এটা একটা পাতানো খেলা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ( মাযুরা ) ও ইসরাইলের। এতদিন মাযুরাই যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে ছিল। মাযুরাই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাযায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ভেটো পর্যন্ত দিয়েছে।
এরফলে বিশ্বজুড়ে মাযুরা নিন্দিত হচ্ছে ও ধিক্কার পাচ্ছে। সেই নিন্দা ও ধিক্কার থেকে রেহাই ও নিষ্কৃতি পেতে মাযুরার এ নতুন ফন্দি ও ভেল্কিবাজি। গাযায় চলমান গণহত্যা , যুদ্ধাপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে মাযুরা ইসরাইলের শরীক ও দোসর । যাতে মাযুরার মুখে আরো চুনকালি না পড়ে এবং গণতন্ত্র ফণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইত্যাদির মতো বহু মুখরোচক অন্ত:স্বারশূন্য মাকাল ফল সদৃশ ফাঁকা বুলি আওড়াতে পারে সেজন্য অ্যান্টনি ব্লিনকেন সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে ইসরাইলে যায় ( ৩ নভেম্বর ২০২৩ ) । কিন্তু এতসব নাটক ফাটক করে ও ভেল্কিবাজি দেখিয়েও মাযুরার দুর্নাম ঘুচবে না বরং মুখের চুনকালি সাফ হবে না ! এই মাযুরাই , এই ব্লিংকেন , এই বাইডেন , এই ঋষি সুনাক ( ব্রিটেন) , এই ম্যাকখঁ ( ফ্রান্স / লাফখঁ ) , এই ওলাফ শুলজ ( জার্মানি ) ইসরাইলকে গাযায় বেধড়ক এলোপাথাড়ি নির্বিচারে নির্বিশেষে বোমাবর্ষণ করতে উস্কিয়েছে ও সুযোগ করে দিয়েছে এবং বৈধতা প্রদান করেছে এ কথা বলে যে ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে এবং সেই অধিকার বলেই ইসরাইল গাযায় নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করে নিরীহ নিরপরাধ নারী , শিশু , বেসামরিক জনগণকে প্রথম দিন থেকে আজ ৩০ দিন যাবৎ হত্যা করেই যাচ্ছে ।
এই ৩০ দিন ধরে গাযায় গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধ করার বৈধতার সনদ ও ছাড়পত্র স্বয়ং মাযুরা ( ব্লিংকেন - বাইডেন ) , ব্রিটেন ফ্রান্স , জার্মানি ও ন্যাটো দিয়েছে ইসরাইলকে । ৩০ দিন ধরে মাযুরা ও পশ্চিমা দেশগুলো ইসরাইলকে সর্বাত্মক আর্থিক ও সামরিক সাহায্য ( গোলাবারুদ, বোমা , ক্ষেপণাস্ত্র , অত্যাধুনিক অস্ত্র ও হাতিয়ার ইত্যাদি ) দিচ্ছে। শুধু তাই নয় ইসরাইলের পক্ষে এবং অন্যান্য দেশকে ভয় দেখানোর জন্য মাযুরা ইসরাইলের কাছে ভূমধ্য সাগরে নৌবহর ও বিমানবাহী রণতরীও মোতায়েন করেছে। গাযায় ইসরাইল যাতে নির্বিঘ্নে ও নির্ঝঞ্ঝাটে সবধরনের যুদ্ধাপরাধ করে যেতে পারে সেজন্য মাযুরা সব কিছুই করেছে এবং করছে। এখন ব্লিংকেন মশাই ইসরাইলে গেছে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে। কিন্তু নাকি বেয়ারা বেনয়ামীন নেতানিয়াহু তা মানছে না !!! পরিস্থিতি যদি এটাই হয় তাহলে মাযুরা , ইইউ , ন্যাটো , যুরা ( যুক্তরাজ্য ) , ফ্রান্স ও জার্মানি ইসরাইলকে সব ধরণের রাজনৈতিক , নৈতিক , আর্থিক ও সামরিক সাহায্য যেমন: অস্ত্র, গোলাবারুদ,বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দিক !!! তা কেন করছে না মাযুরা গংরা ? কারণ তা করলে ইসরাইল অতি অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই ধ্বসে পড়বে ফিলিস্তীনী বীর মুজাহিদদের হাতে ।
