
ঝন্টু বলেন, মুম্বাইয়ে যে সিনেমা হয়, সেখানে সংলাপে ৮০ ভাগ উর্দু ভাষা ব্যবহার করা হয়।
“ওগুলো পিওর হিন্দি ছবি না, উর্দু মিশ্রিত উর্দুই ম্যাক্সিমাম। তো আমাদের দেশে উর্দু ছবি চলুক, এটা বাঙালিদের কাম্য হতে পারে না।” ]]
কিছু প্রাসঙ্গিক কথা :
মি : ঝন্টুর কাছে প্রশ্ন : তাহলে পিওর হিন্দি ছবি হলে তখন তা বাংলাদেশে চলতে পারে কি ? আসলে পিওর হিন্দি , পিওর উর্দু , উর্দু মিশ্রিত বা উর্দু প্রাধান্যের ( উর্দু ম্যাক্সিমাম ) ছবির চাইতে আরো অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যে ভারতীয় সিনেমা পৌত্তলিক হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় সংস্কৃতি, ভাবধারা ও বিশ্বাস এবং সততা ,চরিত্র ও সতীত্ব হননকারী অসভ্য বেলেল্লাপনা ও ছিনালতা ছড়িয়ে দিচ্ছে যা প্রতিরোধ ও বাধা দান করা উচিত। আর এ সব নোংরা জিনিস হিন্দি উর্দু কেন এমনকি আরবী ভাষার চলচ্চিত্র ও সিনেমার মাধ্যমেও যদি প্রসার ও প্রচলন ঘটানো হয় সেই আরবী চলচ্চিত্র ও সিনেমাকেও রুখতে হবে এবং প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া যাবে না আরবী ভাষার দোহাই দিয়ে। তাই এ সব বাজে নোংরা জিনিস যে কোন ভাষার চলচ্চিত্র ও সিনেমার মাধ্যমে প্রসার ও প্রচলন ঘটানোর চেষ্টা করা হলে তা রোখা উচিত । ভাষা ও সিনেমা হচ্ছে মাধ্যম । তা দিয়ে যেমন ভালো শিক্ষা , জিনিস , আদর্শ , চারিত্রিক নীতিমালা ও নীতি বোধের প্রসার ঘটানো যায় ঠিক তেমনি এই ভাষা ও সিনেমার মাধ্যমেই আবার নোংরা , অশালীন অশ্লীল জিনিস, অসভ্যতা , অশিক্ষা - কুশিক্ষা , ধর্মহীনতা , ধর্মবিরোধিতা ও অনৈতিকতার প্রসার ঘটানো যায় । মি : ঝন্টু বোধ হয় এ সব বিষয় ও জিনিস নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে শুধু হিন্দি উর্দুর খিস্তি করেছেন । অশ্লীল অশালীন , চরিত্র হননকারী এবং অশিক্ষা কুশিক্ষা ও অনৈতিকতার প্রচলন ও প্রসার দানকারী চলচ্চিত্র - তা যে ভাষায় ই হোক না কেন - সম্পূর্ণ পরিত্যাজ্য ও বর্জনীয় । এ ক্ষেত্রে হিন্দি ,উর্দু বাংলা, আরবী , ফার্সী, ইংরেজি চীনা ইত্যাদির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। মি : ঝন্টু কি এ ব্যাপারে মাথা ঘামিয়েছেন না কি তার কাছে স্রেফ ভাষার বিষয়টাই প্রাধান্য লাভ করেছে ?
উর্দুর সাথেই কেবল বাংগালীদের দ্বন্দ্ব এবং শব্দ সম্ভারে পিওর হিন্দির সাথে বাংলার অনেক মিল আছে বলেই বলিউডি সিনেমাগুলো অন্ততঃ পিওর হিন্দি ভাষায় হলে সেগুলো বাংলাদেশে প্রদর্শনের ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা নেই - এ ধরনের কিছু একটা ভাবছেন নাকি মি : ঝন্টু ?!
