IQNA

পাশ্চাত্য ও ইসরাইল চায় না মুসলিম বিশ্ব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে প্রকৃত উন্নতি ও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করুক

11:24 - November 30, 2020
সংবাদ: 2611890
তেহরান (ইকনা): ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন্ ! মিনাল মু'মিনীনা রিজালুন সদাক্বূ মা আহাদুল্লাহা আলাইহি ফামিনহুম মান ক্বদ্বা নাহবাহু ওয়া মিনহুম মাঁই ইয়ানতাযির্ ওয়া মা বাদ্দালূ তাবদীলা । মুমিনদের মধ্যে কতিপয় ব্যক্তি আল্লাহর সাথে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছেন , তাদের কেউ কেউ শাহাদাত বরণ করেছেন এবং কেউ কেউ ( শাহাদাত বরণের ) প্রতীক্ষায় রয়েছেন ; তাঁরা নিজেদের অঙ্গীকারে কোনো পরিবর্তন করে নি । ( সূরা- ই আহযাব : ২৩ )

পাশ্চাত্য ও ইসরাইল চায় না মুসলিম বিশ্ব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে প্রকৃত উন্নতি ও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করুকশুক্রবার ( ২৭ /১১/২০২০ ) ইরানের প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী , ইরানী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবন (ইনোভেশন) সংস্থা প্রধান , ইসলামী বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর ইমাম হুসাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরমাণু পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও উপ প্রতিরক্ষামন্ত্রী ড : মুহসিন ফাখরীযদেহ মাহাবাদী তেহরানের কাছে দামাভান্দ অঞ্চলের অবসার্দে সন্ত্রাসী জায়নবাদী রাষ্ট্র ইসরাইলের সন্ত্রাসী সিক্রেট সার্ভিসের এজেন্ট দের এক সন্ত্রাসী হামলায় শাহাদাত বরণ করেছেন । তাঁকে ইরানের পরমাণু প্রযুক্তির জনক বলা হয় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে তিনি ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ৫০০ বিজ্ঞানীর একজন এবং দীর্ঘ দিন ধরে তিনি ছিলেন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র ইসরাইলের গোয়েন্দা ও সিক্রেট সার্ভিসের টার্গেট পার্সন যার সম্পর্কে ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২০১৮ সালে নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম চলাকালে এক অনুষ্ঠানে স্পষ্ট বলেছিল : Remember Fakhrizadeh ( আপনারা সবাই স্মরণে রাখুন ফাখরীযদেহকে ) । এর আগেও ইসরাইল তাঁকে হত্যা করার বহু চেষ্টা করেছিল। এই শহীদ পরমাণু বিজ্ঞানী গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক , চিকিৎসা , অণু জীববিজ্ঞান , উলূম - ই শেনখ্তী ( Cognitive Science Studies ) ও প্রতিরক্ষা সংশ্লিষ্ট বৈজ্ঞানিক কারিগরী ও প্রযুক্তিগত গবেষণায় রত ছিলেন এবং এ সব ক্ষেত্রে অসংখ্য বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীকে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলেছেন । তিনি ১৯৬১ সালে ইরানের পবিত্র কোম নগরীতে জন্ম গ্রহণ করেন ।
তাঁর গবেষণা কর্ম সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে লেইযার টেকনোলজি ( বিশেষকরে বন্দরসমূহের কাস্টমসের বৃহৎ এক্স রে মেশিন উদ্ভাবন ও তার শিল্পোৎপাদন ) ও এয়ার ডিফেন্সের রাডার সিস্টেম সংক্রান্ত মৌলিক গবেষণা ও অবদান , শত্রুর পারমাণবিক ও রাসায়নিক হামলা নিষ্ক্রিয় করণ সংক্রান্ত শান্তিপূর্ণ বেসামরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলায় তার মৌলিক গবেষণা ও অবদান । এ ছাড়া তাঁর বৈজ্ঞানিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে করোনা ভাইরাস শনাক্ত করার টেস্ট কিট উদ্ভাবন এবং তা ব্যাপক শিল্পোৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে এবং করোনা ভ্যাক্সিন উদ্ভাবন ও বর্তমানে তা হিউম্যান ট্রায়ালের পর্যায়ে উপনীত হয়েছে এবং অতি শীঘ্রই ভ্যাক্সিনের হিউম্যান ট্রায়াল শুরু হতে যাচ্ছে । তাই শহীদ ড: মুহসিন ফাখরীযাদেহ ছিলেন বহুমুখী বৈজ্ঞানিক প্রতিভা ও দক্ষতার অধিকারী । তিনি তাঁর তিন দশকেরও অধিক কাল যাবৎ বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত গবেষণার মাধ্যমে ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও শিল্পের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অনস্বীকার্য অবদান রেখেছেন ও মৌলিক খিদমত আঞ্জাম দিয়েছেন । তাই তো তিনি ছিলেন শহীদ সর্দার ( জেনারেল ) ক্বাসেম সুলাইমানীর মতো ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর দুশমন পাশ্চাত্য বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , ব্রিটেন , ইসরাইল ও ফ্রান্সের মতো সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তি সমূহের চক্ষুশূল এবং অবশেষে এই জালিম সাম্রাজ্যবাদী পাশ্চাত্য বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল যৌথ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাঁকে গতকাল ৭ অযার ১৩৯৯ মোতাবেক ২৭ নভেম্বর ২০২০ রোজ শুক্রবার অপরাহ্নে শহীদ করে আত্মতুষ্টি ও আত্মপ্রসাদ লাভ করেছে বলে মনে করছে । কিন্তু অচিরেই আল্লাহ পাক তাদের এ হর্ষোৎফুল্লতাকে বিষাদে পরিণত করে দেবেন।