মাযুরা ও পশ্চিমারা সামরিক সাহায্য বন্ধ করে দিলেই ইসরাইলের যুদ্ধ করার কোন সামর্থ্য ও ক্ষমতাই আর বহাল থাকবে না। মাযুরা ও পশ্চিমাদের সার্বিক সামরিক অর্থনৈতিক সাহায্য পেয়েই ইসরাইল গাযার বিরুদ্ধে চরম অসম যুদ্ধে লিপ্ত আছে। গাযা সার্বিক ভাবে অবরুদ্ধ এবং গাযার কোনো আকাশ প্রতিরক্ষাও নেই । তাই ইসরাইল এ অবস্থার সুযোগ নিয়েই গাযায় গত ৩০ দিন ধরে নির্বিচারে ব্যাপক বোমাবর্ষণ করেই যাচ্ছে মার্কিন যুদ্ধ বিমান , বোমা ও গোলাবারুদ ব্যবহার করে। গাযায় ইসরাইলের ব্যবহৃত বোমা ও গোলাবারুদের ৮০% ই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্মিত । অতএব কোন্ মুখে নির্লজ্জের মত মাযুরা দেখাতে চাচ্ছে যে মার্কিনীদের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব ইসরাইল মানছে না !! কথায় কথায় জব্দ করার জন্য মাযুরা ও ইইউ প্রতিপক্ষ বৈরী দেশ এমনকি কথা না শুনলে মিত্র দেশের ওপর শক্ত ও কঠিন অবরোধ ( স্যাংশন ) আরোপ করে । এখন মাযুরা ইসরাইলের ওপর কঠোর সার্বিক অর্থনৈতিক ও সামরিক নিষেধাজ্ঞা জারি করুক এবং গাযায় ইসরাইলের বোমারু বিমান গুলো ভূপাতিত করুক ও ফেলে দিক । কেন তা করছে না মাযুরা ? মাযুরা তা কোনদিনও করবে না। সবাই জানে যে ইসরাইল নামক মেকি কৃত্রিম সন্ত্রাসবাদী আগ্রাসী দখলদার হানাদার রাষ্ট্রটি ( ইসরাইল ) চরমভাবে মাযুরা ও পশ্চিমাদের ওপর নির্ভরশীল এবং মাযুরা গংদের সাহায্য নিয়েই পশ্চিম এশিয়ায় ( মধ্যপ্রাচ্য ) এত সব অপকর্ম , অপরাধ ও ফিতনা - ফাসাদ করে যাচ্ছে ।
এ সব সাহায্য বন্ধ করে দিলেই ইসরাইলের লাফালাফি ও আস্ফালন সব থেমে যাবে। এগুলো না করে সব সাহায্য বন্ধ না করে শুধু মুখে মুখে বলে বিশ্ববাসীকে বোকা বানাতে চাচ্ছে মাযুরা । দেখ তোমরা , আমরা তো ইসরাইলকে যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব দিয়েছি । কিন্তু ইসরাইল তা মানছে না । আমাদের এখন কী করার আছে ?!! জবাবে বলতে হয় : তোদের কী করার নেই ? অতসব নাটক ফাটক করিস নে । দে সব সাহায্য বন্ধ করে , অবরোধ স্যাংশন ঠুকে দে , দ্যাখ ইসরাইল তখন কী করে ? হামাস ও ফিলিস্তীনী মুজাহিদদের সাথে কত পেরে ওঠে ইসরাইল !!! এখনই যুদ্ধের ময়দানে রণাঙ্গনে ইসরাইলী সেনাবাহিনী হামাস ও ফিলিস্তীনী মুজাহিদদের সাথে স্থলযুদ্ধে পেরে উঠছে না এতসব অজস্র মার্কিন ও পশ্চিমা সাহায্য পেয়েও ।
এ সব কথা হচ্ছে বিশ্ববাসী ও বিশ্ব বিবেককে বোকা ও আহমক বানানোর অশুভ পায়তারা । আসলে মাযুরা গংরা ইসরাইলকে গাযায় আরো জঘন্য যুদ্ধাপরাধ করতে দেবে দেবে এ ঠুনকো অজুহাত দেখিয়ে : "আমাদের কী করার আছে ? আমাদের কথা শুনছে না মানছে না ইসরাইল। " এ সব হচ্ছে মাযুরার ভাঁওতাবাজি।
আরেকটা কথা : ইসরাইলে সাময়িক যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব নিয়ে মিস্টার ব্লিংকেনজির আগমন যেন নিজের কাছে নিজের বার্তা বহন সদৃশ যার কোনো মানে হয় না। কারণ মাযুরা মানে বৃহৎ ইসরাইল এবং ইসরাইল মানে ক্ষুদ্র মাযুরা। তাই মাযুরা ইচ্ছা করলেই ইসরাইলের এ বর্বর হিংস্র আক্রমণ বন্ধ করে দিতে পারে এক ইশারায় । কিন্তু মাযুরার ইচ্ছা তা নয় । আর মাযুরা দেখাতে চায় যে ইসরাইল স্বাধীন স্বতন্ত্র সার্বভৌম শক্তিশালী দেশ । তাই এ নাটকের অবতারণা ।
