জাকাত প্রদানের আদেশ ইসলামের অন্যতম আদেশ, যার পরিপূর্ণতা একজন ব্যক্তির জন্য ভাল ফলাফল এবং বাস্তব প্রভাব নিয়ে আসে।
কৃপণতার চিকিৎসা
কৃপণতা এমন একটি দোষ যা অন্যান্য দোষের দিকে নিয়ে যায়। কৃপণতার উদাহারণ স্বরূপ বলা যেতে পারে: মানুষের প্রতি উদাসীনতা, কঠোর হৃদয়, অজুহাত তৈরি করা, দরিদ্রদের দাবি করে মিথ্যা বলা, ভাল বন্ধু হারানো, নিজের এবং আত্মীয়দের প্রতি কঠোর হওয়া, আল্লাহর প্রতিশ্রুতির প্রতি সন্দেহ করা, সমাজে নিজের ব্যক্তিত্বকে হেয় করা, আল্লাহর উপর ভরসা না করে নিজ সম্পত্তিতে বিশ্বাস করা।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে: যারা তাদের পরিত্রাণের কথা চিন্তা করে তাদের এই ত্রুটি পরিহার করা উচিত:
و مَن یُوقَ شُحّ نفسه فأولئك هم المفلحون
যারা তাদের আত্মার কৃপণতা (স্বার্থপরতা ও লোভ) হতে মুক্ত, তারাই সফলকাম।
সূরা হাশর, আয়াত: ৯ এবং সূরা তাগাবুন, আয়াত: ১৬
রিযিকের বরকত
"জাকাত" এবং "বরকত" শব্দ এবং সমঅর্থ ও সম্পর্কিত শব্দগুলি কুরআনে 32 বার উল্লেখ করা হয়েছে এবং এটি একটি চিহ্ন যে যাকাত হচ্ছে বরকতের সমান। আঙ্গুর গাছের শাখা কাটা হয়; আপতদৃষ্টিতে এর ফলে গাছ ছোট হয়ে যায়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এরফরে এটিকে বড় করে তোলে।
আমরা কুরআনে পড়ি:
«یَمحق اللّه الرّبا و یُربى الصّدقات»
আল্লাহ সুদকে বিনাশ করেন এবং দানকে করেন বর্ধিত।
সূরা বাকারা, আয়াত: ২৭৬
আমরা অনেক হাদিসে পড়ি:
«الزّكاة تزید فى الرّزق»
যাকাত একজন মানুষের রিজিককে বৃদ্ধি করে।
সম্পত্তির বীমা
ইমাম কাজিম (আঃ) বলেছেনঃ "যাকাতের মাধ্যমে তোমার সম্পত্তির বীমা কর"।
আল্লাহর কাছে প্রিয়
ইমাম সাদিক (আঃ) বলেছেন: : আল্লাহর দৃষ্টিতে সবচেয়ে প্রিয় সেই ব্যক্তি যে সবচেয়ে উদার এবং মানুষের মধ্যে সবচেয়ে উদার সেই ব্যক্তি যে তার সম্পদের যাকাত দেয় এবং আল্লাহ মুমিনদের জন্য তার সম্পদের উপর যা ফরজ করেছেন তাতে কৃপণতা করে না।
আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ
ইমাম সাদিক (আঃ) বলেছেন: আল্লাহ নামাযের সাথে যাকাতকে নিজের নৈকট্য লাভের মাধ্যম বানিয়েছেন।
আমরা কুরআনে পড়ি:
«و رحمتى وسعت كل شىء فساكتبها للّذین یتّقون و یؤتون الزكاة...»
আল্লাহর রহমত সব কিছুর জন্য প্রশস্ত, কিন্তু এর সুনিশ্চিত প্রাপ্তি তাদের জন্য যারা ধার্মিক ও যাকাত প্রদান করে।
সূরা আ’রাফ, আয়াত: ১৫৬ এবং তওবা, আয়াত: ৭১।
আল্লাহ বলেন:
«انّى معكم لئن اقمتم الصّلوة و آتیتم الزّكاة و آمنتم برسلى»
যদি তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আমার নবীদের প্রতি ঈমান আন, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের সাথে আছি।
সূরা মায়েদাহ, আয়াত: ১২
আল্লাহর জন্য কাজ করা
আল্লাহ যেমন সকলের প্রতি তাঁর রহমত প্রসারিত করেছেন, তেমনি যাকাতদাতা গরীবদের উপর তাঁর অনুগ্রহ বর্ষণ করেন এবং এভাবে তিনি নিজের মধ্যে আল্লাহর নৈতিকতা বিকাশ করেন এবং আল্লাহর রহমতের প্রকাশস্থল হয়ে ওঠেন।
শাস্তি থেকে মুক্তি
কাফেররা তওবা, নামায ও যাকাত দ্বারা শাস্তি থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করতে পারে। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:
«و ان تابوا و اقاموا الصّلوة و آتوا الزّكاة فخلّوا سبیلهم»
অতঃপর যদি তারা তওবা করে, নামায প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত দেয়, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও (মুক্তি দান কর)।
সূরা তওবাহ, আয়াত: ৫
আল্লাহর দরবারে দোয়া কাবুল
হাদিসে বলা হয়েছে: যে ব্যক্তি তার দোয়া কবুল করতে চায়, সে তার খাদ্যকে হালাল করে এবং খাদ্যকে হালাল করার অন্যতম উপায় হল খুমস ও যাকাত প্রদান করার মাধ্যমে আল্লাহর হক আদায় করা।
আল্লাহর দরবারে নামাজ কাবুল
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা নিজ সম্পদের যাকাত দাও যাতে তোমাদের নামাজ কবুল হয়।
«زكّوا اموالكم تقبل صلاتكم»
সম্পত্তির স্থায়ীত্ব
যাকাত প্রকৃতপক্ষে কেয়ামতের জন্য সংরক্ষণ করা হয়, তাই এটি নশ্বর সম্পদকে চিরস্থায়ী করে তোলে। জাকাত প্রদানের মাধ্যমে বিশ্বের সম্ভাব্য, অস্থায়ী এবং ঝামেলাপূর্ণ সাফল্যগুলিকে নিশ্চিত, স্থায়ী এবং ঝামেলামুক্ত সাফল্যে পরিণত করা যায়।