ইকনা সূত্রে: আল-মায়াদিনে বিশ্লেষক আহমদ আব্দুর রহমান লেখেন: উনিশ শতকের শেষভাগে যখন ছিলো সায়োনিস্ট আন্দোলনের সূচনা, তখন থেকে আজ পর্যন্ত এমন কল্পনাবিলাসী নেতা আর কেউ দেখা যায়নি, যেমনটি আজকের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রিত্বের রেকর্ড গড়ে তিনি এতে গর্ববোধ করেন।
তবে হের্ৎজেল, জাবোটিনস্কি, বেন গুরিয়ন, গোল্ডা মেয়ার, রাবিন, পেরেজ প্রমুখ পুরোনো নেতারাও যথেষ্ট উগ্র এবং মানবাধিকারবিরোধী মনোভাব পোষণ করতেন, কিন্তু তারা নেতানিয়াহুর ধারে কাছেও আসতে পারেননি। কারণ নেতানিয়াহু মূলত নিজের স্বার্থে সবকিছু করছেন, এবং নিজের উদ্দেশ্য অর্জনে কোনো সীমানা মানছেন না। এই কারণেই তার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির মামলা চলছে।
নেতানিয়াহু এখন "নীল থেকে ইউফ্রেটিস" পর্যন্ত বিস্তৃত তথাকথিত "বড় ইসরাইল" গঠনের স্বপ্ন দেখছেন, যা আগের নেতারা কখনো বাস্তবে রূপ দিতে পারেননি। আগের যেসব নেতা আশপাশের আরব দেশগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে ওই অঞ্চলে দখলদারি কায়েম করতে চেয়েছিলেন, তারা অন্তত এটিকে নিজের রাষ্ট্রের নিরাপত্তার অংশ বলে দাবি করতেন।
কিন্তু নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন কট্টরপন্থী জোট এখন পুরো অঞ্চলজুড়ে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। এমন এক মানসিক অবস্থায় পৌঁছেছে ইসরায়েল, যা পূর্বে কখনো দেখা যায়নি। বর্তমান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়িসরায়েল কাতজ বলেছেন, ইসরায়েল এখন দূর ও নিকট শত্রুদের "শাস্তি" দিচ্ছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক চিত্র নিজের স্বার্থে পাল্টে দিচ্ছে। তাদের এই প্রচেষ্টা আমেরিকাসহ তথাকথিত "অশুভ জোট" দ্বারা পূর্ণ সমর্থন পাচ্ছে।
এই "বড় ইসরাইল" পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ইসরায়েল, আমেরিকার সহায়তায়, একাধিক ফ্রন্টে হামলা চালাচ্ছে— গাজা ও পশ্চিম তীর, লেবানন, ইয়েমেন, ইরাক এবং শেষমেশ ইরানের বিরুদ্ধে ১২ দিনের যুদ্ধ পর্যন্ত।
এইসব যুদ্ধে ইসরায়েল তার সর্বোচ্চ সামরিক শক্তি ব্যবহার করেছে অনেক আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন ভেঙে, অসামরিক মানুষদের হত্যা করে এবং একের পর এক গণহত্যা চালিয়ে। কিন্তু বাস্তবে এই সব হামলার লক্ষ্যগুলো পূরণ হয়নি। বরং এইসব কর্মকাণ্ডে ইসরায়েলের দুর্বলতা ফুটে উঠেছে।
বিশেষ করে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময়, ইসরায়েল এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিল যে, তাদের বহু সামরিক, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যায়। এবং এর বেশিরভাগ ক্ষয়ক্ষতি এখনো ইসরায়েল সেন্সর করে রেখেছে। নেতানিয়াহু বুঝতে পেরেছেন, তারা যে প্রতিরক্ষা গঠনে এত বছর ব্যয় করেছেন, তা ইরানের প্রবল প্রতিক্রিয়ার মুখে টিকতে পারেনি।
এই যুদ্ধে ইসরায়েল তাদের সবচেয়ে বড় মিত্র আমেরিকার কাছ থেকে সরাসরি সহায়তা চেয়েছিল, যা তাদের শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করে।
ইয়েমেনেও ইসরায়েলের কৌশল ব্যর্থ হয়েছে। ইয়েমেনের বন্দর, বিমানবন্দর ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হামলা চালিয়েও তারা ইয়েমেনিদের গাজা সমর্থন থেকে বিরত রাখতে পারেনি। বরং ইয়েমেনি হুথি যোদ্ধারা নিয়মিতই ইসরায়েলি স্ট্র্যাটেজিক টার্গেটে আঘাত করছে, যা আমেরিকা ও ব্রিটেনের সকল পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করে দিয়েছে।
লেবাননে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফলও দেখিয়েছে, হিজবুল্লাহর ওপর ইসরায়েলের চাপে কোনো ফল আসেনি। উত্তরের শহরগুলো এখনো পরিত্যক্ত এবং ইসরায়েলবাসীদের সেখানে ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি।
গাজা ও পশ্চিম তীরে যুদ্ধ অব্যাহত আছে। এখন পর্যন্ত শহীদ ৬০ হাজারের বেশি এবং আহত ১২০ হাজারেরও বেশি। কিন্তু এত বড় ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়ে ইসরায়েল খুব সামান্য কিছু অর্জন করেছে। পুরো শক্তি নিয়োগ করেও গাজা দখল করা সম্ভব হয়নি।
গাজার প্রতিরোধ এখনো জোরালো, এবং অনেক ক্ষেত্রেই সফলতা অর্জন করছে, যা অনেকেই অসম্ভব বলে মনে করেছিলেন।
পশ্চিম তীরেও, যেমন— জেনিন, তুলকারেম ও নাবলুসে ইসরায়েলি দখলদারিত্ব জোরদার করা হলেও, প্রতিরোধের আগুন এখনো জ্বলছে এবং আশ্চর্যজনক হামলা অব্যাহত রয়েছে।
উপরের সব তথ্যই এই সত্যকে প্রমাণ করে যে, তথাকথিত "বড় ইসরাইল" গঠনের প্রচেষ্টা মূলত একটি কল্পনাপ্রসূত প্রচার, বাস্তবতা নয়। এসব দাবি আসলে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক ব্যর্থতাগুলিকে আড়াল করার অপচেষ্টা মাত্র— এমনটাই বলছেন ইসরায়েলি বিশ্লেষকরাও। 4296766#