IQNA

কুরবানী সংক্রান্ত কিছু প্রাসঙ্গিক কথা :

কুরবানীর হুকুম কী এবং কারা কুরবানী করবে ?

18:18 - July 22, 2021
সংবাদ: 3470364
তেহরান (ইকনা): কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে উলামা-ই কিরামের মাঝে ইখতিলাফ (মত পার্থক্য) আছে অর্থাৎ কুরবানী কি ওয়াজিব না এটা সুন্নাত?

ইমাম মালিক ও ইমাম শাফিঈর  অভিমত ( রায় ) হচ্ছে যে কুরবানী করা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। (দ্র : আল-উম্ম্  , ২ : ৩৪৫ ; ইবনে মানযূর প্রণীত আল - ইকনা', ১ : ৩৮৯ )।

 

ইমাম মালিক মুআত্তায় বলেছেন : কুরবানী করা সুন্নাত (মুয়াক্কাদা); ইহা ওয়াজিব নহে। যে কুরবানী ক্রয় করিতে সামর্থ্য রাখে, তাহার পক্ষে কুরবানী না করা আমি পছন্দ করি না। (দ্র : মুয়াত্তা-ই -ইমাম মালিক  ( র ), খ : ২ , পৃ : ৮০ , মুহম্মদ রিজাউল করীম ইসলামাবাদী অনূদিত , ৩য় সংস্করণ , ২০০১ , প্রকাশক : মোহাম্মদ আবদুর রব , পরিচালক , প্রকাশনা বিভাগ , ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ , ঢাকা )

 

আর জাফারী ফিকহের অনুসারী বারো ইমামী শিয়া মাযহাব ঐকমত্য পোষণ (ইজমা') করেছে যে কুরবানী করা মুস্তাহাব্ব-ই মুআক্কাদ (তাকিদ অর্থাৎ জোর গুরুত্ববহ মুস্তাহাব) বরং ইসলামী শরিয়তে কুরবানী জায়েয হওয়া ইসলাম ধর্মের জরুরী (অপরিহার্য) বিষয়াদির অন্তর্ভূক্ত।

 

অত:পর আপনার প্রভুর উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কুরবানী ( নহর نحر ) করুন ( فَصَلِّ لِرَبِّکَ وَ انْحَرْ ) -- সূরা কাওসারের এ আয়াতটি কুরবানীর বৈধতা এবং তা মুস্তাহাব্ব-ই মুআক্কাদ হওয়ার শ্রেষ্ঠ দলীল। আর কতিপয় মুফাস্সিরের মতে এ আয়াতটিতে নহরের ( نَحْر ) অর্থ হচ্ছে ঈদের নামাযের পর কুরবানীর পশু নহর (যবেহ ও কুরবানী) করা। আর কুরবানী জায়েয হওয়া সংক্রান্ত হাদীস ও রিওয়ায়ত সমূহ মুস্তাফীয্ বরং মুতাওয়াতির; যেমন: ইমাম আবূ জাফার ( আ:) বলেন :

 

اَلْأَضْحِیَّۃُ وَاجِبَۃٌعَلَیٰ مَنْ وَجَدَ مِنْ صَغِیْرٍ أَوْ کَبِیْرٍ وَ ھِیَ سُنَّۃٌ.

 

ছোট বড় যা হোক না কেন যে ব্যক্তি কুরবানীর পশু পাবে তার উপর তা কুরবানী করা ওয়াজিব হবে ; তবে এটা (কুরবানী করা) হচ্ছে সুন্নাত ( অর্থাৎ যেহেতু হাদীসের শুরুতে ওয়াজিব শব্দটি এসেছে কিন্তু হাদীসের শেষে সুন্নাত শব্দটি উল্লেখিত হয়েছে সেহেতু ওয়াজিব ও সুন্নাত এ শব্দদ্বয়ের সমম্বয়ে সুন্নাত শব্দের অর্থ দাঁড়ায় মুআক্কাদ সুন্নাত  বা জোর গুরুত্ববহ সুন্নাত)।

 

আর ইমাম মালিক (র) মিনায় হাজীকে (হজ্জ পালনরত ব্যক্তি) কুরবানী ত্যাগ করার রুখসত (ছাড় বা অনুমতি) দিয়েছেন (দ্র: আত - তাফরী' :  ১ , ৩৮৯ ; আন - নাওয়াদির ওয়ায যিয়াদাত , ৪ : ৩১০ ; আল - কাফী ফী ফিকহি আহলিল মাদীনাহ্ : ১৭৩)।

 আর এ ব্যাপারে ইমাম শাফিঈ হাজী ও যে ব্যক্তি হাজী নয় তার মাঝে পার্থক্য করেন নি। কিন্তু ইমাম আবু হানিফা বলেছেন: শহরাঞ্চলের স্বচ্ছল বাসিন্দাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব। তবে মুসাফিরদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় (দ্র : সারাখসী প্রণীত আল - মাবসূত , ১০ : ১২ ; তুহফাতুল ফুকাহা , ৩ : ৮১ ; মারগীনানী প্রণীত আল - হিদায়াহ ৪: ৪০৩)।

 

আর ইমাম আবু হানিফার (র) শিষ্যদ্বয় ইমাম আবু ইউসুফ (র) এবং ইমাম মুহাম্মদ (র) স্বীয় ওস্তাদের (ইমাম আবূ হানীফা) সাথে দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন: কুরবানী করা (الضحیة) ওয়াজিব নয়  ( ( দ্র : মুখতাসার ইখতিলাফিল উলামা , ৩ : ২২০ ; সারখসীর আল - মাবসূত  , ১২ : ১০ - ১১ ;  তুহফাতুল ফুকাহা , ৩: ৮১ ; আল - মারঘীনানীর আল - হিদায়াহ ,৪ : ৪০৩।

 

তবে  তিনি (আল - মারঘীনানী) কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার বিষয়টি ইমাম মুহাম্মদের সাথে এবং  ইমাম আবূ ইউসুফের (র) সাথে (কুরবানীর বিধান সংক্রান্ত) তার দুই অভিমতের একটি অভিমত হিসাবে  সংশ্লিষ্ট ও সন্বন্ধিত করেছেন।))

 

আর ইমাম আবু হানিফার (র) অভিমতের অনুরূপ অভিমত ইমাম মালিক (র) থেকেও বর্ণিত হয়েছে। ( দ্র : আন - নাওয়াদির ওয়ায যিয়াদাত , ৪:৩১০ ; আল - মাঊনাহ , ১: ৬৫৭ ; আব্দুল ওয়াহ্হাব প্রণীত আল - আশরাফ , ২ : ৯০৭ ; আল - কাবাস , ২: ৩৭৬ ;

 

আর ইমাম মালেক থেকে বর্ণিত আছে যে কুরবানী হচ্ছে মুআক্কাদ সুন্নাত অথবা ওয়াজিব সুন্নাত (সুন্নাত -ই- ওয়াজিবাহ)। দ্র : কাযী আবুল ওয়ালীদ মুহাম্মাদ ইবনে আহমাদ ইবনে রুশদ আল-কুর্তুবী ( মৃ: ৫৯৫ হি : ) প্রণীত বিদায়াতুল মুজতাহিদ ওয়া নিহায়াতুল মুকতাসিদ , ৩য় খণ্ড , কিতাবুয যাহায়া , পৃ : ৩৭৯ - ৩৮১ ) ।

 

অনুবাদ ও সংগ্রহ: ইসলামি চিন্তাবিদ ও গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান

captcha