IQNA

'আমি মুসলিম নই, তবু প্রতিবাদ করব'

18:16 - December 16, 2019
সংবাদ: 2609843
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে সহিংস বিক্ষোভ চলছে। আর এই বিক্ষোভ চলার সময় দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ। প্রাণ বাঁচাতে শিক্ষার্থীরা গ্রন্থাগার ও ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে পড়ে। পরে অনেককেই দেখা যায় রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন।

বার্তা সংস্থা ইকনা'র রিপোর্ট: ঝাড়খণ্ডের রাঁচি থেকে আসা এক নারী শিক্ষার্থী কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন। তিনি এবং আরও অনেকেই আতঙ্কে হোস্টেল ছেড়ে যাচ্ছেন বলে জানান।

তিনি বলেন, আমরা ভেবেছিলাম শিক্ষার্থীদের জন্যে দিল্লি সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা এবং এটি একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। আমি ভেবেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ই সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা হবে, আমাদের কিছুই হবে না। আমরা সারারাত ধরে কেঁদেছিলাম, কী হচ্ছে এসব।

ক্ষুব্ধ ছাত্রীটি বলেন, আমি এই গোটা দেশে নিরাপদ বোধ করছি না। কোথায় যাব এবং কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেবো তা আমি জানি না। আগামিকাল আমার বন্ধুরা ভারতীয় থাকবে কিনা তা জানি না।

তিনি বলেন, আমি তো মুসলিম নই। তবুও আমি প্রথম দিন থেকে এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভের প্রথম সারিতে রয়েছি। কেন? আমার পরিবারের কী হয়েছে তা নিয়ে কেউ প্রশ্ন করতেই পারেন ... কিন্তু আমি মনে করি আমরা যদি সত্য়ের পাশে দাঁড়াতেই না পারি তবে আমাদের পড়াশুনা কী কাজে লাগবে", বলেন ওই ছাত্রীটি।

নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দিল্লি, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলছে প্রতিবাদ বিক্ষোভ। ওই আইনের ফলে পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতে বসবাসরত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব লাভে সুবিধা হবে।

রবিবার সন্ধ্যায় জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ মিছিল ক্রমেই সহিংস হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা ভাঙচুর চালায় ও যানবাহন জ্বালিয়ে দেয়। সেই সময়েই পুলিশ এলে তাঁদের সঙ্গেও সংঘর্ষ বাঁধে শিক্ষার্থীদের। লাঠিচার্জ করে ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে প্রায় ১০০ জন শিক্ষার্থীকে আটক করে। যদিও পরে আটক করা সব শিক্ষার্থীকেই ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ ছেড়ে দেওয়া হয়।

ওই শিক্ষার্থী বলেন,এই ঝামেলা শুরু হওয়ার সময় আমরা লাইব্রেরিতে ছিলাম; সুপারভাইজারের কাছ থেকে আমরা ফোন পাই যে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। আমি সবে বেরোতে যাব, তখনই একটি ভিড় গ্রন্থাগারের দিকে ছুটে আসে এবং ৩০ মিনিটের মধ্যে গ্রন্থাগার চত্বর ভরে যায়।

তিনি বলেন, আমি কিছু ছেলেকে রক্তাক্ত অবস্থায় ​​দেখতে পাই। সেই সময়েই পুলিশ ভেতরে এসে গালিগালাজ করতে শুরু করে। তারা সবাইকে সরে যেতে বলছিলেন।

ওই ছাত্রী বলেন, আমরা হাত ওপরে তুলে ধরে যাচ্ছিলাম। অবশেষে আমি আমার হোস্টেলে পৌঁছাই। তখনই কিছু ছেলে ছুটে এসে আমাদের হোস্টেলে খবর দেয় যে কিছু নারী পুলিশ আমাদের মারধর করতে আসছে। আমি তখন পাশের ঝোপের দিকে ছুটে যাই ও সেখানে লুকিয়ে পড়ি। তারপরে আমি আমার হোস্টেলে ফিরে আসি। আমি আরও অনেক ছেলেকে দেখি যাঁদের পোশাক রক্তাক্ত ​​ছিল।

ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের চিফ প্রক্টর ওয়াসিম আহমেদ খান বলেন,কোনও আগাম অনুমতি না নিয়েই পুলিশ জোর করে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। আমাদের কর্মী ও শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয় এবং ক্যাম্পাস ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়।

উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা চিন্ময় বিসওয়াল এনডিটিভিকে জানান, উন্মত্ত জনতা পাথর ছুঁড়তে শুরু করলেই পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে।

তিনি বলেন, আমরা কোথা থেকে এই হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড চলছে তা খতিয়ে দেখতেই সেখানে প্রবেশ করি।

সূত্র : এনডিটিভি/ kalerkantho

captcha