আর বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের দৃষ্টিতে বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র প্রদর্শনে আপত্তি ও বাধা দান শুধু উর্দুর সাথে কেন যে কোন বিদেশী ভাষার ক্ষেত্রেই সমভাবে প্রযোজ্য ও কাম্য হওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয় নয় কি ? শুধু উর্দু ছবি নয় বাংলা ব্যতীত যে কোনো ভাষার ছবি দেশে চলুক , এটা সত্যিকার বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদীদের যে কাম্য হতে পারে না তা মি : ঝন্টুর বলা দরকার ছিল ! কিন্তু তিনি শুধু উর্দুর বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন !! যেন সিনেমার অন্তর্নিহিত বিষয়বস্তু , থিম , শৈল্পিক মান , মূল শিক্ষা ও উদ্দেশ্য , অশ্লীলতা মুক্ত হওয়া এবং ইসলাম ধর্ম , সংস্কৃতি , নীতিনৈতিকতা ও জাতীয় স্বার্থ বিরোধী না হওয়া ইত্যাদি মুখ্য নয় বরং মি : ঝন্টুর কাছে মুখ্য বিচার্য্য বিষয় হচ্ছে শুধু ভাষা এবং উর্দু - বাংলা ভাষা দ্বন্দ্ব ও হ্যাচাল - ক্যাচাল ! তাই শিক্ষামূলক, মার্জিত শালীন এবং ভালো থিম , বিষয়বস্তু ও শৈল্পিক মানের ভারতীয় উর্দু ছায়াছবি এবং অশ্লীলতা ও নোংরামিতে ভরা ভারতীয় পিওর হিন্দি ছায়াছবির মধ্যে যে কোন একটি বেছে নিতে বলা হলে
যেহেতু শব্দ সম্ভারের দিক থেকে পিওর হিন্দির সাথে বাংলা ভাষার প্রচুর মিল আছে সেহেতু অশ্লীল অশালীন ভারতীয় পিওর হিন্দি ছায়াছবিটাই বেছে নিবেন কি মি : ঝন্টু ?!!!
ভারতীয় ভাষা সমূহের মধ্যে উর্দু ভাষা শ্রুতিমধুর ও আকর্ষণীয় হওয়ার কারণে আপামর ভারতীয় উপমহাদেশীয় দর্শকদের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জনের মাধ্যমে ব্যবসায়িক সাফল্য পাওয়ার জন্য ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতারা অধিকাংশ ভারতীয় হিন্দি চলচ্চিত্র ও ছয়াছবির সংলাপে পিওর হিন্দির পরিবর্তে ৮০ ভাগ উর্দু ব্যবহার করেন এবং এ কারণে হিন্দি ছায়াছবিগুলো আসলে পিওর হিন্দি নয় উর্দু মিশ্রিত , উর্দুই ম্যক্সিমাম । আর পিওর হিন্দি , বাংলা এবং অন্যান্য ভারতীয় ভাষার চেয়ে আরবী - ফার্সী শব্দ বহুল উর্দু
ভাষা আকর্ষণীয় ও শ্রুতিমধুর হওয়ার জন্যই সংস্কৃত তদ্ভব শব্দ বাহুল্যের পিওর হিন্দির মতো কলকাতার বাংলা ছায়াছবি পশ্চিম বাংলার বাইরে সমগ্র ভারতে জনপ্রিয়তা ও প্রসার লাভ করতে পারে নি ।
[ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আরবী ফার্সী শব্দ ব্যবহারের কারণেই উর্দু ভাষা ভারতীয় যে কোনো ভাষার চেয়ে শ্রুতিমধুর , মিঠা , নামাকী ( লাবণ্যময় ) , আকর্ষণীয় ও হৃদয়গ্রাহী। ]
বাণিজ্যিক ব্যবসায়িক লাভ ও স্বার্থের কারণেই ভারতীয় হিন্দি ভাষী চলচ্চিত্র নির্মাতারা সংস্কৃত তদ্ভব শব্দ বহুল পিওর ( খাঁটি ) হিন্দির বদলে সিনেমার সংলাপে আরবী ফার্সী শব্দ বহুল উর্দু ভাষা ব্যবহার করেন যা উর্দু বিদ্বেষ বশত : মি : ঝন্টুর কাছে ভালো ঠেকে নি । আসলে উর্দু , বাংলা , পিওর হিন্দি , আরবী , ফার্সী , তুর্কী , ইংরেজি, ফরাসী , চীনা , জাপানী ইত্যাদি মুখ্য নয় বরং মুখ্য হচ্ছে ছায়াছবিটা ধর্ম , সংস্কৃতি , শালীনতা , নীতি নৈতিকতা ও জাতীয় স্বার্থ বিরোধী কিনা । যদি এ সব শর্ত ও বিষয় বিরোধী না হয় তাহলে যে কোনো ভাষার চলচ্চিত্র ও ছায়াছবি প্রদর্শনে আপত্তির কারণ বিদ্যমান থাকে না। তাই এ সব দিক বিচার করে মি : ঝন্টুর বক্তব্য দেওয়া উচিত ছিল। তাই শাহরুখ খানের পাঠান ছায়াছবি কি উপরিউক্ত শর্ত পূরণ করে কিনা তা বিচার করতে হবে। স্রেফ উর্দুর আগ্রাসনের শঙ্কা একাই যথেষ্ট নয় ।
ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান