IQNA

ফিলিস্তিনে যে পাশবিকতা চলছে ৭০ বছর ধরে

22:52 - May 15, 2018
সংবাদ: 2605760
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিন জবরদখল করে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকীতে বায়তুল মোকাদ্দাসে পাতানো হয় মার্কিন দূতাবাস খোলার উৎসব। ওদিকে মাতৃভূমিতে ফেরার ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ের আন্দোলনে রত ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বরতা চালাতে গাজা সীমান্তে মোতায়েন করা হয় হাজার হাজার ইহুদিবাদী সেনা।

ফিলিস্তিনে যে পাশবিকতা চলছে ৭০ বছর ধরে

 
বার্তা সংস্থা ইকনা: এসব সেনা হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর। সর্বশেষ পাওয়া হিসাব মতে, সোমবারের পাশবিকতায় শহীদ হয়েছেন ৫৯ ফিলিস্তিনি; আহত হয়েছেন আরো ২,৭৭১ জন। যুদ্ধের সময় ছাড়া একদিনে ইসরাইলি হামলায় এত বেশি ফিলিস্তিনির হতাহত হওয়ার ঘটনা বিরল।

মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষকরা বলছেন, পশ্চিমাদের পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যে অপরাধযজ্ঞ চালাচ্ছে তার যেন কোনো শেষ নেই বরং দিন দিন তার মাত্রা তীব্রতর হচ্ছে।

ফিলিস্তিনিরা প্রতি বছর ১৫ মে মাতৃভূমি হারানোর বার্ষিকীতে ‘নাকাবা’ বা বিপর্যয় দিবস পালন করেন। ইহুদিবাদী ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৮ সালের এই দিনে অন্তত ৮ লাখ ফিলিস্তিনিকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত সেই ফিলিস্তিনি শরণার্থীর সংখ্যা ৬০ লাখ ছাড়িয়েছে।

ফিলিস্তিনে যে পাশবিকতা চলছে ৭০ বছর ধরে
নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে ইহুদিবাদী সেনারা

নাকাবা দিবসে ফিলিস্তিনিরা যে শুধু তাদের মাতৃভূমি হারিয়েছেন তা নয় সেইসঙ্গে গত ৭০ বছরে তারা যত রকম মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছেন তার সবকিছুর সূত্রপাত হয়েছিল এই দিনে। আর ফিলিস্তিনি জাতিকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মানবতার শত্রু ইসরাইল নামক রাষ্ট্র।

৬৭৫টিরও বেশি ফিলিস্তিনি গ্রাম ও শহর ধ্বংস করে ইহুদি উপশহর নির্মাণ, ফিলিস্তিনিদেরকে তাদের আবাসভূমি থেকে বিতাড়ন, ফিলিস্তিনের জাতীয় পরিচিতিগুলো মুছে ফেলা এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের আরবি নামগুলো বাতিল করে হিব্রু ভাষায় নতুন নামকরণ করা ছিল ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর ইহুদিবাদীদের কিছু ন্যক্কারজনক কাজ।

নাকাবা দিবসে ফিলিস্তিনিরা স্মরণ করেন তাদের হাজার হাজার স্বদেশি নারী, পুরুষ ও শিশুকে যারা গত ৭০ বছরে দখলদার সেনাদের পাশবিক হামলায় শাহাদাতবরণ করেছেন।

ফিলিস্তিনে যে পাশবিকতা চলছে ৭০ বছর ধরে
গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়ছেন ফিলিস্তিনি নারী

নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইহুদিবাদীরা যেসব ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছে সেগুলোর মধ্যে ‘কুফার কাসেম’ ও ‘দেইর ইয়াসিনের’ নাম উল্লেখযোগ্য। ১৯৫৬ সালের ২৯ অক্টোবর জর্দান নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত কুফার কাসেম গ্রামে হানা দিয়ে ইসরাইলি সেনারা ৬ নারী ও ২৩ শিশুসহ ৪৮ ফিলিস্তিনিকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এর আগে ১৯৪৮ সালের ৯ এপ্রিল ইহুদিবাদীদের দু’টি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বায়তুল মুকাদ্দাসের নিকটবর্তী দেইর ইয়াসিন গ্রামে গণহত্যা চালায়। এতে নারী ও শিশুসহ অন্তত ৩৬০ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি নির্মমভাবে নিহত হন।

এ ধরনের গণহত্যা যে গত ৭০ বছর ধরে অব্যাহতভাবে চলে এসেছে তার প্রমাণ গতকালের (সোমবার) গাজা গণহত্যা।

চলতি বছরের নাকাবা দিবসে ফিলিস্তিনিদের ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে তেল আবিব থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের ঘটনা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে প্রমাণ করেছেন, ফিলিস্তিনি জাতি কোনো ধরনের আলোচনা বা সংলাপ চালিয়ে তাদের হারানো অধিকার ফিরে পাবে না বরং একমাত্র সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলনই হচ্ছে তাদের মাতৃভূমি পুনরুদ্ধারের একমাত্র পথ। পার্সটুডে

captcha