাব, যে ছিল বিপুল ঐশ্বর্যের মালিক। আর তৎকালীন আরবের প্রথা ছিল সব কিছু পার্থিব দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা এবং মোটা অংকের মাহ্রিয়েকে (দেন মোহর) নারীর সম্মানের মাপকাঠি এবং স্বামীর বিশেষ ব্যক্তিত্বের প্রমাণ বলে মনে করা হত। সে রাসূল (সাঃ)-এর নিকট পৌছে আরজ করল, "যদি হযরত ফাতেমা (আঃ) কে আমার বিয়ে দেন, তবে মিশরীয় দামী বস্ত্রে বোঝইকৃত একশত উঠ এবং দশ হাজার দিনার মাহ্রিয়া প্রদান করব। রাসূল (সাঃ) তার এ আপত্তিকর প্রস্তাবে রাগন্বিত হন এবং এক মুষ্ঠি নূড়ী পাথর নিয়ে তার দিকে এগিয়ে যান এবং বলেন, "তুমি ধারণা করেছ আমি অর্থ- সম্পদের লোভী এবং আমার সম্মুখে তোমার ঐশ্বর্যের দম্ভ প্রদর্শন করছ।”
হ্যাঁ , হযরত ফাতেমা যাহরা (আঃ)-এর বিবাহের প্রস্তাব তো ইসলামের মহান আদর্শসমূহকে সুনির্দিষ্ট করবে। সাথে সাথে জাহেলী যুগের প্রথাগুলোর মুলোৎপাটন এবং ইসলামী মূল্যবোধের সুপ্রতিষ্ঠা করবে। মদীনার জনগণ যখন এসব আলোচনাতে মশগুল। তখন চারিদিকে এ প্রতিধ্বনি শোনা গেল যে, রাসূল (সাঃ) তঁাঁর কন্যাকে একমাত্র আলী ইবনে আবু তালিব (আঃ)-এর সাথে বিবাহ দিবেন। আলী (আঃ)-এর কোন ধণ সম্পদ ছিল না এবং আরবের জাহেলী প্রথানুযায়ী ঐশ্বর্যের প্রাচুর্যও তাঁর ছিল না। কিন্তু তাঁর সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে ছিল ঈমান ও ইসলামী মূল্যবোধ।
যদি একটু অনুসন্ধান করা হয়  তবে দেখা যাবে যে, এ ঐতিহাসিক বিবাহ সম্পর্কিত রাসূল (সাঃ)-এর সিদ্ধান্ত ছিল ওহি নির্দেশিত। কেননা তিনি স্বয়ং বলেন, " আল্লাহর ফেরেশ্তা আমার নিকট এসে বলল: আল্লাহ আপনাকে সালাম জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে, তিনি আপনার কন্যা হযরত ফাতেমা যাহ্রা  (আঃ) কে আসমানে আলী ইব্নে আবু তালিবের সাথে বিবাহ দিয়েছেন। সুতরাং, আপনিও তাকে জমিনে (পৃথিবীতে) আলীর সাথে বিবাহ  দিন ।”
যখন আমিরুল মু’মিনীন হযরত আলী (আঃ) হযরত ফাতেমা যাহ্রা (আঃ)-এর প্রস্তাব নিয়ে আসেন, তখন লজ্জায় তাঁর চেহারা মোবারক গোলাপী বর্ণ ধারণ করেছিল। রাসূল (সাঃ) এরূপ অবস্থা দেখে মুচকি হেসে বলেন, " আমার নিকট কি কাজে এসেছ ? ” কিন্তু আলী (আঃ) রাসূল (সাঃ)-এর ফজিলতপূর্ণ গাম্ভীর্যের  কারণে নিজের আকাংখা ব্যক্ত করতে পারলেন না বরং নীরব থাকলেন। রাসূল (সাঃ) যেহেতু আলী (আঃ)-এর অন্তরের ইচ্ছা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন, সেহেতু বলেন, " ফাতেমার প্রস্তাব নিয়ে এসেছ।”  আলী (আঃ) বলেন ঃ " জী , এ উদ্দেশ্য নিয়েই এসেছি।”
রাসূল (সাঃ) বলেন, " হে আলী! তোমার পূর্বেও অনেকে ফাতেমার প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। কিন্তু যখনই আমি তাদের প্রস্তাব ফাতেমার (আঃ)-এর কাছে উপস্থাপন করেছি , সে না-সূচক জবাব দিয়েছে। এখন তোমার বিষয়টিও তাঁর কাছে তুলে ধরব।” এটা সত্য যে এ বিবাহটি হচ্ছে একটি আসমানী বিষয় এবং তা সম্পন্ন অবশ্যম্ভবী। কিন্তু বিশেষতঃ হযরত ফাতেমা যাহ্রা (আঃ)-এর অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব এবং সাধারণভাবে সহধর্মী নির্বাচনে নারীদের মতামতের গুরুত্ব প্রমাণের জন্য রাসূল (সাঃ) হযরত ফাতেমা (আঃ)-এর সাথে পরামর্শ ব্যতিরেকে কোন পদক্ষেপ নেননি। যখন রাসূল (সাঃ) আমিরূল মুমিনীন আলী (আঃ)-এর ফজিলত নিজ কন্যার নিকট বর্ণনা করে বলেন, " আমি চাই তোমাকে আল¬াহ্র সর্বোত্তম সৃষ্টির সাথে বিবাহ দিতে। এ সম্পর্কে তোমার মতামত কি ? ”  হযরত ফাতেমা যাহরা(আঃ) অত্যন্ত লজ্জিত হয়ে মাথা নত করেন এবং নীরব থাকেন তখন রাসূল (সাঃ) মাথা তুললেন এবং প্রসিদ্ধ ব্যাক্যটি যা বিবাহ সংক্রান্ত ব্যাপারে ফকীহ্গণের নিকট অত্যন্ত সুপরিচিত তা উল্লেখ করেন, " আল্লাহু আকবার! তার (ফাতেমার) নীরবতা হচ্ছে সম্মতির প্রমাণ।” অতঃপর রাসূল (সাঃ) তাদের উভয়ের বিবাহের আকদ্ পাঠ করেন।

