IQNA

দখলদারিত্ব বিস্তারে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা: গাজা থেকে সিরিয়া পর্যন্ত

12:09 - October 29, 2025
সংবাদ: 3478340
ইকনা- গাজা উপত্যকা এখনও ধ্বংসস্তূপ ও অবরোধের নিচে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় থাকলেও, ইসরাইলের বুলডোজারগুলো দখলকৃত গোলান মালভূমিতে বন উজাড় করছে এবং তেল আবিবের রাজনীতিবিদেরা নেসেটে দখলদারিত্ব বিস্তারের কথা বলছেন।
দখলদারিত্ব বিস্তারে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা: গাজা থেকে সিরিয়া পর্যন্তপশ্চিম এশিয়ায় এখনো গাজার যুদ্ধের রেশ না কাটলেও ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠী একাধিক ফ্রন্টে নতুন আগ্রাসী পদক্ষেপ শুরু করেছে। পশ্চিম তীর ও সিরিয়ায় দখলদারিত্ব বাড়ানো, কূটনৈতিক ও বৈজ্ঞানিক ফ্রন্টে সক্রিয় থাকা- এগুলোই সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলি রেজিমের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো।
 
মার্কিন কর্মকর্তার সফরের সময় নেসেটের রাজনৈতিক চাপ তৈরির প্রচেষ্টা
 
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী 'গিদেওন সা’আর' জানিয়েছেন, নেসেটের সদস্যরা মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের সফরের সময়ই 'পশ্চিম তীরে আধিপত্য বিস্তার' বিলের খসড়া নিয়ে ভোটাভুটির মাধ্যমে মন্ত্রিসভার ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছিলেন।
 
সা’আর দাবি করেন, "এই ভোটাভুটি তথাকথিত 'ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনা' অনুসারে হয়েছে, যেখানে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাঠামোগত সংস্কার এবং বন্দি ফিলিস্তিনিদের পরিবারের জন্য বেতন বন্ধের কথা বলা হয়েছিল। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও অভিযুক্ত করেন যে, তাদের নীরবতা “ইসরায়েলবিরোধী উস্কানিকে উত্সাহিত করছে।”
 
গাজায় অবরোধের ধারাবাহিকতা ও বন্দিদের মরদেহকে চাপের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার
 
যুদ্ধবিরতির পরও ইসরায়েল পুরোপুরি মানবিক সহায়তা গাজায় ঢুকতে দিচ্ছে না। কেবল ক্যানজাত খাবার ও নুডলস বহনকারী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছে, কিন্তু মাংস, মুরগি ও প্রধান খাদ্যপণ্যের চালান সীমান্তে আটকে দেওয়া হচ্ছে।
 
ফিলিস্তিনি সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নিজেদের নিহত সৈন্যদের মরদেহ ফেরত দেওয়ার শর্ত হিসেবে খাদ্য ও ওষুধ প্রবেশের অনুমতির কথা বলছে।
 
অন্যদিকে হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেডস জানিয়েছে, তারা এখন পর্যন্ত ১৭ জন ইসরায়েলি সৈন্যের মরদেহ রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর করেছে, তবে গাজার ব্যাপক ধ্বংসের কারণে মরদেহ অনুসন্ধান কার্যক্রম জটিল হয়ে পড়েছে।
 
বুলডোজারের ছায়ায় সিরিয়ায় দখলদারিত্ব সম্প্রসারণ
 
আল-আরাবি আল-জাদিদ পত্রিকায় প্রকাশিত উপগ্রহচিত্রে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবরের মধ্যে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের প্রাকৃতিক সংরক্ষিত অঞ্চল থেকে প্রায় ৬০ হেক্টর এলাকা ধ্বংস করেছে।
 
ছবিগুলোতে দেখা যায়, কুনেইত্রা প্রদেশের জাবাতা আল-খাশিব ও আশ-শাহার অঞ্চলের বনভূমি বুলডোজারে মাটিচাপা দিয়ে সেখানে সামরিক স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী এসব অঞ্চলে স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক বাঁধ তৈরি করেছে এবং অ্যান্টি-পার্সোনেল মাইন পুঁতে রেখেছে- যা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
 