وَ سَیَعْلَمُ الَّذِیْنَ ظَلَمُوْا أَيَّ مُنْقَلَبٍ یَّنْقَلِبُوْنَ


সায়া'লামুল্লাযীনা যালামূ আইয়া মুনক্বালাবিঁ ইয়ানক্বালিবূন্
যারা জুলুম ( অন্যায় ) করেছে তারা ( অর্থাৎ জালিমরা ) শীঘ্রই জানবে তাদের গন্তব্য স্থল কোথায় ? ( সূরা - ই শু'আরা : ২২৭ ) ।
রাষ্ট্র পরিচালিত সন্ত্রাসবাদের হোতা অপরাধী ইসরাইল ও পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদ গত দশ বছরে ( ২০১০ থেকে ২০২০ ) ইরানের আরো পাঁচ শীর্ষস্থানীয় পরমাণু বিজ্ঞানীকে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে শহীদ করেছে যাঁরা ছিলেন ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের পরমাণু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির স্থপতি ও পথিকৃত । উল্লেখ্য ঠিক দশ বছর আগে
৮ অযার ১৩৮৯ মোতাবেক ২৮ নভেম্বর ২০১০ ইরানের প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী প্রফেসর ড: মজীদ শাহরিয়ারীকে ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এবং বারাক ওবামার ডেমোক্র্যাট সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা সি আই এর এজেন্টদের সন্ত্রাসী হামলায় শহীদ হন । স্মর্তব্য যে ইসরাইলের মোসাদ মিসরের বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় পরমাণু বিজ্ঞানীকে গোপনে হত্যা ও শহীদ করেছিল । যেমন : মিসরের ড: সামীরা মূসা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে১৯৫২ ) , ড: সামীর নাগীব (ডেট্রয়টে ১৯৬৭), সাঈদ আল বুদাইর (আলেকজান্দ্রিয়া , মিসর ১৯৮৯) , ইয়াহইয়া আল মুশাদ (প্যারিসে ১৯৮০ সালে) , রমাদান (মরোক্কোয়) । এ ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ২০০৩ সালে ইরাক জবর দখল করার পর ইসরাইলের মোসাদের হাতে বহু ইরাকী পরমাণু বিজ্ঞানীও শহীদ হয়েছেন ।
আসলে পাশ্চাত্য ও ইসরাইল চায় না মুসলিম বিশ্ব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে প্রকৃত উন্নতি ও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করুক । আর সেজন্য বিশেষ করে আরব ও ইরানী মুসলিম বিজ্ঞানীদেরকে টার্গেট কিলিং করা হয় । আর বর্তমানে পাশ্চাত্য বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইরানের প্রভাবশালী বিজ্ঞানীদের হত্যা করার উপর জুম করেছে তার প্রমাণ হচ্ছে ড: মুহসিন ফাখরীযদেহর শাহাদাত । মুসলিম উম্মাহর উচিত মিসর , ইরান - ইরাক সহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের শহীদ পরমাণু বিজ্ঞানীদের শাহাদাতের স্মরণে বিশ্ব শহীদ পরমাণু বিজ্ঞানী দিবস পালন করা ।
যারা আল্লাহর পথে নিহত হন তাঁদেরকে তোমরা অবশ্যই মৃত ভাববে না বরং তাঁরা তাঁদের প্রভুর কাছে জীবিত এবং রিয্ক ও রুযী ( জীবিকা ) প্রাপ্ত । (সূরা - ই আল - ই ইমরান : ১৬৯)
শহীদ ড : মুহসিন ফাখরীযদেহ মাহাবাদী ছিলেন বিপ্লবী , মুতাদাইয়েন (ধার্মিক) মুত্তাকী পরহেযগার মুজাহিদ নিবেদিত প্রাণ মুমিন মুসলিম বিজ্ঞানী । মহান আল্লাহ তাঁকে তাঁর দীর্ঘ ৪ দশকের জিহাদ ও সাধনার সর্বোচ্চ পুরস্কার শাহাদাতের মর্য্যাদা দান করেছেন । তাঁর জন্য শাহাদাত শুভ হোক (হানিয়ান্ লাহুশ শাহাদাহ) এবং তাঁকে মহান আল্লাহ সাইয়েদুশ শুহাদা (শহীদদের নেতা) ইমাম হুসাইন (আ:) , শাহীদানে কারবালা এবং সকল যুগের শহীদদের সাথে কিয়ামত দিবসে পুনরুত্থিত করুন ।
লেখক: হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান

captcha