এখনো নিজ বাড়ি ফেরার স্বপ্ন দেখি এবং বাড়ির চত্বরের গমক্ষেতের গন্ধ নিতে চাই আর এটা আমার অধিকার। দীর্ঘদিন আগে ইসরায়েল আমাকে বাস্তুচ্যুত করেছে। আমি খুব শিগগির আবার ‘ফেরার মিছিলে’ (গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন) অংশ নিয়ে শৈশবের শহর আশদোদে (বর্তমান ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণাধীন) স্থিত হতে চাই এবং সেখানেই যেন আমি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করি—স্রষ্টার কাছে আমার এই মিনতি।’
এভাবেই হতাশামাখা সুরে নিজের স্বপ্নের কথাগুলো আলজাজিরাকে বলছিলেন আল হাজ্জাহ হানিয়া আল কুরদি নামের এক ফিলিস্তিনি বৃদ্ধা। আশদোদ নগরে তাঁর শৈশব কেটেছে। যৌবনে এক ফিলিস্তিনি সুদর্শনকে বিয়ে করে খুব সুখী দাম্পত্য জীবন উপভোগ করছিলেন তাঁরা। এরই মধ্যে আল্লাহ তাঁদের ঘর আলোকিত করে দুটি কন্যাসন্তান দান করেন। হঠাৎ গোটা ফিলিস্তিনিদের মতো তাঁদের জীবনও লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় ‘আন-নাকাবা’ ঝড়ে।
১৯৪৮ সালের ১৫ মে ফিলিস্তিন ভূখণ্ড থেকে সাড়ে সাত লাখের বেশি ফিলিস্তিনিকে বিতাড়িত করে ইসরায়েল নামক অবৈধ রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এ দিনকেই আন-নাকাবা বা বিপর্যয় দিবস আখ্যায়িত করা হয়। এ সময় ইহুদি সৈন্যদের আক্রমণে হানিয়া আল কুরদি তাঁর প্রিয়তম স্বামীকে হারান এবং ইহুদিদের তাণ্ডবে শহরের অন্য বাসিন্দাদের মতো তিনিও দুই কন্যা ও নিজের জীবন বাঁচাতে আশদোদের প্রিয় ভূমি ত্যাগ করেন। আশ্রয় নেন ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সীমান্তবর্তী কাঁটাতার ঘেঁষা গাজার একটি তাঁবুতে। সংগ্রাম করেই এখানে জীবনযাপন করছিলেন।
২০১৮ সালে ইসরায়েলি বাহিনী বোমা বর্ষণ করে তাদের তাঁবুতে। কোনোমতে প্রাণে বেঁচে যান তাঁরা। পরে বালু খুঁড়ে আরেকটি তাঁবু স্থাপন করেন এবং সংকল্প করেন একদিন তিনি মাতৃভূমিতে ফিরে যাবেন। তিনি যে আবার আশদোদে ফিরে যাবেন সে কথা বোঝাতে তাঁবুর ওপরে লিখে রাখেন ‘আ-ইদুন’ (পুনরায় ফিরে আসছি)।
তিনি বলেন, ‘আমি এখন কাঠের আগুনে রুটি সেঁকি এবং তা বিক্রি করেই সংসার চলে, আমার নাতিরা পাশেই চা বিক্রি করেও সংসারে সাহায্য করে। আমরা কাঁটাতারের এপাশে সংগ্রামী জীবনযাপন করি আর ওপারে আমাদের একসময়ের মাতৃভূমিকে খুব কাছ থেকে দেখি, যা আজ দখলদাররা নিজেদের উপনিবেশ কলোনি বানিয়ে ব্যবহার করছে; কিন্তু সেখানে একটু যেতে পারি না। তবে এখনো স্বপ্ন দেখি-একদিন মাতৃভূমি ফিরে পাব।’ আলজাজিরা স্টোরি অবলম্বনে