সিরীয় পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এসব বনাঞ্চল ছিল বিরল প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল; তাই এর ধ্বংস পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য ভয়াবহ আঘাত।
 
সৌদি আরবকে অপমান: নেতানিয়াহুর মন্ত্রীর নতুন কূটনৈতিক ঝড়
 
ইসরায়েলের চরমপন্থী অর্থমন্ত্রী 'বেজালেল স্মোটরিচ' ফের সৌদি আরবকে লক্ষ্য করে বলেছেন, “আমরা ওদের ছাড়া ৭৭ বছর বেঁচে আছি, আরও ৭৭ বছর বাঁচব।”
 
এর আগেও তিনি সৌদিদের উদ্দেশে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলেছিলেন, “তোমরা মরুভূমিতে উট চড়েই থাকো।”
 
এই বক্তব্যে আরব বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। যদিও পরে স্মোটরিচ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ ক্ষমা চান। তারপরও তিনি আবার বলেন, সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের শর্ত হলো 'পশ্চিম তীরের ওপর ইসরায়েলি মালিকানা স্বীকার করা।' ফলে সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক পুনরায় দূরত্বে চলে যায়।
 
 ‘আয়রন বিম’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় হ্যাকারদের অনুপ্রবেশ
 
"সাইবার সাপোর্ট ফ্রন্ট” নামে একটি হ্যাকিং গ্রুপ ঘোষণা করেছে যে, তারা ইসরায়েলের লেজার-ভিত্তিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা 'আয়রন বিম' সম্পর্কিত গোপন তথ্য হাতে পেয়েছে।
 
তারা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর উন্নত অস্ত্রের নথিও প্রকাশ করেছে— যার মধ্যে রয়েছে ‘স্কাইলার্ক’ ড্রোন ও ‘আইস ব্রেকার’ নামের স্টেলথ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের তথ্য। এছাড়াও কিছু ইউরোপীয় দেশ ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলি সামরিক চুক্তির নথিও ফাঁস হয়েছে। এর আগে তুর্কি হ্যাকাররা প্রতিরক্ষামন্ত্রী 'ইসরায়েল কাটস'-এর ফোন নম্বর প্রকাশ করে তাকে হুমকির বার্তা পাঠিয়েছিল।
 
একাডেমিক বয়কট ও বৈজ্ঞানিক অঙ্গনে ক্রমবর্ধমান একঘরে অবস্থা
 
ইসরায়েলি পত্রিকা হা’আরেতজ জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজার যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রায় ১,০০০টি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাতিল হয়েছে— যা আগের বছরের তুলনায় তিনগুণ বেশি।
 
তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান বলেছেন, “এটি ইসরায়েলের বৈজ্ঞানিক জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময়।” বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখন একাডেমিক বয়কট মোকাবিলায় একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছে।
 
এই বর্জন কেবল একাডেমিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়; ইসরায়েলি ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক দলগুলোকেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে— যা ইসরায়েলের বৈশ্বিক বিচ্ছিন্নতার প্রমাণ বহন করছে।
 
নেসেটে দখলদারিত্বের আইন পাস থেকে শুরু করে সিরিয়ার পরিবেশ ধ্বংস, গাজায় মানবিক সংকট সৃষ্টি, সৌদি আরবের সঙ্গে কূটনৈতিক সংঘাত ও সাইবার নিরাপত্তা ব্যর্থতা— এসব ইঙ্গিত দেয় যে, তেল আবিব এখন একাধিক ক্ষেত্রে বিশ্বের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত।
 
আন্তর্জাতিক নিন্দা ও বৈজ্ঞানিক-বৈশ্বিক বর্জনের মধ্যেও ইসরায়েলি শাসনব্যবস্থা তাদের আগ্রাসী নীতি চালিয়ে যাচ্ছে— যা কেবল আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাই নয়, বরং তাদের বৈশ্বিক অবস্থানকেও ক্রমশ দুর্বল করে তুলছে।# পার্সটুডে
captcha