IQNA

আইভরি কোস্টে ইসলাম ও মুসলমান

9:45 - October 28, 2022
সংবাদ: 3472720
তেহরান (ইকনা): পশ্চিম আফ্রিকার অন্যতম দেশ আইভরি কোস্ট। আরবিতে দেশটির নাম ‘সাহিলুল আজ’। যার অর্থ হলো, হস্তীদন্তের উপকূল। দেশটির পূর্বে ঘানা, পশ্চিমে গিনি ও লাইবেরিয়া, উত্তরে মালি ও বুরকিনা ফাসো।
আর দক্ষিণে গিনি উপসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগর অবস্থিত। রাজধানীর নাম ইয়ামুসুক্রো। অর্থনৈতিক কেন্দ্র ভূমি আবিদজান শহর। কৃষি আয়ের প্রধান উৎস। ১৪টি জেলায় বিভক্ত দেশটির আয়তন তিন লাখ ২২ হাজার ৪৬২ কিমি। সরকারি ভাষা ফ্রেঞ্চ। সিআইএর সর্বশেষ তথ্যমতে, মোট জনসংখ্যা ২৮ কোটি ৭১ লাখ ৩৪ হাজার ২৩ জন। এর মধ্যে ৪২.৯ শতাংশ মুসলিম। এ ছাড়া প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে ৭২.৭ শতাংশ মুসলিম। মালিকি মাজহাব অনুসরণ করেন তারা। কাদেরিয়া ছাড়াও চার ধরনের সুফি তরিকার অনুকরণে বিভিন্ন আয়োজন দেখা যায় তাদের মধ্যে।
আইভরি কোস্টের নামকরণের ব্যাপারে বলা হয়, প্রাচীনকালে আফ্রিকার ব্যবসায়ীরা হাতির দাঁত একত্র করে উপকূলে এসে বিক্রি করত। তা থেকেই ‘আইভরি কোস্ট’ বা ‘হাতির দাঁতের উপকূল’ নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৬০ সালের ৭ আগস্ট দেশটি ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। তবে ফ্রান্সের সঙ্গে দেশটি এখনো বিভিন্ন চুক্তিতে আবদ্ধ।
 
আইভরি কোস্টে নানাভাবে ইসলামের আগমন ঘটে। মুসলিম ব্যবসায়ীদের পদচারণ ছিল আফ্রিকার এ অঞ্চলে। ব্যবসা-বাণিজ্যে মুসলিম বণিকদের সদাচার ও সততা দেখে মুগ্ধ হয় স্থানীয়রা। মুসলিমদের মধ্যে কোরআন ও হাদিসের পাঠ ও কর্মপন্থায় এর অনুসরণ তাদের অন্তরে দাগ কাটে। ফলে তারা ধীরে ধীরে আগ্রহী হয়ে ওঠে ইসলামের প্রতি। পৌত্তলিক গোত্রগুলোতে মুসলিমদের আদর্শ ও শিক্ষার প্রভাব বাড়তে থাকে।
 
বিশেষ একটি কারণে আইভরি কোস্টে ইসলামের ব্যাপক প্রচার-প্রসার হয়। ১০২৫ খ্রিস্টাব্দে আইভরি কোস্টের প্রসিদ্ধ পরিবার মান্ডিংকা (Mandinka) গোত্রের নেতারা ইসলাম গ্রহণ করেন। আইভরি কোস্টে ইসলাম প্রচারে তাঁদের ব্যাপক ভূমিকা আছে। মান্ডিংকা গোত্রটি পশ্চিম আফ্রিকার বৃহৎ ও প্রাচীন একটি পরিবার। পশ্চিম ও দক্ষিণে আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলে এবং নাইজার নদীর আশপাশসহ পশ্চিম ও উত্তরের মরুভূমিতে ছড়িয়ে আছে গোত্রটির সদস্যরা। বর্তমানের সুবিশাল আফ্রিকার দেশগুলোতে এই গোত্রটির বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা ছড়ানো।
 
১০৫০ সালে আইভরি কোস্টের উত্তরাঞ্চলে মান্ডিংকা বংশের মুসলিম গোত্রগুলো ঘানা সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা শুরু করে। দীর্ঘ ২০ বছর পর ১০৭৬ সালে দেশটির দক্ষিণের মুরাবিত নেতা আবু বকর বিন উমরের নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জন করে। এর পর থেকে সুদীর্ঘকাল ধরে আফ্রিকার এই অঞ্চলটি মুসলিম শাসনাধীন ছিল। সাম্রাজ্যের সব ক্ষেত্রে  ইসলামী আইন ও নীতিমালার বাস্তবায়ন ছিল।
 
অতঃপর ১৫ শতাব্দীর শেষলগ্নে পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলে ইউরোপের অত্যাধুনিক নৌবহরের যাত্রা শুরু হয়। ১৪৯২ সালে আমেরিকা আবিষ্কারের পর উপকূলবর্তী এই অঞ্চল থেকে ব্যাপকভাবে নারী, শিশু, তরুণ-তরুণীদের লুণ্ঠন করা শুরু হয়। অত্যন্ত ঘৃণ্য পন্থায় স্থানীয়দের বন্দি করে আমেরিকায় তাদের দাস-দাসী হিসেবে বিক্রি করা হয়। ১৮৪৮ সালে দাস প্রথার বিলুপ্তি পর্যন্ত ‘মানব লুণ্ঠন ও পাচার’ অব্যাহত থাকে। হত্যা, লুণ্ঠন ও লুটতরাজের কারণে মুসলিম শাসক ও জনগণের মধ্যে চরম অস্থিরতা বিরাজ করে। ১৮৬১ সালে মান্ডিংকার লোকদের সাহায্যে আফ্রিকার বিখ্যাত বীর শাসক সামোরি তুরে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করে একটি সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। এ সময় সামোরির নেতৃত্বে আইভরি কোস্টের মুসলিমরা দীর্ঘ সংগ্রাম করে। কিন্তু ১৮৯৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ফ্রান্স সেনাবাহিনীর হাতে সামোরি বন্দি হন এবং ১৯০০ সালে মৃত্যুবরণ করেন। অতঃপর ফ্রান্সের শাসনাধীন হয় আইভরি কোস্টসহ আফ্রিকার বিশাল অঞ্চল। আর অস্থিরতা ও যুদ্ধ-বিগ্রহে ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতির পরিসমাপ্তি ঘটে। বিশৃঙ্খলা ও স্থবিরতা আজও সেখানে বিরাজ করছে।
ট্যাগ্সসমূহ: ইকনা ، আফ্রিকার
captcha