বার্তা সংস্থা ইকনা: মিনা ট্রাজেডির ব্যাপারে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের কুরআনিক গবেষক ও অধ্যাপক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন মুহসেন ক্বারায়াতি পক্ষ থেকে ‘কুরআনের শিক্ষকের মনের বেদনা’ শিরোনামে এক প্রবন্ধ প্রকাশ হয়েছে।
তার এ প্রবন্ধে এসেছে: আমাদের দেশের মুসলমানদের জন্য মিনার বিয়োগান্তক দুর্ঘটনা অতি দুঃখজনক। একজন কুরআনের শিক্ষক হিসেবে এ ব্যাপারের আপনাদের সম্মুখে বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করাতে চাই।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রহিম
১। প্রথম যে ঘরটি (আল্লাহর এবাদতের জন্য) স্থাপন করা হয়েছে সেটি পবিত্র মক্কা নগরীতে অবস্থিত। মুসলমানদের জন্য এ ঘরটি বরকত (কল্যাণকর) ও আশীর্বাদের উৎস:
إِنَّ أَوَّلَ بَیْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذی بِبَکَّةَ مُبارَکاً وَ هُدىً لِلْعالَمینَ) آلعمران/96(
নিশ্চয় সর্ব প্রথম গৃহ যা মানুষের (ইবাদতের) জন্য নির্মাণ করা হয়েছে তা এ মক্কাতে অবস্থিত, এটা হল (কল্যাণকর ও) প্রাচুর্যময় এবং বিশ্ববাসীদের জন্য পথনির্দেশক। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৯৬)
২। মক্কা আল্লাহর নিরাপদ হারাম: حَرَمًا آمِنًا (قصص/57)
নিরাপদ ‘হারাম’ (সম্মানিত স্থান) [সূরা কাসাস, আয়ত ৫৭]
৩। মক্কাকে নিরাপদ নগরী হওয়ার জন্য মহান আল্লাহর দরবারে হযরত ইব্রাহীম (আ.) দোয়া করেছেন:
رَبِّ اجْعَلْ هَذَا الْبَلَدَ آمِناً) ابراهیم/35(
হে আমার প্রতিপালক! এই নগরকে নিরাপদ স্থান করেন। (ইবরাহীম, আয়াত ৩৫)
৪। মক্কাকে নিরাপদ নগরী হিসেবে মহান আল্লাহ শপথ করেছেন:
وَ هذَا الْبَلَدِ الْأَمینِ (تین/3(
আর শপথ এ নিরাপদ নগরীর (মক্কা’র) [তীন, আয়াত ৩]
৫। ইব্রাহীম (আ.) নিজ দায়িত্বে সকলকে মক্কা যিয়ারত করিয়েছেন:
وَ أَذِّنْ فِی النَّاسِ بِالْحَجِّ یَأْتُوکَ رِجالاً وَ عَلى کُلِّ ضامِرٍ یَأْتینَ مِنْ کُلِّ فَجٍّ عَمیق (حج/27(
এবং মানুষের মধ্যে হজ্জের ঘোষণা করে দাও, যেন তারা তোমার নিকট পায়ে হেটে এবং সব রকম শীর্ণকায় বাহনে করে দূর দূরান্ত হতে (গভীর উপত্যকা অতিক্রম করে ) আসে। (হাজ্জ, আয়াত ২৭)
৬। মক্কা পবিত্র রাখার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন হযরত ইব্রাহীম ও ইসমাইল (আ.):
«طَهِّرا بَیْتِیَ لِلطَّائِفینَ وَ الْعاکِفینَ وَ الرُّکَّعِ السُّجُودِ» (بقره/125(
ইবরাহীম ও ইসমাঈলের নিকট হতে প্রতিশ্রুতি নিলাম যে, ‘আমার (এ) গৃহকে তাওয়াফ, এতেকাফ, রুকূ এবং সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র করে রাখবে। (বাকারা, আয়াত ১২৫)
৭। পবিত্র মক্কায় হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ও আমিরুল মুমিনীন (আ.) জন্ম গ্রহণ করেছেন।
৮। পবিত্র মক্কা নগরী মুসলমানদের ক্বিবলা।
৯। পবিত্র মক্কা নগরীতে হযরত জিবরাঈল (আ.) অবতরণ করতেন।
১০। পবিত্র মক্কা নগরীতে ইসমাইল (আ.)কে কোরবানি করার জন্য নেওয়া হয়েছে।
১১। পবিত্র মক্কা নগরীতে হযরত বিলাল (রা.)এর উপর নির্যাতন করা হয়েছে।
বর্তমানে মক্কা ও কাবা কার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে?
