IQNA

ইরানের সর্বোচ্চ নেতার ভাষ্যে পশ্চিমা বিশ্বের আসল উদ্দেশ্য

21:20 - July 30, 2025
সংবাদ: 3477794
ইকনা-  ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ আলী খামেনেয়ীর সাম্প্রতিক বক্তব্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো গুরুত্বসহ প্রকাশ করেছে। তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, "পারমাণবিক কর্মসূচি, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ এবং মানবাধিকার—এগুলো সবই অজুহাত। পশ্চিম আসলে চায় তোমাদের ধর্ম ও জ্ঞানকে ধ্বংস করতে।"

ইরানের ওপর ইসরায়েলি দখলদারদের চাপিয়ে দেওয়া ১২ দিনের যুদ্ধে শহীদদের স্মরণে গতকাল (২৯ জুলাই) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান গঠিত হয়েছে ‘ধর্ম’ এবং ‘জ্ঞান’-এর ভিত্তিতে। এই দুই মূল ভিত্তি হচ্ছে ইসলামি ব্যবস্থার রূপরেখার কেন্দ্রবিন্দু, যা জনগণের বিশ্বাস এবং যুবসমাজের জ্ঞানের বিকাশকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এই শক্তি আজ বহুবার শত্রুকে পিছু হটতে বাধ্য করেছে—ভবিষ্যতেও তা-ই হবে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ—বিশেষত অপরাধী আমেরিকা—আসলে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের ধর্মীয় বিশ্বাস ও জ্ঞানভিত্তিক বিকাশকে মেনে নিতে পারে না। তারা আমাদের ধর্মবিশ্বাসে বিরক্ত, তারা জনগণের এই ব্যাপক ঈমান ও ঐক্যের ওপর অসন্তুষ্ট, তারা ভয় পায় ইসলাম ও কুরআনের ছায়ায় গড়ে ওঠা এই জাতির উন্নতিতে।

তিনি আরও বলেন, ইসলামী বিপ্লবের পর জনসংখ্যা দ্বিগুণ হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ গুণ বা তার বেশি বেড়েছে—এটাই তাদের জন্য অস্বস্তিকর। ইরান যখন বিভিন্ন খাতে—মানবিক জ্ঞান, কারিগরি শিক্ষা কিংবা ধর্মীয় জ্ঞানে—নতুন চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরছে, সেটাই পশ্চিমা শক্তিগুলোর আসল আপত্তির জায়গা।

তারা যা কিছু বলে—হোক সেটা পরমাণু কর্মসূচি, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বা মানবাধিকার—সবই বাহানা মাত্র। মূল বিষয়টি হল, তারা ইসলামি প্রজাতন্ত্রের মূল চরিত্রের বিরোধী।

আসল সমস্যা ইসলামি শাসনব্যবস্থার অস্তিত্ব

এই বক্তব্য আবারও তুলে ধরেছে পশ্চিমা বিশ্ব—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের—ইরানবিরোধী অবস্থানের প্রকৃত রূপ। বহুবার যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা ইরানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনেছে, যেমন: পারমাণবিক সক্ষমতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং তথাকথিত সন্ত্রাসে সমর্থন। কিন্তু এসব আসলে ইসলামি ব্যবস্থার মূল অস্তিত্বকে আঘাত করার ছল মাত্র।

এছাড়া পশ্চিমারা নিজস্ব দ্বিমুখী নীতিমালার মাধ্যমে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে একরকম আচরণ করে, আর ইরানের সঙ্গে আরেকরকম। তারা বারবার অজুহাত তৈরি করে ইরানকে চাপে ফেলতে চেয়েছে, এমনকি সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকিও দিয়েছে। এতে পরিষ্কার বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ত্রয়ী এবং ইসরায়েল—এই সবাই ইসলামী প্রজাতন্ত্রের মূল কাঠামো ও আদর্শিক অবস্থান সহ্য করতে পারে না।

পশ্চিমা থিঙ্কট্যাংকগুলোর প্রতিক্রিয়া

খামেনেয়ীর এই বক্তব্য পশ্চিমা গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস-ঘনিষ্ঠ থিঙ্কট্যাংক 'ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্র্যাসিস (FDD)' এক বিশ্লেষণে জানিয়েছে, “পশ্চিমারা পারমাণবিক ইস্যুকে ইরানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে বলে অভিযোগ এনেছেন আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী। এই বক্তব্য ইঙ্গিত করে যে, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করবে না, বরং আঞ্চলিক প্রতিরোধ অক্ষকে সমর্থন অব্যাহত রাখবে এবং পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি পুনর্গঠনের পথে অটল থাকবে। তাদের মতে, ইসরায়েলি আগ্রাসনের ১২ দিনের যুদ্ধে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের নীতি ও অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসেনি।"

ইরানের চমকপ্রদ অগ্রগতি ও আত্মনির্ভরতা

ইসলামি বিপ্লবের পর ৪ দশকে ইরান স্বয়ংসম্পূর্ণতা ও প্রযুক্তিগত স্বাধীনতা অর্জনে যুগান্তকারী সাফল্য এনেছে। তেল, গ্যাস, পেট্রোকেমিক্যাল ও ভারী শিল্পসহ নানা খাতে বৈদেশিক নির্ভরতা হ্রাস পেয়েছে।

ইরানের তরুণ গবেষক ও বিজ্ঞানীরা ন্যানো টেকনোলজি, স্টেম সেল ও মহাকাশ প্রযুক্তির মতো জটিল ও উচ্চতর ক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। একইসঙ্গে ইরানের বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংখ্যাও ব্যাপক হারে বেড়েছে।

বিপ্লবের আগে যেখানে মাত্র ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল, আজ তা বেড়ে ২,৬৪০টির বেশি। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১.৫ লাখ থেকে বেড়ে ৪২ লাখ হয়েছে।

পশ্চিম কেন ভীত?

বিশ্বজুড়ে ইরান বিজ্ঞান চর্চা, গবেষণা, গবেষণাপত্র, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে এক উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছেছে। ইরানের নেতৃত্বে "প্রতিরোধ অক্ষ" (ইয়েমেন, লেবানন, সিরিয়া, ইরাক) পশ্চিমা আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করছে। ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র, পারমাণবিক প্রযুক্তিতে ইরানের সাফল্য পশ্চিমাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।   

ঈমান ও জ্ঞানের শক্তিই আসল যুদ্ধক্ষেত্র

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্বের মূল বিরোধিতা পারমাণবিক কর্মসূচি নয়, বরং এই জাতির ঈমান, ঐক্য ও জ্ঞানের বিকাশের বিরুদ্ধে। খামেনেয়ীর বক্তব্যে আবারও তা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হলো। ইসলামী ইরান কোনো বাহ্যিক চাপে থেমে যাবে না—বরং ধর্ম ও জ্ঞানের ওপর নির্ভর করেই নিজেদের গন্তব্যের দিকে আরও দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যাবে।#পার্সটুডে

captcha