 
                          
মসজিদের শিলালিপি থেকে জানা যায়, ১৫৮১ খ্রিস্টাব্দে মাসুম খাঁ কাবলি নামে সম্রাট আকবর একজন সেনাপতি মসজিদটি নির্মাণ করেন। তাতে লেখা আছে, ‘বিশাল এই মসজিদ বিখ্যাত সুলতান, সৈয়দ বংশীয় প্রধান সৈয়দ আবুল ফতে মুহাম্মদ মাসুম খানের সময় নির্মিত হয়। কাকশাল গোত্রের সন্তান খান মুহাম্মদ তুর্কি খান ৯৮৯ হিজরি অর্থাৎ ১৫৮১ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি নির্মাণ করেন।’ শিলালিপির ভাষ্য থেকে ধারণা হয়, মাসুম খাঁ দিল্লির আনুগত্য থেকে বের হয়ে এসে স্বাধীন সালতানাত ঘোষণা করেন এবং ‘খান মুহাম্মদ তুর্কি খান’ উপাধি ধারণ করেন। শিলালিপিটি রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।
মাসুম খান ছিলেন সম্রাট আকবরের অনুজ মির্জা মুহম্মদ হাকিমের দুধভাই। তিনি ১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দে খোরাসানের কাকশাল গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে ২০ বছর বয়সী যুবক মাসুম খান ‘কালা পাহাড়’ নামে একজন বাঙালি সেনাপতিকে যুদ্ধে পরাজিত করে স্বীকৃতিস্বরূপ পাঁচ হাজার সৈন্যের সেনাপতি পদে দায়িত্ব পান। কিন্তু ১৫৭৯ সালে তিনি নিজেই বারো ভূঁইয়াদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে চাকরি ছেড়ে দেন এবং কিছু সময়ের জন্য পাবনা অঞ্চলে চাটমোহরকেন্দ্রিক একটি রাজ্য গড়ে তোলেন। ১০০৭ হিজরি অর্থাৎ ১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দে ৪৪ বছর বয়সে সম্রাটের ফৌজি বাহিনীর হাতে মৃত্যুবরণ করেন মাসুম খান। চাটমোহরে স্বাধীন ক্ষমতা পরিচালনার সময় শাহি মসজিদটি নির্মাণ করা হয়।
মসজিদটির ভেতরে দৈর্ঘ্য ৩৪ হাত, প্রস্থ ১৫ হাত, উচ্চতা প্রায় ৩০ হাত বা প্রায় ৪৫ ফুট। ক্ষুদ্র পাতলা নকশাখচিত লাল জাফরি ইটে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। উপরিভাগে তিনটি গম্বুজ এবং সম্মুখভাগে তিনটি খিলান আকৃতির গেট রয়েছে ও পশ্চিম পাশে একই রকম খিলান আকৃতির আরো দুটি গেট আছে। মসজিদের অভ্যন্তরে ছোট ছোট চারটি কুলুঙ্গি আছে। মসজিদের স্থাপত্যরীতিতে প্রাচীন পারস্যের সাসনীয় স্থাপত্যের প্রভাব আছে। একসময় মসজিদটি ধবংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। আশির দশকে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটির সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করে। বর্তমানে এটি একটি সংরক্ষিত ইমারত।