হযরত ফাতেমা যাহরা (আঃ)-এর বিবাহের দেন মোহর
এখন আমরা দেখব যে, হযরত ফাতেমা যাহরা (আঃ)-এর বিবাহের দেন মোহর কী ছিল? নিঃসন্দেহে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির সাথে নারীকুলের শিরোমণি নবী নন্দিনী হযরত ফাতেমা যাহ্রা (আঃ)-এর বিবাহ সার্বিক বিবেচনায় দৃষ্টান্তনীয় হওয়া বাঞ্ছনীয় । সকল যুগ ও শতাব্দীতে তা হবে এক অনুপম আদর্শ । অতঃএব রাসূল (সাঃ) আলী (আঃ)-এর দিকে তাকিয়ে বললেন,"এমন কিছু কী আছে যা দ্বারা তোমার স্ত্রীর দেন মোহর প্রদান করবে ? ” আলী (আঃ) বলেন, " আমার পিতা-মাতা আপনার প্রতি উৎসর্গিত হোক। আপনি আমার জীবন-যাপন সম্পর্কে ভালভাবেই অবগত আছেন। আমার নিকট একটি তরবারী, একটি ঢাল ও একটি উট ছাড়া আর কিছুই নেই।”
রাসূল (সাঃ) বলেন, " ঠিক আছে, ইসলামের শত্রট্টদের সাথে যুদ্ধের সময় তোমার তরবারী প্রয়োজন হবে। তাছাড়া উঠটি দিয়ে খেজুর বাগানে পানি দিতে এবং সফরের সময়ও তোমার উঠের প্রয়োজন হবে। অতএব, অবশিষ্ট থাকে শুধুমাত্র ঢালটি, আর তা দিয়েই তোমার স্ত্রীর দেন মোহর প্রদান করবে। আমি আমার কন্যা ফাতেমাকে কেবলমাত্র উক্ত ঢালের বিনিময়ে তোমার সাথে বিবাহ দিলাম।”
অবশ্য ইতিহাসে এ ঢালটির সর্বোচ্চ যে মূল্যটি উল্লেখ করেছে তা হচ্ছে পাঁচ শত দিরহাম। অপর দিকে হাদীসে উল্লে¬খ আছে যে, হযরত ফাতেমা যাহ্রা (আঃ) তাঁর পিতার নিকট অনুরোধ জানান যে স্বীয় দেন মোহরকে কিয়ামতের দিন উম্মতের গুনাহকারীদের সাফায়াতের জন্য নির্ধারণ করা হোক। তাঁর এ আবেদন কবুল করা হয় এবং হযরত জীব্রাঈল (আঃ) আসমান থেকে অবতীর্ণ হয়ে রাসূল (সাঃ) কে এ সুসংবাদ প্রদান করেন।
হ্যাঁ, এভাবে ভ্রান্ত রীতি-পদ্ধতির অবসান  ঘটিয়ে তদস্থলে প্রকৃত সঠিক রীতি-পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হচ্ছে ঈমানদার নর-নারীদের রীতিনীতি। আর এমনই ছিল মানবজাতীর প্রকৃত নেতাদের জীবন পদ্ধতি।
প্রকাশিত: 9
পর্যালোচনা করা হচ্ছে: 0
প্রকাশযোগ্য নয়: 0
karamatullah
3
1
আলহামদুলিল্লাহ সমস্ত প্রশংসা আল্লারহ জন্য যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করছেন।
সরাসুল স: মা খদিজাকে কত দেরহাম দিলেন?
উত্তরসমূহ
রফিকুল ইসলাম
কোন কোন রেওয়ায়েত অনুযায়ী ২০টা উট এবং অন্য রেওয়ায়েত অনুযায়ী ৭ মিছকাল সোনা যা ৫০০ দিরহামের সমপরিমান ছিল
আজ্ঞাতনামা
2
0
আলহামদুলিল্লাহ্‌
তুহিন
0
2
সাহাবীদের নামের সাথে (আঃ) বসে না। নবিদের নামের সাথে আঃ বসে। সাহাবীদের নামের সাথে (রাঃ) বসে। আপনারা এরকম ভূল করে ছেন অনেক জায়গায়।
উত্তরসমূহ
শাহিন
ভাই এটা ভুল নয়। নবীর আহলে বায়েতের সাথে (আ.) অথবা (সা. আ.) লেখা মুস্তাহাব।
আপনার কথা অনুযায়ী, (আ.) শুধুমাত্র নবীদের জন্য। একটু চিন্তা করেন অন্যদের ক্ষেত্রে (নবী ও রাসূলগণ ব্যতীত) কি কোথাও (আ.) ব্যবহার হয়েছে কি না?
চিন্তা করার পর যদি খুজে না পান তাহলে আপনার ভুল ভাঙ্গিয়ে দেবো যে, নবী ও রাসূলগণ ব্যতীত (আ.) কাদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়।
ইকবাল
ভাই আপনি কি (আ:) এবং (রা:)-এর অর্থ জানেন।
যদি জেনে থাকেন, তাহলে আপনার প্রশ্নের উত্তর আপনার কাছেই আছে।
আরেকটি বিষয়: পবিত্র কুরআন হযরত লোকমান এবং হযরত মারিয়াম - এর (আমি কোন সেফাত লিখিনি যাতে আপনার উত্তর দিতে সুবিধা হয়।) নাম উল্লেখ রয়েছ। এই দুই পবিত্র মানবের সাথে আপনি কি ধরনের সেফাত লিখতে চান, একটু দয়া করে জানাবেন।

