সুলাইমান ছিলেন হযরত দাউদের পুত্র এবং হযরত দাউদ ছিলেন ইয়াকুবের পুত্র ছিলেন ইয়াহুদা বংশের। তিনি এগারোজন মধ্যস্থতার মাধ্যমে হযরত ইয়াকুবের কাছে পৌঁছান অর্থাৎ হযরত ইয়াকুবের বংশের ১১তম পুরুষ ছিলেন হযরত দাউদ (আ.)। হজরত সুলেমান অনেক ফর্সা ছিলেন এবং শারীরিকভাবে তিনি অনেক লম্বা ও লোমশ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
পিতা হজরত দাউদের মৃত্যুর পর সুলাইমান তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। ঐতিহাসিক সূত্রে, তিনি তেরো বা বাইশ বছর বয়সে তার পিতার স্থলাভিষিক্ত হন।
তিনি ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের মধ্যে একজন যিনি একজন নবী হওয়ার পাশাপাশি রাজাও হয়েছিলেন। সুলাইমান মহান আল্লাহর কাছে এমন একটি সরকার চেয়েছিলেন যা তার পরে কেউ প্রাপ্য হবে না। আল্লাহ তাঁর দোয়ার উত্তর দিয়েছিলেন এবং মানুষ ছাড়াও তিনি জ্বীন, শয়তান, বায়ু এবং পাখিদেরকে আদেশে করার ক্ষমতা রাখতেন। তার সময়ে বনী ইসরাইলের ভূমি বিস্তৃত হয়।
পবিত্র কুরআনের আয়াত অনুসারে হযরত সুলাইমানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল, যেমন তাকে একটি তামার খনি দেওয়া হয়েছিল, তিনি পশুপাখির ভাষা জানতেন এবং মানুষের পাশাপাশি জিন ও শয়তানদের ওপরও তার নিয়ন্ত্রণ ছিল। হযরত সুলাইমানের শাসনামলে সুলাইমান নামক ইবাদতের স্থান সহ অনেক ইমারত নির্মাণ করা হয়। এবং এসকল ইমারত বা অট্টালিকার নির্মাণ দায়িত্ব জ্বীনদের হাতে ছিল।
হযরত সুলাইমান সম্পর্কে অনেক গল্প বলা হয়েছে; তার রিং পাওয়ার বা আংটির শক্তি, পিঁপড়া এবং হুদহুদের সাথে তার কথা বলা, হযরত সুলাইমান এবং সাবা দেশের রানীর গল্প এবং সুলাইমানের উড়ন্ত কার্পেট সহ অন্যান্য গল্প উল্লেখ করা হয়েছে।
হযরত সুলাইমানের সময় অনেক লোকেরা জাদুবিদ্যা নিয়ে কাজ করতো। তিনি তাদের সকল লেখা সংগ্রহ করে একটি বিশেষ স্থানে রাখার নির্দেশ দেন। হযরত সুলেমানের মৃত্যুর পর একদল রোক সেই লেখাগুল বের করে এনে অন্যদের শিক্ষা দেওয়া শুরু করে।
হযরত সুলাইমান ৪০ বছর রাজত্ব করেন। মৃত্যুর সময় হযরত সুলাইমান তার লাঠিতে হেলান দিয়ে মারা যান। একপর্যায়ে উইপোকা তার লাঠি খেয়ে ফেলে এবং তিনি মাটিতে পড়ে যান। এর আগমুহূর্ত পর্যন্ত কেউ তার মৃত্যুর খবর জানত না।
সূরা বাকারা, নাসা, আনআম, আম্বিয়া, নামল এবং সাবা’য় হযরত সুলেমানের নাম সতেরো বার উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে হযরত সুলেমানের সাথে সম্পর্কিত বৈশিষ্ট্য ও কাহিনী সম্পর্কিত তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
ইহুদিদের পবিত্র গ্রন্থে সুলাইমানের অনেক গল্প উল্লেখ রয়েছে। সুলাইমানের হিতোপদেশ এবং সুলাইমানের গজল উভয়ই ইহুদিদের পবিত্র বইয়ে রয়েছে।
তাওরাত অনুসারে, হযরত সুলাইমান তার জীবনের শেষের দিকে একজন মূর্তিপূজক হয়েছিলেন, তবে পবিত্র কুরআনে জোর দেওয়া হয়েছে যে হযরত সুলাইমান তার জীবনের শেষ পর্যন্ত মহান আল্লাহ প্রতি বিশ্বাসী ছিলেন এবং কখনও কাফের বা অবিশ্বাসী হননি।
হজরত সুলেমানের মৃত্যুর পর তার শাসনাধীন অঞ্চলগুলোকে ভাগ করা হয়; ইহুদা নামক একটি দেশ অবশিষ্ট ছিল, যার মধ্যে জেরুজালেম শহর ছিল। এছাড়াও, ইসরাইল নামে একটি স্বাধীন ভূমি গঠিত হয়েছিল।