হযরত আলী (আ.) বলেছেন:
وَ اللَّهَ اللَّهَ فِی بَیْتِ رَبِّکُمْ لَا تُخَلُّوهُ مَا بَقِیتُمْ فَإِنَّهُ إِنْ تُرِکَ لَمْ تُنَاظَرُوا (نهجالبلاغه، نامه 47(
মক্কা ও আল্লাহ’র গৃহের প্রতি খেয়াল রেখ। যতক্ষণ পর্যন্ত জীবিত থাকবে, ততক্ষণ এটাকে খালি রেখ না এবং এটা ছেড়ে চলে যেয় না। (নাহজুল বালাগা, ৪৭ নং চিঠি)
কিন্তু বর্তমানে মক্কা ও কাবা আমেরিকার দালালদের হাতে রয়েছে। এর থেকে বড় কোন সমস্যা বর্তমানে নেই।
কোন কোন মুসলমানদের উদ্দেশ্য পবিত্র কুরআনে ব্যক্ত হয়েছে:
هُمْ لِلْکُفْرِ یَوْمَئِذٍ أَقْرَبُ مِنْهُمْ لِلایمان (آل عمران/167)
তারা সেদিন বিশ্বাস অপেক্ষা অবিশ্বাসের অধিক নিকটতর ছিল। (আলে ইমরান, আয়াত ১৬৭)
বর্তমানে আলে সৌদির সাথে মুসলমানদের তুলনায় আমেরিকা ও ইসরাইলের সম্পর্ক অধিক ঘনিষ্ঠ।
এ পর্যন্ত কোন ওয়াহাবি একজন ইসরাইলির মুখে চড় মারেনি
এ পর্যন্ত কোন ওয়াহাবি একজন ইসরাইলের মুখে চড় মারেনি। তবে এই ওয়াহাবিরাই আমাদের (শিয়াদের) কাফের হিসেবে গণ্য করেন। শিয়াদের হত্যা করা ওয়াজিব মনে না করলেও জায়েজ হিসেবে জানে। যদি আমরা মুশরিক অথবা কাফের হয়, তাহলে কি শিয়া ব্যতীত অন্য কেও কাফের বা মুশরিক নেই? তোমরা (ওয়াহাবিরা) যদি সত্যিকারে কাফেরদের প্রতিবাদ কর তাহলে একজন ইসরাইলিকে চর মেরে দেখাও।
আলে সৌদিকে আমাদের বলা উচিত: ইসরায়েলি ইসলাম!
ইসরাইলিরা কি মু’মিন?! ইমাম যদি কাউকে উদ্দেশ্য করে বলেন: আমেরিকান ইসলাম। তাহলে আমরাও আলে সৌদিকে বলব: ইসরায়েলি ইসলাম! অর্থাৎ এমন ইসলাম যার জন্য ইসরাইলিরা সন্তুষ্টি রয়েছে। যদি এখন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়, তাহলে সে বলবে: লেবানন, সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন ও বাহরাইনের মুসলমানদের হত্যা করার জন্য আমি আমার সকল অর্থ ব্যয় করব। আর এদিকে অলে সৌদি অতি সহজেই তাদেরকে (মুসলমানদের) মাটির সাথে মিলিয়ে দিয়েছে।
আলে সৌদি মসজিদুল হারাম পরিচালনা করতে অক্ষম। কারণ পবিত্র কুরআন বলা হয়েছে:
انْ أَوْلِیَاؤُهُ إِلَّا الْمُتَّقُونَ»(انفال/34)
তাকওয়া সম্পন্ন ব্যক্তি ব্যতীত ক্বাবা ঘরের তত্ত্বাবধায়নের দায়িত্ব কারো নেই (আনফাল, আয়াত ৩৪)
নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ এর প্রতিশোধ নেবেন
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে: “যে ব্যক্তি কোরবানি ঈদের দিনে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করবেন, নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। তারা সকলেই আল্লাহ মেহমান”। এহরামরত অবস্থায় ঈদের দিনে রামিয়ে জামারাতের জন্য মিনা’য় যাচ্ছিলেন। আলে সৌদির অযোগ্যতা এবং অব্যবস্থাপনার ফলে অনেক হাজি আহত ও নিহত হয়েছেন এবং অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন। নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ এর প্রতিশোধ নেবেন। যেখানেই নিরপরাধ লোকের রক্ষ ঝরেছে, সেখানেই মহান আল্লাহ প্রতিশোধ নিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহর যে সকল নাম এসেছে তারমধ্যে একটি নাম হচ্ছে «ذو انتقام» (জু এন্তেকাম)। আশাকরছি প্রিয় মজলুমদের প্রতি জুলুম করার জন্য আলে সৌদি ধ্বংস হবে।
মিনায় দুর্ঘটনায় জীবিত থাকা হাজিরা তাবুতে ফিরে এসেছেন কিন্তু যয়নাব (সা. আ.)এর কোন খিমা ছিল না!
জনগণ হযরত যয়নাব (সা.)এর কথা স্মরণ করছেন। আশুরারা বিকালে কোন খিমা (তাঁবু) ছিলনা। মিনায় দুর্ঘটনায় জীবিত থাকা হাজিরা তাবুতে ফিরে এসে ক্রন্দন করেছেন। কিন্তু আশুরার দিনে ইমাম হুসাইন (আ.)কে হত্যা করা হয়েছে এবং সকল খিমায় আগুন লাগানো হয়েছে ...
وَ سَیعْلَمُ الَّذِینَ ظَلَمُوا أَی مُنْقَلَبٍ ینْقَلِبُونَ» (شعراء/227(
অনতিবিলম্বে নিপীড়কগণ অবগত হবে যে, কোন্ প্রত্যাবর্তনের স্থানে তারা প্রত্যাবর্তন করবে। (শুআরা, আয়াত ২২৭)
3377718