IQNA

চাঁপাইনবাবগঞ্জে মুসলিম ঐতিহ্য

11:42 - July 21, 2023
সংবাদ: 3474081
তেহরান (ইকনা): চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর আগে ‘নবাবগঞ্জ’ নামে পরিচিত ছিল। অবস্থান-সদর উপজেলার দাউদপুর মৌজা। ব্রিটিশ পূর্বকালে অঞ্চলটি মুর্শিদাবাদের নবাবদের বিহারভূমি ছিল। বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব সরফরাজ খাঁ শিকারে এসে যে স্থানটিতে ছাউনি ফেলেছিলেন সে স্থানটিই পরে নবাবগঞ্জ নামে পরিচিত হয়।

বেশির ভাগ গবেষকের মতে, নবাব আলীবর্দী খাঁর আমলে (১৭৪০-৫৬ খ্রি.) নবাবগঞ্জ নামকরণ হয়।
সরকারি কাজকর্মের সুবিধার জন্য ‘চাঁপাই’ গ্রামে অবস্থিত ডাকঘরটি ১৯২৫ সালে নবাবগঞ্জে স্থানান্তরিত হলে নতুন নামকরণ করা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ। ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ নামকরণ নিয়ে জনশ্রুতি আছে :
 
ক. বর্তমান নবাবগঞ্জ থেকে পাঁচ-ছয় মাইল দূরে মহেশপুর নামে একটি গ্রামে চম্পাবতী মতান্তরে ‘চম্পারাণী’ বা ‘চম্পাবাঈ’ নামে এক সুন্দরী বাস করতেন। তাঁর নামানুসারে জায়গার নাম ‘চাঁপাই’ হয়।
 
খ. রাজা লখিন্দরের রাজধানীর নাম ‘চম্পকনগর’। কোনো কোনো গবেষক চাঁপাইকে বেহুলার শ্বশুরবাড়ি চম্পকনগর বলে মত দিয়েছেন। চম্পক থেকেই চাঁপাইয়ের উৎপত্তি। ঐতিহাসিকগণ রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, পশ্চিমবঙ্গের মালদহ, মুর্শিদাবাদের কিছু অংশ এবং দার্জিলিং ও কোচবিহারসহ গঠিত অঞ্চলকে বরেন্দ্রাঞ্চল হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
 
রাজা শশাঙ্কের সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ তাঁর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ারউদ্দিন মুহম্মদ বখতিয়ার খলজী ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে নদীয়া জয় করেন। মুসলিম আমলে গৌড় নগরী ‘লখনৌতি’ (লক্ষণাবতী) নামে পরিচিতি লাভ করে। ইলিয়াস শাহি বংশের শাসনামলে বাংলাভাষী সমগ্র ভূখণ্ড ‘বাঙ্গালা’ নামের একক রাষ্ট্রের অধীনে আসে।
 
মধ্যযুগের বাংলার শ্রেষ্ঠ শাসক সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহর (১৪৯৩-১৫১৯ খ্রি) রাজত্বেই মূলত চাঁপাইনবাবগঞ্জ গৌরবের সর্বোচ্চ শিখরে উপনীত হয়।
 
 
সেই গৌরবেরই সাক্ষী গৌড়ের বিখ্যাত ছোট সোনা মসজিদ।
১৫৭৬ খ্রি. মোগল সম্রাট আকবরের বাংলা বিজয়ের পর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ উত্তর ও পশ্চিমবঙ্গের বেশির ভাগ এলাকা মোগল সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। মোগল সুবাদারদের মধ্যে শাহাজাদা মুহম্মদ সুজার (১৬৩১-৫৯ খ্রি) বেশ কিছু কীর্তি চাঁপাইনবাবগঞ্জে রয়েছে। তাঁর সময়েই শাহ নেয়ামতুল্লাহ (রহ.) চাঁপাইনবাবগঞ্জে আসেন এবং ফিরোজপুরে স্থায়ী আস্তানা স্থাপন করেন।
 
১৯৮৪ সালের ১ মার্চ নবাবগঞ্জকে জেলা ঘোষণা করা হয়। ২০০১ সালের ১ আগস্ট সরকারিভাবে নবাবগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রাখা হয়।
 
চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রখ্যাত ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন : আলহাজ ডা. আ. আ. ম. মেসবাহুল হক (বাচ্চু ডাক্তার) (১৯৩৬-২০১১ খ্রি.), বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মঈন উদ্দিন আহমেদ (মন্টু ডাক্তার) (১৯৩৬-২০১১ খ্রি.), ইলা মিত্র (১৯২৫-২০০২) প্রমুখ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের শাহবাজপুর ইউনিয়নে অবস্থিত ছোট সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন বীরশ্রেষ্ট ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর।
 
চাঁপাইনবাবগঞ্জের দর্শনীয় স্থানের বেশির ভাগ মুসলিম ঐতিহ্যসমৃদ্ধ এবং তালিকাটি সুদীর্ঘ। এখানে কয়েকটির সংক্ষিপ্ত বিবরণ :
 
ঐতিহাসিক আলী শাহপুর মসজিদ : আলীশাহপুর, ফতেপুর, নাচোল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
 
কোতোয়ালি দরওয়াজা : শাহবাজপুর ইউনিয়ন, শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ। নগর পুলিশের ফারসি প্রতিশব্দ ‘কোতওয়ালে’র অনুকরণে নামকরণ করা হয়েছে।
 
খঞ্জনদিঘির মসজিদ : শাহবাজপুর ইউনিয়ন, শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
 
ছোট সোনা মসজিদ : শাহবাজপুর ইউনিয়ন, শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
 
তাহখানা কমপ্লেক্স: শাহবাজপুর ইউনিয়ন, শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
 
তিন গম্বুজ মসজিদ : শাহবাজপুর ইউনিয়ন, শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
 
দারসবাড়ী মসজিদ: শাহবাজপুর ইউনিয়ন, শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
 
শাহ নেয়ামতউল্লাহ (রহ.) মসজিদ ও সমাধি কমপ্লেক্স: শাহবাজপুর ইউনিয়ন, শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
 
ষাঁড়বুরুজ: রহনপুর, গোমস্তাপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
 
ধনাইচকের মসজিদ : খঞ্জনদিঘি মসজিদের ধ্বংসাবশেষের একটু দূরেই আছে প্রাচীন মসজিদের ধ্বংসাবশেষ। মসজিদটির নাম ধনাইচকের মসজিদ। মসজিদটিতে তিনটি, অপরমতে ছয়টি গম্বুজ ছিল।
 
চামচিকা মসজিদ : শাহবাজপুর ইউনিয়ন, শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ। ভারতে অবস্থিত বড় চামচিকা মসজিদের আদলেই এটি তৈরি।
 
দাফেউল বালা : তাহখানা সংলগ্ন জলাশয় ‘দাফেউল বালা’। বিশুদ্ধ অন্তরে জলাশয়টির পানি পান করলে পুরনো রোগ সেরে যায়। জলাশয়টি জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সবার নিকট পবিত্র। এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জে উল্লেখযোগ্য মুসলিম স্থাপত্যের তালিকায় আছে : চাঁপাই জামে মসজিদ, মহারাজপুর জামে মসজিদ, মাঝপাড়া জামে মসজিদ, হজরত বুলন শাহ (রহ.) মাজার ইত্যাদি।
 
 
captcha