IQNA

কুরআনের সূরাসমূহ / ৪৬

সূরা আহক্বাফে আল্লাহ ও কিয়ামত অস্বীকারকারীদের পরিণাম

16:25 - December 14, 2022
সংবাদ: 3472992
তেহরান (ইকনা): মানুষ বিভিন্ন চিন্তা ও মতামত নিয়ে স্বাধীনভাবে বসবাস করে। তারা সত্য ও বাস্তবতাকে অস্বীকার করতে পারে এবং মিথ্যা চিন্তা ও প্রবণতাকে সঙ্গী করতে পারে, তবে তাদের অবশ্যই জানতে হবে সত্যকে অস্বীকার করার এবং মিথ্যার সঙ্গী হওয়ার পরিণতি কী হবে।
পবিত্র কুরআনের ৪৬তম সূরার নাম “আহক্বাফ”। এই মাক্কী সূরাটি নাযিলের ক্রমানুসারে ৬৬তম সূরা যা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)এর উপর নাযিল হয়েছে। ৩৫ আয়াত বিশিষ্ট এই সূরাটি পবিত্র কুরআনের ২৬তম পারায় অবস্থিত।
২১ নম্বর আয়াতে আহক্বাফ শব্দটি থাকার কারণে এই সূরাটিকে “আহক্বাফ” বলা হয়, যা আদ জাতির অর্থাৎ হযরত হুদ (আ.)-এর গোত্র এবং দেশের কাহিনী সম্পর্কে কথা বলা হয়েছে। হযরত হুদ (আ.) আহক্বাফ নামক স্থানে তার সম্প্রদায়কে (আদ) আল্লাহর শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। আদ জাতি যেই স্থানে বসবাস করতো সেই স্থান ছিল ভূমি বালুকাময় এবং আহক্বাফ অর্থ বালুকাময়। এই শব্দটি কুরআনে একবারই উল্লেখ করা হয়েছে।
সূরা আহক্বাফে  কিয়ামত এবং মু’মিন ও কাফেরদের অবস্থান ও পরিস্থিতি এবং এই জগত অনর্থক সৃষ্টি করা হয়নি সেই সম্পর্কে কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও এই সূরায় -জীবিত প্রাণীদের মৃত্যুর পর মহান আল্লাহ পুনরায় তাদের জীবিত করবেন- সেই বিষয়ে কথা বলা হয়েছে। সূরা আহক্বাফে  পিতামাতার প্রতি সদাচরণ সম্পর্কে উপদেশ দেওয়া হয়েছে। হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে এই সূরার ১৫ নম্বর আয়াতটি ইমাম হুসাইন (আ.) সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছিল।
এ সূরা পাঠের ফজিলত সম্পর্কে রেওয়ায়তে বর্ণিত হয়েছে যে, যে ব্যক্তি প্রতি রাতে বা প্রতি শুক্রবার এই সূরাটি পাঠ করবে, মহান আল্লাহ তার থেকে দুনিয়ার ভয় দূর করবেন এবং কিয়ামতের ভয় থেকেও রক্ষা করবেন। এই সূরাটি কিয়ামতের প্রমাণ দিয়ে শুরু হয়েছে এবং সূরার শেষ পর্যন্ত এই বিষয়টি বারবার উল্লেখ করা হয়েছে।
এই সূরার আয়াতগুলিতে, মহান আল্লাহর একত্ববাদ এবং নবুওয়াতের পক্ষে প্রমাণ দেওয়া হয়েছে এবং হুদ (আ.)এর জাতি এবং মক্কার আশেপাশের গ্রামগুলির ধ্বংসের একটি উল্লেখও রয়েছে এবং এর মাধ্যমে মানুষকে সচেতনতা ও ভয় দেওয়া। এছাড়াও এই সূরায় রাসূলে আকরাম (সা.)এর কাছে জ্বীন গোত্র হতে কয়েক জন জ্বীনের আগমনের কথা উল্লেখ রয়েছে। এই সকল জ্বীন পবিত্র কুরআনের আয়াত শুনে তাঁর প্রতি ঈমান আনেন এবং তারা নিজ গোত্রে ফিরে যেয়ে বাকীদের অবগত করেন।
মক্কার মুশরিকরা নিজেদেরকে ক্ষমতার উচ্চতায় দেখেছিল এবং ভেবেছিল যে নবীর (সা.) দাওয়াত গ্রহণ করার তাদের কোন প্রয়োজন নেই; তাই তারা মূর্তিপূজা প্রচার করত ও মানুষকে বিভ্রান্ত করত এবং তারা ইসলামের সত্যতা ও কুরআনের শিক্ষাকে ব্যঙ্গ করে অস্বীকার করেছে।
 
সূরা আহক্বাফ অবতীর্ণ হয়েছিল কুরাইশদের কাফের ও মূর্তিপূজকদের সতর্ক করার জন্য, তাদের মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য যে এভাবে চলতে থাকলে দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি হবে এবং মিথ্যার পথ অনুসরণ করা এবং নবীর সত্যতাকে অবজ্ঞা করা এবং বিচার দিবসকে অস্বীকার করা, দুনিয়াতে ব্যর্থতা এবং পরকালে অপমান ছাড়া তাদের জন্য কোন পরিণতি হবে না, এবং যেহেতু তাদের অবাধ্যতার চিকিৎসা কেবলমাত্র কেয়ামতের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির কথা স্মরণ করার মাধ্যমেই সম্ভব ছিল, তাই সূরার কয়েকটি আয়াত কিয়ামত ও কাফেরদের শাস্তি এবং জাহান্নামের আগুনে তাদের আত্মসমর্পণের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

 

সংশ্লিষ্ট খবর
captcha