IQNA

“কুরআনের আলোকে সহযোগিতা” পর্ব–৩

সহযোগিতার আয়াতে আটটি নির্দেশনা

15:05 - October 18, 2025
সংবাদ: 3478275
ইকনা- মায়িদা সূরার ২নং আয়াতে পবিত্র নবী (সা.)-এর প্রতি নাজিলকৃত শেষ দিকের নির্দেশনাগুলোর মধ্যে আটটি গুরুত্বপূর্ণ আদেশ উল্লেখ করা হয়েছে, যার অন্যতম হলো নেকি ও তাকওয়ার পথে পারস্পরিক ঐক্য ও সহযোগিতা।

এই আয়াতে ইসলামের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আদেশ বর্ণিত হয়েছে, যেগুলোর বেশিরভাগই হজ ও বায়তুল্লাহর জিয়ারতের সাথে সম্পর্কিত। এখানে আল্লাহ তাআলা সব ধরনের শাআইরুল্লাহ (شَعَائِرَ اللَّهِ)অর্থাৎ তাঁর নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শনকে ফরজ এবং তাদের অবমাননাকে হারাম ঘোষণা করেছেন। এছাড়াও কয়েকটি নির্দিষ্ট শাআইরের কথা উল্লেখ করেছেন, যেমন: হারাম মাসসমূহ, কোরবানি, ইহরামের অবস্থায় শিকার করা নিষিদ্ধ করা, এবং বায়তুল্লাহর হজযাত্রীদের সম্মান প্রদর্শন করা।

আল্লাহ বলেন:

«يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُحِلُّوا شَعَائِرَ اللَّهِ»

(হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে অবমাননা করো না।)
(সূরা আল-মায়িদা: ২)

এরপর আয়াতে জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে এখন যখন মক্কা বিজিত হয়েছে, তখন আগের শত্রুতা যেমন, হিজরতের ষষ্ঠ বছরে মুসলমানদেরকে হজ থেকে বিরত রাখার ঘটনা যেন মুসলমানদেরকে প্রতিশোধে প্ররোচিত না করে।

আল্লাহ বলেন:

«وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ أَنْ صَدُّوكُمْ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ أَنْ تَعْتَدُوا»

(কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি তোমাদের শত্রুতা যেন তোমাদেরকে অন্যায় আচরণে লিপ্ত না করে, কারণ তারা তোমাদেরকে মসজিদুল হারাম থেকে বিরত রেখেছিল।)
(সূরা আল-মায়িদা: ২)

যদিও এই নির্দেশ হজের প্রসঙ্গে নাজিল হয়েছে, তবু এর অর্থ সাধারণ এবং একটি মৌলিক নীতি নির্ধারণ করে যে, মুসলমান কখনো প্রতিহিংসাপরায়ণ হতে পারবে না, অতীতের শত্রুতাকে পুনরুজ্জীবিত করে প্রতিশোধ নিতে পারবে না। যেহেতু সমাজে বিভেদ ও দ্বন্দ্বের অন্যতম কারণই এই প্রতিহিংসা, তাই নবী (সা.)-এর জীবনের শেষ প্রান্তে মুসলিম ঐক্য রক্ষার জন্য এই ইসলামী নির্দেশনার তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর।

এরপরের অংশে আল্লাহ তাআলা এই শিক্ষাটি সম্পূর্ণ করেন এভাবে যে, অতীতের শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ না নিয়ে তোমরা একে অপরের হাত ধরো, তবে তা নেকি ও তাকওয়ার পথে, পাপ ও সীমালঙ্ঘনের নয়।

আল্লাহ বলেন:

«وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَ التَّقْوَى وَ لَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَ الْعُدْوَانِ»

(তোমরা পরস্পরকে নেকি ও তাকওয়ার কাজে সহযোগিতা করো, কিন্তু পাপ ও অন্যায়ে সহযোগিতা করো না।)
(সূরা আল-মায়িদা: ২)

আয়াতের শেষে আল্লাহ তাআলা পূর্বের সব নির্দেশকে দৃঢ় করার জন্য সতর্ক করে বলেন,

«وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ»

(আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা।)
(সূরা আল-মায়িদা: ২)

এই আয়াতটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, ইসলাম শুধু উপাসনা নয়, বরং সামাজিক জীবনে ন্যায়, তাকওয়া ও পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করে একটি নৈতিক সমাজ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানায়।3495015#

 

captcha