নেতানিয়াহুর কাছে মোশে ব্লিংকেন জি যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব এনে দেখাতে চাচ্ছে যে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি । কিন্তু স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে তা মানা বা প্রত্যাখ্যান করার বিষয় ইসরাইলের ওপর । আমাদের কোন প্রভাব নেই। এ সব হচ্ছে খেল তামাশা । সময় ক্ষেপণ । আর এভাবে নিজেদের দূরভিসন্ধি বাস্তবায়ন অর্থাৎ গাযার জনগণের সব কিছু ধ্বংস সাধন , গণহত্যা ও প্রজন্ম হত্যা চালিয়ে যাওয়া এবং তাদের গাযা থেকে উচ্ছেদ করে অন্যত্র স্থানান্তর।
মাযুরার সাময়িক যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব নিয়ে নেতানিয়াহুর কাছে ব্লিংকেন জি সাহেবের আগমন থেকে আভাস পাওয়া যায় যে গাযাবাসীরা প্রভূত ক্ষয়ক্ষতি এবং গণহত্যার শিকার হলেও যুদ্ধে ইসরাইলের অবস্থা ভালো নেই সাফল্য নেই। যায়নবাদী ইসরাইলী জনতাও যুদ্ধের ফলাফল নিয়ে নেতানিয়াহুর ওপর অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ । নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা তলানিতে। যে কোনো সময় নেতানিয়াহুর যুদ্ধকালীন সরকারেরও পতন ঘটতে পারে। তাই কোনো রকমে সাময়িক ভাবে হলেও একটা যুদ্ধ বিরতি ঘটিয়ে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক জীবন ও ক্যারিয়ার রক্ষার চাইতেও ইসরাইলের অস্তিত্বটা রক্ষা করা যায় কিনা সেটাই মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) , যুরা (যুক্তরাজ্য) , ইইউ ও ন্যাটোর আসল চিন্তাভাবনা বা দুশ্চিন্তা বা দু:স্বপ্ন । কারণ , যেটাই হোক না কেন সাফল্য বিহীন দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ কখনোই ইসরাইলের অস্তিত্বের অনুকূলে নয় । কারণ বেন গোরিওনের ইসরাইলের অস্তিত্ব রক্ষার তত্ত্বানুযায়ী শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ যেন কখনোই ইসরাইলের ভিতরে স্থানান্তরিত না হয় এবং যুদ্ধ যেন দীর্ঘ দিন না চলে ।
কিন্তু ইসরাইলের ভাগ্যের পরিহাস যে যুদ্ধ এখন যেমন ইসরাইলের নিজ ভূখণ্ডের অভ্যন্তরেও স্থানান্তরিত হয়েছে ঠিক তেমনি তা দীর্ঘ স্থায়ী হয়ে যাচ্ছে। এটাই মাযুরা গং কে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরাইল আসলে অস্তিত্ব সংকট ও ক্রান্তিকালের মধ্যে পড়ে গেছে যার জন্য মাযুরা ও পশ্চিমারা একজোট হয়ে ইসরাইলের অস্তিত্ব রক্ষায় মেতে উঠেছে। এই ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরাইল রাষ্ট্রটির প্রত্যক্ষ রক্ষণাবেক্ষণ করছে মাযুরা । কিন্তু শেষ রক্ষা হবে কিনা সেটাই এখন ভাবনার বিষয়। এমনকি ধরেও নেই যে যুদ্ধে গাযাবাসী ও হামাসের অস্তিত্ব মুছে যাবে যা নেতানিয়াহুও বলেছে ৭ অক্টোবর হামলার পর তার পরেও শেষ রক্ষা ইসরাইলের হবে না ।
যে মরণাঘাত ও ঘা ইসরাইল ৭ অক্টোবর হামাস ও ফিলিস্তিনী মুহাজিদদের কাছ থেকে খেয়েছে ও খাচ্ছে তাতে তার বেঁচে থাকা সম্ভব নয় । যুদ্ধ বন্ধ করলেই কি আর চালিয়ে গেলেই কি ইসরাইল বিলুপ্তির অতল গহ্বরে প্রবেশ করেছে । ইসরাইল রক্ষার প্রচেষ্টা স্বরূপ তৃতীয় বারের মত মশাই ব্লিংকেন জি ইসরাইল সফরে আসতে বাধ্য হয়েছে।
দুষ্কৃতকারী অপরাধী মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) ও পশ্চিমাদের সঠিক ভাবে ও সত্যিকার অর্থে চেনা প্রয়োজন যাতে করে ওদের টেংরি ভেঙে দেয়া সম্ভব হয় ।
ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান