ইকনা’র বরাতে সালাম নিউজ জানায়, করোনা-পরবর্তী বছরগুলোতে বৈশ্বিক পর্যটন খাতের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির সঙ্গে মুসলিম পর্যটন বাজারও দ্রুত প্রসারিত হয়েছে। CrescentRating-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্বে মুসলিম পর্যটকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৬ মিলিয়নে, যা মহামারির আগের সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। ২০৩০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা ২৪৫ মিলিয়নে পৌঁছাতে পারে এবং তখন তারা ভ্রমণে প্রায় ২৩৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই তথ্যগুলো এই বাজারের বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তুলে ধরে।
যদিও মুসলিম পর্যটকরা বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতির, তাদের মৌলিক প্রয়োজন প্রায় একই— হালাল খাবার, পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা নামাজঘর, কিবলামুখী নামাজের ব্যবস্থা এবং ওজুর সুবিধা। এসব সুযোগ নিশ্চিত থাকলে মুসলিম ভ্রমণকারীরা সেসব গন্তব্যকে প্রাধান্য দেন যা তাদের ধর্মীয় চাহিদা পূরণ করে।
এ কারণে, ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (OIC) সদস্য নয় এমন বহু দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও মুসলিমবান্ধব অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করছে। CrescentRating বিমানবন্দর মূল্যায়নে যে বিষয়গুলোকে প্রধান মানদণ্ড হিসেবে ধরে, তার মধ্যে রয়েছে— নিরাপদ জায়গায় সহজে হালাল খাবার পাওয়া, কিবলা নির্দেশক সহ নামাজঘর, নারী-পুরুষের জন্য আলাদা স্থান, ওজুর ব্যবস্থা, সেবার মান, পরিষ্কার সাইনবোর্ড এবং বহু ভাষায় নির্দেশনা।
এই ধরনের উদ্যোগ শুধু সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতি অঙ্গীকারের পরিচয় নয়, বরং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় একটি বাড়তি সুবিধা। এমন বিমানবন্দরগুলো প্রায়শই সামাজিক মাধ্যমে বেশি ইতিবাচক সুপারিশ পায়।
মুসলিমবান্ধব শীর্ষ ১০ বিমানবন্দর (ক্রম অনুসারে নয়):
১. সুভর্ণভূমি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর – ব্যাংকক, থাইল্যান্ড
আলাদা পুরুষ ও মহিলা নামাজঘর, ওজুর স্থান, এমনকি জুমার নামাজের সুবিধা। টার্মিনাল জুড়ে হালাল সনদপ্রাপ্ত খাবারের দোকান।
২. চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর – সিঙ্গাপুর
প্রতিটি টার্মিনালে আলাদা নামাজঘর ও ওজুর ব্যবস্থা। বার্গার কিং, পোপাইস, ম্যাকডোনাল্ডস, ডেলিফ্রান্স, কফি বিন–এর মতো হালাল খাবারের দোকান।
৩. ও. আর. টাম্বো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর – জোহানেসবার্গ, দক্ষিণ আফ্রিকা
আলাদা পুরুষ-মহিলা নামাজঘর, সাপ্তাহিক জুমার নামাজ, এবং হালাল খাবারের ব্যবস্থা।
৪. হিথ্রো বিমানবন্দর – লন্ডন, যুক্তরাজ্য
প্রতিটি টার্মিনালে ২৪ ঘণ্টা খোলা নামাজঘর, জুমার নামাজের সুবিধা।
5. বন্দরনায়েকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর – কলম্বো, শ্রীলঙ্কা
ট্রানজিট হলে মুসলিমদের জন্য আলাদা নামাজঘর। ওজুর জন্য নিকটবর্তী বাথরুমে পা ধোয়ার ব্যবস্থা। হালাল খাবার ও প্যাকেটজাত স্ন্যাকস সহজলভ্য।
৬. ফ্রানৎস জোসেফ স্ট্রস বিমানবন্দর – মিউনিখ, জার্মানি
কুরআন, জায়নামাজ ও কিবলা নির্দেশকসহ নামাজঘর। টার্মিনাল ২ ও ৩–এ হালাল খাবারের দোকান।
৭. জন এফ. কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর – নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
টার্মিনাল ১ ও ৪–এ আলাদা নামাজঘর। নির্দিষ্ট ওজুর স্থান না থাকলেও নিকটস্থ বাথরুম যথেষ্ট। রমজানে ইফতারের জন্য খেজুর ও পানি সরবরাহ।
৮. মেলবোর্ন বিমানবন্দর – অস্ট্রেলিয়া
পুরুষ-মহিলা আলাদা নামাজঘর ও ওজুর ব্যবস্থা। টার্মিনাল ২ ও ৩–এ হালাল খাবারের দোকান।
৯. চেক ল্যাপ কক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর – হংকং
দুটি নামাজঘর। সীমিত হলেও একটি হালাল রেস্তোরাঁ নিকটে অবস্থিত।
১০. ম্যানচেস্টার বিমানবন্দর – যুক্তরাজ্য
২৪ ঘণ্টা খোলা নামাজঘর ও ওজুর সুবিধা। হজ মৌসুমে ইহরাম বদলের জন্য আলাদা স্থান ও অস্থায়ী নামাজঘরের ব্যবস্থা।
বর্তমান সামাজিক মাধ্যমের যুগে ছোট্ট উদ্যোগ— যেমন ইফতারে খেজুর ও পানি দেওয়া বা কিবলার দিক নির্দেশ করা— মুসলিম ভ্রমণকারীদের কাছে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে এবং তারা তা অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করে থাকে।