বার্তা সংস্থা ইকনা: ইরানের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতার বিষয়টি মার্কিন সিনেটে অনুমোদন লাভের পর প্রেসিডেন্ট ওবামা ওই বিবৃতিতে মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টির জন্য ইরানকে দায়ী করে বলেছেন, পরমাণু চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে মার্কিন নেতৃত্বে বিশ্বকে আরো বেশি নিরাপদ করে তোলার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন নেতৃত্বে বিশ্বকে আরো বেশি নিরাপদ করে তোলার জন্য প্রেসিডেন্ট ওবামার দাবি রাজনৈতিক হাস্যরস ও কৌতুক ছাড়া আর কিছু নয়। ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলার পর আমেরিকা ইরাক ও আফগানিস্তান দখল করে। কিন্তু প্রচুর অর্থ ব্যয় করে বিশাল সেনা সমাবেশ ঘটালেও আমেরিকা বিশ্বকে নিরাপদ করতে পারেনি। আমেরিকা যদি সত্যিই বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে চায় তাহলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল কায়দার ব্যাপারে দেশটি কেন দ্বিমুখী নীতি গ্রহণ করেছে? নিজ রাজনৈতিক লক্ষ্য হাসিলের জন্য আমেরিকা কেন এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর পেছনে বিপুল অর্থ ব্যয় করছে এবং বর্তমানে সারা বিশ্বের ত্রাস উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাস গোষ্ঠী আইএসআইএল বা দায়েশকে সমর্থন যোগাচ্ছে সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। দশ বছর ধরে ইরাকে মার্কিন জবর দখলের ফল হচ্ছে আইএসআইএল। আন্তর্জাতিক সমাজ ও বিশ্বের জাতিগুলো ইউরোপে বর্তমান শরণার্থী সংকটের জন্য আমেরিকার যুদ্ধকামী নীতিকে দায়ী করেছে। তাদের মতে মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তাহীনতা ও সন্ত্রাসবাদ বিস্তারের জন্য ওবামাকে অবশ্যই জবাবদিহিতা করতে হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আমেরিকা সবসময়ই তাদের অপকর্ম ঢাকার জন্য কোনো না কোনো কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়। বিশ্ববাসী এটা ভালো করেই জানে যে, মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টির জন্য ইহুদিবাদী ইসরাইলের যুদ্ধকামী নীতি দায়ী যার পেছনে আমেরিকার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। এসব অপরাধযজ্ঞে আমেরিকাও সমানভাবে অংশীদার। আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য নীতি, এ অঞ্চলের আগ্রাসী দেশগুলোর কাছে অস্ত্র বিক্রি, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনের মজলুম জনগণের বিরুদ্ধে আগ্রাসী শক্তির প্রতি সমর্থন এসবই এ অঞ্চলে আমেরিকার নিরাপত্তাহীনতা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির বড় প্রমাণ।
এ সত্ত্বেও আমেরিকা ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিকে তার অশুভ লক্ষ্য অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করছে। প্রেসিডেন্ট ওবামা চুক্তির বিষয়ে অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হলেও আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এর নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। এ জন্য প্রেসিডেন্ট ওবামা আমেরিকায় ইহুদিবাদী লবিকে এটা বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে, মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টির জন্য ইরানকে দায়ী করার ব্যাপারে হোয়াইট হাউজ ও ইসরাইলের দৃষ্টিভঙ্গিতে কোনো পার্থক্য নেই।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রেসিডেন্ট ওবামা আসলে বাস্তবতাকে ধামাচাপা দিয়ে ইরানের সঙ্গে পরমাণু আলোচনার ফলাফলকে নিজের মতো করে ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন। বাস্তবতা হচ্ছে পরমাণু আলোচনার মাধ্যমে আমেরিকা স্বেচ্ছাচারী মনোভাব থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, আমেরিকার প্রধান সমস্যা হচ্ছে তারা ইহুদিবাদী লবির কব্জায় রয়েছে আর এ কারণে তারা অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছে। সূত্র: আইআরআইবি
3361351