
মুসলিম মিররের বরাত দিয়ে ইকনা জানায়, গত সোমবার বিহারের রাজধানী পাটনায় এক অনুষ্ঠানে ডা. নুসরাত পারভীন নামে এক মুসলিম নারীকে বিকল্প চিকিৎসা চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগপত্র দেওয়ার সময় এই ঘটনা ঘটে। ভিডিওতে দেখা যায়, মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার তার মুখ থেকে হিজাব খুলে দিচ্ছেন।
ভিডিও প্রকাশের পর সোশ্যাল মিডিয়া ও রাজনৈতিক মহলে ক্ষোভের ঢেউ উঠেছে। কংগ্রেসসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এই কর্মকাণ্ডের নিন্দা করেছে। নিতীশ কুমারের জবাবদিহি ও পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়েছে। এই ঘটনা ব্যক্তিগত মর্যাদা, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং মুসলিম নারীদের প্রতি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের আচরণ নিয়ে আবারও জনমনে আলোচনা শুরু করেছে।
এই অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের সাতটি ইসলামী সংগঠন— যার মধ্যে জামায়াতে ইসলামী হিন্দ, জামায়াতে উলামায়ে হিন্দ এবং মজলিসে উলামায়ে ইমামিয়া— কুমারের সমালোচনা করে এটিকে “হিজাব, নারীর মর্যাদা ও পবিত্রতার অপমান” বলে অভিহিত করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে: মুসলিম নারীদের জন্য হিজাব শুধু একটি কাপড় নয়; এটি তাদের ধর্মীয় পরিচয়, ব্যক্তিগত মর্যাদা এবং অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যের প্রকাশ। এই সংগঠনগুলো এই চরমপন্থী রাজনীতিবিদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদে এই ঘটনার নিন্দা করে একটি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে। এতে এই কর্মকে মানব মর্যাদা, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং নারী অধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
প্রস্তাবটি যৌথভাবে উত্থাপন করেছেন পরিষদ সদস্য রানা মুহাম্মদ আরশাদ, রাহেলা খাদিম হুসাইনসহ অন্যান্য আইনপ্রণেতা। প্রস্তাবে এটিকে লজ্জাজনক ঘটনা বলে তীব্র নিন্দা করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, ক্ষমতাবানদের এ ধরনের আচরণ সভ্য সমাজে অগ্রহণযোগ্য এবং সংখ্যালঘুদের প্রতি পক্ষপাতমূলক ও কর্তৃত্ববাদী মনোভাবের প্রকাশ।
জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিও নিতীশ কুমারের এই অশোভন আচরণের সমালোচকদের সাথে যোগ দিয়ে তার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন।
নিতীশ কুমারের সাথে ব্যক্তিগত পরিচয় ও সম্মানের কথা উল্লেখ করে মুফতি এই আচরণকে “চাঞ্চল্যকর” বলে অভিহিত করেছেন এবং মুসলিমদের প্রকাশ্যে অপমানের স্বাভাবিকীকরণের উদ্বেগজনক লক্ষণ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর চারপাশের লোকজনের নীরব দর্শকের ভূমিকাকে আরও ঘৃণ্য বলে অভিহিত করেছেন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর এই কর্ম নারীর মর্যাদা, স্বাধীনতা ও পরিচয়ের স্পষ্ট আক্রমণ।
সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া পরিচালক আকার প্যাটেল বলেন, সরকারি অনুষ্ঠানে একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার এমন আচরণ ভুল বার্তা দেয় যে, এ ধরনের আচরণ গ্রহণযোগ্য। এটি ভয়ের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করে, বৈষম্যকে স্বাভাবিক করে এবং সমানাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতার ভিত্তি দুর্বল করে।
তিনি এই আচরণের কঠোর নিন্দা, দায়ী ব্যক্তির জবাবদিহি এবং ভবিষ্যতে কোনো নারী যেন এ ধরনের অপমানের শিকার না হয় তার জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। অ্যামনেস্টি এটিকে নুসরাত পারভীনের ব্যক্তিগত অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন বলে মনে করে।
ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও তার মিত্ররা দীর্ঘদিন ধরে মুসলিম নারীদের হিজাব ব্যবহারের বিরোধিতা করে আসছে। ২০২২ সালে দক্ষিণের কর্ণাটক রাজ্যের তৎকালীন বিজেপি সরকার ক্লাসরুমে হিজাব নিষিদ্ধ করেছিল, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের ব্যাপক প্রতিবাদের জন্ম দেয়। একই বছর সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ এই মামলায় দ্বিধাবিভক্ত রায় দেয়। একাধিক হিন্দু সংগঠন দেশজুড়ে হিজাব নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে। 4323643#