
ডেইলি সাবাহর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঐতিহাসিক কুশলাত মসজিদটি বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার অন্যতম প্রাচীন মসজিদ। এটি দ্রিনজাকা নদীর উপত্যকার ওপর, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫০০ মিটার উঁচু সবুজ শিলার উপর নির্মিত, যা দর্শনার্থীদের কাছে এক বিস্ময়কর স্থাপত্য নিদর্শন হিসেবে ধরা দেয়। পাহাড়ের ঢালে অবস্থিত হওয়ায় স্থানীয়রা একে ডাকেন "আকাশে ঝুলন্ত মসজিদ"। উচ্চ অবস্থানের কারণে মসজিদটির আরেক নাম "ঈগলের বাসা"।
১৪৬০ থেকে ১৪৮০ সালের মধ্যে, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনাকে জয়ের জন্য আসা অটোমান সেনারা এটি নির্মাণ করে। অটোমান ভ্রমণপিপাসু লেখক ঊলিয়া চেলবি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ সিয়াহাতনামা-য় এই মসজিদকে "মসজিদ আবি আল-ফাতহ" বলে উল্লেখ করেছেন, কারণ এটি সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহ-এর শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল।
এই মসজিদে পৌঁছানো সহজ নয়। ঘন জঙ্গলের ভেতর সরু পথ ধরে প্রায় আধা ঘণ্টার হাঁটার পরই একে দেখা যায়। তবে পথের কষ্টকে ছাপিয়ে যায় পাহাড়চূড়ায় দাঁড়িয়ে মসজিদ ঘেরা নয়নাভিরাম দৃশ্য। ফলে পর্যটক ও গবেষকদের কাছে এটি আধ্যাত্মিক শান্তি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনন্য মিলনস্থল।
২১ বছর বয়সি স্থানীয় তরুণ আহমেদ হুরোভিচ বলেন, "এই মসজিদ বসনিয়াবাসীর হৃদয়ে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। আমি প্রায়ই শান্তি খুঁজতে এখানে আসি।" তিনি আরও জানান, অনেক পর্যটক এই বিশেষ অনুভূতি পেতেই এখানে আসেন।
যদিও দূরবর্তী অবস্থানের কারণে দৈনিক নামাজ সবসময় হয় না, তবে রমজান মাসে বড় জমায়েত হয় এবং জুমার নামাজ আদায় করা হয়। ফলে ৫ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এর আধ্যাত্মিক ভূমিকা অটুট রয়েছে।
বসনিয়া যুদ্ধের (১৯৯২–১৯৯৫) সময় শত শত মসজিদের মতো কুশলাত মসজিদও সার্ব বাহিনীর হামলায় আগুনে পুড়ে যায়। তবে কর্তৃপক্ষ একে পুনর্নির্মাণ করে ২০১৩ সালে নামাজের জন্য পুনরায় খুলে দেয়।
আজ এটি এক ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রতীক, যা ইসলামী ঐতিহ্যের পবিত্রতাকে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের সঙ্গে একত্র করেছে। সব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এটি প্রমাণ করে বসনিয়ায় ইসলামী পরিচয় কতটা গভীরে প্রোথিত। 4306902#