IQNA

কুরআন ও হাদিসের শিক্ষা আমরা ইমাম জাফর সাদিকের(আ.)কাছে পেয়েছি

12:51 - July 21, 2017
সংবাদ: 2603475
১৪৮ হিজরির ২৫ শাওয়াল ইসলামের ইতিহাসে এক গভীর শোকাবহ দিন। কারণ, এই দিনে শাহাদত বরণ করেন মুসলিম বিশ্বের প্রাণপ্রিয় প্রবাদপুরুষ ইমাম আবু আব্দুল্লাহ জাফর আস সাদিক (আ.)। ইসলাম ও এর প্রকৃত শিক্ষা তাঁর কাছে চিরঋণী।

শাবিস্তানের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা ইকনা'র রিপোর্ট: ইমাম জা’ফর আস সাদিক (আ.) মুসলমানদের সব মাজহাবের কাছেই বরেণ্য ও শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব হওয়ায় তাঁর আদর্শ হতে পারে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের সূত্র। চারজন সুন্নি ইমামের মধ্যে একজন তাঁর প্রত্যক্ষ ছাত্র এবং আরো দুই জন সুন্নি ইমাম তাঁর পরোক্ষ ছাত্র ছিলেন। উল্লেখ্য শিয়া মাজহাব ইমাম জাফর সাদিক (আ) এর জ্ঞান থেকে বিরতিহীনভাবে গ্রহণ করে হৃষ্টপুষ্ট ও সমৃদ্ধ হয়েছে, যে কারণে শিয়া মাজহাব 'জাফরি মাজহাব' হিসেবেও খ্যাত।

শেইখ আব্দুর রহমান নাকশবান্দি তার ‘আল ইকদুল ওয়াহদি’ গ্রন্থে আহলে বাইতকে স্মরণ করে বলেছেন: তাঁরা হলেন আমাদের ধর্মের তরিকা, আমাদের শরীয়তের উৎস এবং সাহাবীদের মধ্যে দৃঢ়-স্তম্ভ স্বরূপ। ইসলাম তাঁদের মধ্যে আবির্ভূত ও প্রকাশিত হয়েছে।  ইসলামের ভিত্তি তাদের মাধ্যমে সুপ্রতিষ্ঠিত ও বিস্তার লাভ করছে। এ কারণেই মহানবী (সা.) বলেছেন: নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মধ্যে এমন কিছু রেখে যাচ্ছি যা তোমরা আঁকড়ে ধরলে কখনও বিপথগামী হবে না : আল্লাহর কিতাব ও আমার বংশধর আহলে বাইত। সুতরাং লক্ষ্য রাখ আমার পর কিভাবে এ দু'য়ের সাথে আচরণ করছ। তিনি আরো বলেন, দরুদ ও সালাম পড়ার সময় যে পূর্ণ মাত্রায় সাওয়াব লাভে সন্তুষ্ট হতে চায় সে যেন বলে: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলিহি, অর্থাৎ হে আল্লাহ, মুহাম্মাদ ও তাঁর বংশধরদের ওপর দরুদ বর্ষিত হোক। ইমাম শাফেয়ী থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, নামাজের শেষ রাকাতের তাশাহুদ শেষে দরুদ পড়া ওয়াজিব।

ইমাম সাদিক (আ.) রিসালাতের কোলে তথা রাসূলের বংশ-ধারায় জন্ম নেন এবং বিশ্বনবী (সা.)'র আহলে বাইতের ঘরেই বেড়ে ওঠেন। তিনি নিজ দাদা ও বনি হাশিমের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি ইমাম আলী ইবনে হুসাইন যইনুল আবেদীন (আ.) এবং পিতা ইমাম মুহাম্মাদ বাকির (আ.)-এর মাধ্যমে প্রশিক্ষিত হন। তিনি বারো বছর ধরে (অন্যান্য বর্ণনামতে ১৫ বছর বা  ১৬ বছর) দাদার সান্নিধ্য এবং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর ইমাম সাদিক (আ.) নিজ পিতা ইমাম বাকির (আ.)-এর তত্ত্বাবধানে উনিশ বছর শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং অবশেষে তাঁর মৃত্যুর পর ইমামতের মহান দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

ফিকাহ শাস্ত্র ও হাদিস বিষয়ক জ্ঞানের বিশিষ্ট ও প্রসিদ্ধ ব্যক্তিদের অনেকেই তাঁর কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। যেমন, ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ আনসারী, ইবনে জারিহ, মালিক ইবনে আনাস, সুফিয়ান সওরী, ইবনে উয়াইনা, আবু হানিফা, শোবা, আইয়ুব সাজেস্তানি ও অন্যান্যরা। তাঁরা সবাই ইমাম সাদিক (আ.)-এর ছাত্র হওয়ার কারণে গর্ব করতেন। ইমাম সাদিক (আ.)-এর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। কারণ তিনি তাঁর সময়ে শিক্ষা ও চিন্তার বিকাশ আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে তিনিই প্রথম ব্যক্তি হিসাবে ইসলামে দর্শন শাস্ত্রের প্রবর্তন করেন। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে কেবল ফিকাহ শাস্ত্রের বিভিন্ন মাজহাবের প্রতিষ্ঠাতারাই ছিলেন না বরং হিকমত ও দর্শনের অনুরাগীরাও ইসলামী বিশ্বের সকল প্রান্ত থেকে তাঁর কাছে আসতেন।
captcha