আশকরি আপনার ভুলটি আপনি বুঝতে পেরেছেন।
রায়হান রহমান
সমস্ত নবী রাসুলের পরিবারের মানুষদের নামের সাথে (আঃ) লাগানো হয়।
যেমন হযরত ঈসা (আঃ) এর মাতা হযরত মরিয়ম (আঃ)।
হযরত মরিয়ম (আঃ) তো কোনো নবী বা ফেরেস্তা ছিলেন না তাহলে তাঁর নামের সাথে (আঃ) ব্যবহৃত হয় কিভাবে??
তাহলে খোদার হাবীব, সারা কুল কায়েনাত সৃষ্টির কারন, সকল নবী রাসুলের সর্দার হযরত মাওলা মোহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) এর পরিবারের বেলায় কেনো (রাঃ)??

সয়ং নবী কারীম (সাঃ) যাদের ঘরের কাছে গিয়ে সালাম জানাতেন, সয়ং নবী কারীম (সাঃ) যাদের দেখলে বসা থেকে উঠে দাড়াতেন, সমস্ত ফেরেস্তাকুল যাদের সম্মান দেয়, সয়ং আল্লাহ যাদের পবিত্রতা সমন্ধে পবিত্র কোরআন শরিফে আয়াত নাজিল করেছেন, যারা জান্নাতের সর্দার, যিনি জান্নাতের সর্দারনী, যিনি জান্নাত ও জাহান্নাম বন্টনকারী তাঁদের নামে কেনো (রাঃ)?? তাঁদের নামে (আঃ) লাগালে কী সমস্যা।।

নিয়ম হলো সমস্ত সাহাবীদের নামে (রাঃ) লাগানো এবং নবী কারীম (সাঃ) এর পবিত্র আহলে বায়াতের নামে (আঃ) লাগানো।।

এইরকম হবে যেঃ

হযরত মাওলা মোহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ)
মোছাঃ খাদিজা খাতুন
0
1
ইসলামলী আদর্শ নারীদের জীবন অনুসারে জীবনের পথ চলা একান্ত প্রয়োজনীয়। দুদিনের পৃথিবীতে কোটি টাকার সম্পদ বা দেন মোহর কিছু না। আমল এবং ঈমানের সহিত চলে যাওয়া উত্তম।
Amad uddin
0
1
জানার জন্য প্রশ্ন আমার,নবী সাঃ হজরত ফাতেমা রাঃ এর বিয়েতে মেয়ের সাথে কি কি দিয়েছিলেন?
এবং হজরত আলী রাঃ মোহর কত দিয়েছিলেন?
আমিও এই সুন্নাতের উপর আমল করতে ইচ্ছুক।
captcha