
গত ১৫ আগস্ট কাবুল নিয়ন্ত্রণে নেন তালেবান যোদ্ধারা। এর পর ১৭ আগস্ট তালেবানে প্রথম সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটির মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ আফগানবাসীকে অনেক প্রতিশ্রুতি দেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১০টি প্রতিশ্রুতি হলো—
• শত্রুতা নয় : আন্তর্জাতিক পক্ষের সঙ্গে যে কোনো সংঘাত এড়িয়ে চলবে তালেবান। কারও প্রতি ইসলামিক এমিরেটের শত্রুতা বা বৈরিতা থাকবে না। শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের পাশাপাশি কোনো অভ্যন্তরীণ বা বহিরাগত শত্রু চায় না তালেবান।
• প্রতিশোধ নয় : তালেবানের কাবুল নিয়ন্ত্রণের পর ভয়ে অনেক আফগান দেশ ছেড়ে পালাতে শুরু করেন। তালেবান মুখপাত্র তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, আমি আমার স্বদেশিদের আশ্বস্ত করতে চাই— অনুবাদক, সামরিক কার্যক্রমের সঙ্গে বা সাধারণ নাগরিক যারাই আছেন না কেন, সবাইকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। কারও প্রতি প্রতিশোধমূলক আচরণ করা হবে না।
• বিদেশিদের নিরাপত্তা : কাবুলে অবস্থিত বিদেশি দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা দেবে তালেবান। জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেসব এলাকায় দূতাবাস আছে, সেখানে পুরোপুরি নিরাপত্তা থাকবে। সব বিদেশি রাষ্ট্র, প্রতিনিধি, দূতাবাস, মিশন, আন্তর্জাতিক সংস্থা দাতা সংস্থাগুলোকে আমি আশ্বস্ত করতে চাই, তাদের বিপক্ষে আমরা কিছু হতে দেব না। আপনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
• প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক : তালেবান মুখপাত্র জানিয়েছেন, প্রতিবেশী দেশ, আঞ্চলিক দেশগুলোকে তাদের বিরুদ্ধে বা কোনো দেশের ক্ষতিসাধনে আফগান ভূমি ব্যবহার করতে দেয়া হবে না।
• নারী অধিকার : ইসলামিক এমিরেট শরিয়া কাঠামোর আলোকে নারীদের অধিকার দিতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তালেবান। নারী-পুরুষ একই অধিকার ভোগ করবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তালেবানের নিয়ম ও নীতির আলোকে কাজ করতে পারবে। নারীদের প্রতি কোনো বৈষম্য করা হবে না।
• গণমাধ্যমে নারীরা : নতুন সরকারের গঠন হলে তাদের ইসলামিক শরিয়া আইন অনুযায়ী নারীরা গণমাধ্যম থেকে শুরু করে অন্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতেও কাজ করতে পারবে।
• গণমাধ্যমের স্বাধীনতা : আফগান সাংস্কৃতিক কাঠামোর মধ্যে গণমাধ্যমের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তালেবান। বেসরকারি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অব্যাহত থাকবে। তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে। তবে গণমাধ্যমের কার্যক্রমে ইসলামি মূল্যবোধের প্রতিফলন থাকতে হবে। গণমাধ্যমকে নিরপেক্ষ হতে হবে। তালেবানের কাজের সমালোচনা করা যাবে।
• চোরাচালান, মাদক রোধ : আফগানিস্তানে কোনো ধরনের মাদক উৎপাদন করা হবে না। কেউ মাদক চোরাচালানে জড়িত থাকবে না। তবে মাদকমুক্ত আফগানিস্তান গড়তে ও বিকল্প শস্যের জন্য আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে সহায়তা চেয়েছেন এই তালেবান মুখপাত্র।
• অর্থনীতি পুনর্গঠন : দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তালেবান মুখপাত্র বলেন, আমরা দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো গড়ে তুলব। এ জন্য অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালুর ব্যবস্থা করা হবে। অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা, বিনির্মাণ ও সমৃদ্ধির জন্য আমরা প্রাকৃতিক সম্পদ ও অন্য যে সম্পদ আছে তা নিয়ে কাজ করব। এ জন্য আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনুরোধ করছি যে, খুব দ্রুতই পুরো পরিস্থিতি— আমাদের অর্থনীতি আমরা বদলে ফেলতে পারব।
• সরকারে সব পক্ষ : সরকারে সবার অংশগ্রহণমূলক সরকার নিশ্চিত করা হবে উল্লেখ করে মুজাহিদ জানান, আফগানিস্তানে একটি শক্তিশালী ইসলামিক সরকার থাকবে। নাম কী হবে কিংবা আর কী করা হবে সেটি রাজনৈতিক নেতাদের ওপর ছেড়ে দিচ্ছি আমরা। তবে একটা বিষয় নিশ্চিত যে, আমাদের মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে একটি ইসলামিক ও শক্তিশালী সরকার গঠন করা হবে এবং আমাদের নাগরিকদের মূল্যবোধ বা স্বার্থবিরোধী হবে না। সূত্র : ডয়েচে ভেলে