আরবি ভাষার প্রধান পাঁচ উপভাষা
আরবি ভাষার প্রচলিত উপভাষাগুলোর মধ্যে প্রধান পাঁচ উপভাষার পরিচয় তুলে ধরা হলো—
১. মিসরীয় উপভাষা : আরবি ভাষাভাষীদের ভেতরে সর্বাধিক সংখ্যক মানুষ মিসরীয় উপভাষায় কথা বলে। এটা প্রায় ১০ কোটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ভাষা। মিসরের বাইরেও লাখ লাখ মানুষ এই উপভাষায় কথা বলে। মিসরীয় চলচ্চিত্র ও গণমাধ্যম মিসরীয় উপভাষা জনপ্রিয় করে তুলেছে। এই উপভাষার একটি বৈশিষ্ট্য হলো ‘জিম’ বর্ণকে ‘গাইন’-এর মতো উচ্চারণ করা।
যেমন—নাজমকে (তারকা) নিগম উচ্চারণ করা। এই উপভাষার ওপর তুর্কি, ফরাসি ও ইংরেজি ভাষার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।
২. মেসোপটেমিয়ান উপভাষা : মেসোপটেমিয়ান উপভাষায় কথা বলে ইরাক, কুয়েত, সিরিয়ার একাংশ, ইরানের আরবি ভাষীরা ও দক্ষিণ তুরস্কের আরবি ভাষীরা। এই উপভাষার ওপর প্রাচীন ও আধুনিক মেসোপটেমিয়ান ভাষাগুলোর প্রভাব আছে। যেমন—সুমেরি, আক্কাদি, ফারসি, কুর্দি ও গ্রিট। মেসোপটেমিয়ান উপভাষার প্রধান দুটি ধারা হলো জেলেট ও কেল্টু। এই উপভাষায় ‘দোয়াদ’ বর্ণকে কিছু ‘সা’ বর্ণের মতো উচ্চারণ করা হয়। একইভাবে ‘ক্বফ’ বর্ণকে ‘গাইন’ বর্ণের মতো উচ্চারণ করা হয়।
৩. শামি উপভাষা : ইংরেজিতে শামি উপভাষাকে লেভানটাইন বলা হয়। শামি উপভাষায় তিন কোটি ৮০ লাখ মানুষ কথা বলে। যাদের বেশির ভাগ সিরিয়া, লেবানন, জর্দান, ফিলিস্তিন ও তুর্কি সাইপ্রাসে বসবাস করে। শামি উপভাষা প্রমিত আরবির (এমএসএ) খুবই নিকটবর্তী। এই উপভাষায় ‘সা’ বর্ণকে ‘সিন’ বর্ণের মতো, ‘ক্বফ’ বর্ণকে ‘গাইন’ বর্ণের মতো এবং ‘কাফ’ বর্ণকে ‘সোয়াদ’ বর্ণের মতো উচ্চারণ করা হয়। শামি উপভাষার ওপর তুর্কি ভাষার বিশেষ প্রভাব রয়েছে। ইংরেজি ও ফরাসি ভাষারও সামান্য প্রভাব আছে।
৪. মাগরিবি : উত্তর আফ্রিকা তথা মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিশিয়া, লিবিয়া, পশ্চিম সাহারা ও মৌরিতানিয়া এবং পশ্চিম মিসরের লোকেরা এই উপভাষায় কথা বলে। স্থানীয়রা মাগরিবি আরবিকে দারিজা বলে। যার অর্থ নিত্যদিনের ভাষা। অভিযোগ আছে, মাগরিবি উপভাষা বোঝা তুলনামূলক কঠিন। এই উপভাষার ওপর ফরাসি, স্প্যানিশ, তুর্কি ও ইতালিয়ান ভাষার প্রভাব আছে। মাগরিবি উপভাষার বৈশিষ্ট্য হলো স্বরবর্ণ বিলোপ করা। যেমন—প্রমিত আরবি বাক্য ‘মিন আইনা আনতা’-এর মাগরিবি উচ্চারণ হলো ‘মানিনতা’। মিন আইনা আনতা অর্থ আপনি কোথা থেকে এসেছেন।
৫. খালিজি উপভাষা : আরবি খালিজি শব্দের অর্থ উপসাগরীয়। এই উপভাষায় কমপক্ষে ৭০ লাখ মানুষ কথা বলে। সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিণ ইরাক ও উত্তর ওমানের অধিবাসীরা খালিজি উপভাষায় কথা বলে। তবে প্রত্যেক দেশের খালিজি উপভাষার ব্যবহার ও উচ্চারণে সামান্য ব্যবধান আছে। এই উপভাষার বৈশিষ্ট্য হলো ‘ক্বফ’ বর্ণকে ‘গাইন’ বর্ণের মতো উচ্চারণ করা এবং ‘কাফ’ বর্ণকে ‘সোয়াদ’ বর্ণের মতো উচ্চারণ করা। খালিজি উপভাষার ওপর ফারসি ও তুর্কি ভাষার দৃশ্যমান প্রভাব আছে।
মিডল ইস্ট আই অবলম্বনে