IQNA

ইমাম হুসাইনের (আ.) "অর্ধ-সমাপ্ত হজ"-এর ফিকাহগত পর্যালোচনা

0:03 - August 02, 2022
সংবাদ: 3472219
তেহরান (ইকনা): সাইয়্যেদুশ শোহাদা (আ.)এর বিপ্লবের সাথে সম্পর্কিত একটি ফিকাহশাস্ত্রীয় বিষয় হল তার "অর্ধ-সমাপ্ত হজ্জ"। কারণ তিনি হজের সময় মক্কায় উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু অনুষ্ঠানের মাঝখানে তিনি কুফার উদ্দেশ্যে রওনা হনন এবং আশুরার বিপ্লব সংঘটিত হয়। কিন্তু গবেষণায় দেখা যায় যে, তিনি কিছু কারণে হজ করার ইচ্ছা পোষণ করেননি।

ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শেষ হজ সম্পর্কে গবেষণার কথা উল্লেখ করে, মোহাম্মদ সুরুশ মহলতি ফিকাহগত পর্যালোচনা করেছেন, যা নীচে তুলে ধরা হল:
"অসমাপ্ত হজ" বলতে কারবালার ঘটনার আগে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শেষ হজকে বোঝায়। কিছু ঐতিহাসিক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ইমাম (আ.) ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়ার দালালদের হাতে গ্রেফতার না হওয়ার জন্য তাঁর হজ অসমাপ্ত রেখেছিলেন এবং উমরা তামাত্তু থেকে উমরাহ মুফারদাহতে তাঁর অভিপ্রায় পরিবর্তন করেন এবং তারবিয়্যার (৮ই যিলহজ্জ) দিনে কুফার উদ্দেশ্যে মক্কা ত্যাগ করেন। যাইহোক, কিছু ঐতিহাসিক প্রমাণ ও বর্ণনা অনুসারে, ইমাম (আ.)-এর প্রথম থেকেই একটি একক ওমরাহ করার ইচ্ছা ছিল এবং তিনি হজ পালনই করেন নি, যা অসমাপ্ত থাকবে। তিনি মিকাত থেকে ইহরাম পরিধান করেননি এবং তিনি ইতিমধ্যেই যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন।
ইমাম হুসাইন (আ.) শা'বান মাসের শুরুতে মক্কায় আগমন করেন এবং আল- তারবিয়্যার দিন পর্যন্ত মক্কায় অবস্থান করেন। এ বিষয়ে সর্বপ্রথম যে ফিকাহগত বিষয়টি অনুসন্ধান করা হবে তা হল ইমাম হজ্জ করার জন্য মোহরেম হয়েছিলেন কি না এবং উমরা তামাত্তু থেকে উমরাহ মুফারদাহতে পরিবর্তন করেছেন কি না?
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে: "আমার পূর্বপুরুষ হুসাইন (আ.) তামাত্তু নয়, যিলহজ মাসে ওমরার জন্য মোহরেম হয়েছিলেন এবং তিনি আল-তারবিয়্যার দিনে ইরাকের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এমনকি যিলহজ মাসে যদি কেউ তামাত্তু হজ পালন করতে না চায়, তাতে কোন সমস্যা নেই, সে ওমরাহ পালন করতে পারবে।
কিন্তু দ্বিতীয় যে বিষয়টিকে ফিকাহশাস্ত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে পরীক্ষা করা হয় তা হল ইমাম (আ.) যখন মক্কায় গিয়েছিলেন, কিছু লোক তাদের মক্কায় থাকার পরামর্শ দিয়েছিল কারণ মক্কা ইমামের জন্য নিরাপদ স্থান ছিল, কিন্তু ইমাম (আ.) বলেছিলেন যে, কাবার পবিত্রতা রক্ষা করা উচিত। কিন্তু প্রশ্ন হল ইমামের মর্যাদা বেশি নাকি কাবার?
মহান আল্লাহ পবিত্র কাবাঘরকে একটি নিরাপদ স্থান বানিয়েছেন এবং আমাদের দায়িত্ব এটিকে নিরাপদ রাখার। আমাদের অধিকার ছেড়ে দিতে হবে যাতে সেখানে নিরাপত্তা নষ্ট না হয়। কিন্তু নিরাপত্তা দুই ধরনের: তাকভিনি বা গঠনমূলক নিরাপত্তা এবং তাশরিয়ী বা শরীয়াগত আইনী নিরাপত্তা। পবিত্র কুরআনে যে নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে তা হল তাশরিয়ী নিরাপত্তা। এর মানে এই নয় যে সেখানে রক্তপাত সম্ভব নয়। সেখানেও রক্তপাত হয়েছে। মক্কা একটি নিরাপদ ঘর এবং এটি সংঘর্ষ ও রক্তপাতের স্থান হওয়া উচিত নয়।
ইমাম হুসাইন (আ.) এই আদেশ পালনের জন্য মক্কা ত্যাগ করেন। নিরাপত্তা বজায় রাখা তার কর্তব্য তিনি পালন করেছেন। ইমাম (আ.) বলেছেন: আমি যাচ্ছি যাতে মক্কার পবিত্রতা লঙ্ঘন না হয়।
মক্কা ত্যাগ করে ইমাম (আ.) মক্কার নিরাপত্তা ও পবিত্রতা রক্ষা করেন। একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, যে রাতে ইমাম (আ.) মক্কা ত্যাগ করতে চেয়েছিলেন সেই রাতেই মুহাম্মাদ বিন হানিফা ইমামের কাছে আসেন এবং বলেন: আপনি কেন কুফায় যেতে চাচ্ছেন? আপনার পিতা এবং বড় ভাইয়ের সাথে কুফাবাসী যে ব্যাবহার করেছে, তারপরও আপনি সেখানে যাবেন? আপনি মক্কায় থাকুন, আপনার একটি মর্যাদাপূর্ণ জীবন আছে এবং আপনি সম্মানিত। ইমাম (আঃ) জবাবে বললেন: ইয়াজিদের দালালরা আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে এবং আমি এখানে থাকলে তারা এখানে রক্ত ঝরবে। এই বিষয় নিয়ে আমি চিন্তিত। আমার অংশগ্রহণ করা উচিত নয় এবং যতই তারা অত্যাচারী হোক না কেন আমি এটি বন্ধ করবো। ইমাম (আ.) বলেন, আমাকে অবশ্যই কাবার পবিত্রতা রক্ষা করতে হবে। প্রকৃত ধর্মের নীতি বজায় রাখায় জন্য ইমাম (আ.) উৎসর্গ হন। নিজেকে বাঁচানোর জন্য ইমাম (আ.)-এর এসব ত্যাগ করার কোনো কারণ নেই। নিজেকে বাঁচানোর জন্য ইমাম (আ.)-এর এসব ত্যাগ করার কোনো কারণ নেই।

captcha