IQNA

গাজায় খাবারের জন্য মায়েদের যুদ্ধ

13:27 - August 17, 2025
সংবাদ: 3477898
ইকনা- গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার তৃতীয় বছর চলছে। সেখানে দুর্ভিক্ষের চরম শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গাজার ২০ লাখের বেশি মানুষ এখন ক্ষুধা ও মৃত্যুর মুখোমুখি। ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে গাজার মায়েরা এক অন্তহীন সংগ্রামের মুখোমুখি হয়েছে।
তাঁরা এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও পরিবারের জন্য খাবার সংগ্রহ করছেন এবং তাদের জীবন রক্ষায় ভূমিকা রাখছেন। ইসরায়েলের কঠোর নীতির কারণে গাজা উপত্যকায় খুব সামান্য খাদ্যসামগ্রীই প্রবেশ করছে। গাজার মায়েরা মসলাযুক্ত উপাদেয় খাবারের পরিবর্তে কোনো রকম ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা করছেন।
বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত একটি বাড়িতে কাজ করছেন ৫০ বছর বয়সী উম্মে মুহাম্মদ।
 
 
তিনি কিছু একটা তৈরি করছেন। পাশে কয়েকজন ক্ষুধার্ত শিশু খাবারের জন্য অপেক্ষা করছে। তিনি বলেন, দেখতে ময়দার মতো হলেও এটা আটা বা ময়দা নয়। এটা হলো মসুর ডালের গুঁড়ি (বেসন)।
 
এটা দিয়েই তিনি রুটি তৈরি করবেন ছোট নাতি-পুতির জন্য। যদিও এর রং সাদা নয় এবং স্বাদ রুটির মতো নয়, তবু এটা দিয়েই তাঁরা রুটি বানিয়ে খাচ্ছেন। আগে কখনো তারা আটা ছাড়া অন্য কিছুর রুটি না খেলেও এখন তারা তা খেতে নিরুপায়। তাঁর নাতিরা পাস্তা খেতে পছন্দ করে। কিন্তু গাজায় পাস্তা পাওয়া যায় না এবং কখনোসখনো পাওয়া গেলেও তার মূল্য অতিউচ্চ।
 
বেসনের শক্ত রুটি খেয়েই শিশুদের দিন কাটছে। অনেক সময় তাদের জন্য এই রুটিরও ব্যবস্থা করতে পারেন না।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা গাজার পরিস্থিতিকে মানবিক বিপর্যয় হিসেবে সতর্ক করেছেন। জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তাবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজার পরিস্থিতি দুর্ভিক্ষের চেয়ে খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এই শতাব্দীতে আমরা এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি কখনো দেখিনি। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গাজার দুর্বিষহ পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘সাহায্যের প্রবাহ সমুদ্রের মতো হতে হবে। খাদ্য, পানীয়, ওষুধ ও জ্বালানি আসতে হবে বাধাহীন ঢেউয়ের মতো। তবেই এই দুঃস্বপ্নের সমাপ্তি হবে।’
 
ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) বলছে, গাজা এরই মধ্যে দুর্ভিক্ষের তিন ধাপের দুই ধাপ অতিক্রম করেছে। তা হলো তীব্র অনাহার ও তীব্র অপুষ্টি। গাজায় যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়নি। কারণ অপুষ্টির কারণে মৃত্যু সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করা কঠিন। তবে ক্রম অবনতিশীল পরিস্থিতি প্রমাণ করছে যে অনাহার, অপুষ্টি ও রোগব্যাধি ক্ষুধাজনিত মৃত্যুর হার বৃদ্ধি করছে। আর এটাই দুর্ভিক্ষের তৃতীয় ধাপ বা সূচক।
 
পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, গাজার প্রতি তিনজনে একজন মানুষ কয়েক দিন যাবৎ না খেয়ে থাকছে। গত এপ্রিল থেকে ২০ হাজারের বেশি শিশুকে তীব্র অপুষ্টির জন্য চিকিৎসা দিতে হয়েছে। গত মার্চ মাস থেকে ইসরায়েল গাজার ওপর তীব্র অবরোধ আরোপ করার পর থেকে গাজার পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েল গাজায় অত্যাবশকীয় মানবিক সাহায্যও প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।
তথ্যসূত্র : দ্য নিউ আরব
captcha