IQNA

বাংলাদেশের জেবুন নেসা মসজিদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

16:16 - May 14, 2025
সংবাদ: 3477368
ইকনা- বাংলাদেশ মসজিদের দেশ। সম্প্রতি টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত দ্য ওয়ার্ল্ডস গ্রেটেস্ট প্লেসেস অব ২০২৫-এর তালিকায় স্থান পেয়েছে আশুলিয়ার জেবুন নেসা মসজিদ। এটি টাইম ম্যাগাজিনে স্থান পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি স্থাপত্য নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃত।
ঢাকার অদূরে আশুলিয়ার দরগারপাড়া এলাকায় আইডিএস গ্রুপের ফ্যাশন ফোরাম লিমিটেড কারখানার অভ্যন্তরে অবস্থিত পরিবেশবান্ধব ও দৃষ্টিনন্দন জেবুন নেসা মসজিদ।
 
 
আইডিএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইদ্রিস শাকুর। তিনি তাঁর প্রয়াত মায়ের স্মরণে মসজিদটি নির্মাণ করেন। তিনি জমিদাতাও। ২০২৩ সালে স্টুডিও মরফোজেনেসিসের মাধ্যমে নির্মিত মসজিদটি ৬০৬০ বর্গফুট জায়গাজুড়ে বিস্তৃৃত।
 
 
আশুলিয়া এলাকার অনেক টেক্সটাইল কারখানার মধ্যে জেবুন নেসা মসজিদ ছয় হাজার ৫০০ পোশাক শ্রমিকের জন্য নামাজের পাশাপাশি বিশ্রামকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
গোলাপি রঙের কংক্রিটে তৈরি মসজিদটি আশপাশের রুক্ষ শিল্প এলাকার পরিবেশকে নমনীয় করেছে এবং বাংলার মোগল স্থাপত্যে ব্যবহৃত ঐতিহ্যবাহী টেরাকোটার রঙের প্রতিফলন ঘটিয়েছে। বাইরের অংশে লাল সিমেন্ট ও ভাঙা ইটের মোজাইক ধাঁচের মেঝে ও ঢালুপৃষ্ঠ তৈরি করা হয়েছে। মসজিদটি একটি লেকের কিনারে অবস্থিত এবং এটি একটি উঁচু ভিত্তির ওপর নির্মিত।
 
 
বন্যামুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতকরণে প্রাচীন বাংলার মাচানঘরের নির্মাণশৈলীর প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে এখানে। মসজিদটি বর্গাকার ভিত্তির ওপর নির্মিত, যার মাঝখানে একটি গোলাকার নামাজঘর। চারটি বদ্ধ বাগান আলো ও বাতাস প্রবাহের জন্য আলোর কোর্ট হিসেবে কাজ করে। চতুর্ভুজ আকৃতির অবকাঠামোর মধ্যভাগে আছে বিশাল আকৃতির একটি গম্বুজ। প্রকৃতির নির্মল আলো-বাতাস প্রবেশের জন্য পুরো মসজিদের দেয়ালজুড়ে রাখা হয়েছে অসংখ্য ছিদ্র, যা মসজিদটিকে করেছে দারুণ সৌন্দর্যমণ্ডিত।
এ জন্যই মসজিদটিতে লাগানোর দরকার হয়নি এসি অথবা ফ্যান। সারা দেশের মধ্যে এ রকম নকশার মসজিদ একটাই।
মসজিদের কেবলা দেয়ালে একটি প্রশস্ত খোলা খিলান আছে, যা পাশের জলাধারের দৃশ্য উপস্থাপন করে। একটি স্বচ্ছ কাচের মিহরাব ভেতরের অগভীর পানির ওপর দিয়ে আলো প্রতিফলিত করে। একটি অর্ধচন্দ্রাকৃতি মাঝতলা রয়েছে, যা নারীদের নামাজের জন্য নির্ধারিত এবং একটি ভাস্কর্যখচিত পাক ঘূর্ণায়মান সিঁড়ি দিয়ে পৌঁছা যায়, যা একটি ছাতিমগাছকে ঘিরে তৈরি এবং পাশেই ঘন বাঁশঝাড়।
 
অনেক গরমেও ফ্যান ছাড়াই মসজিদে শীতল পরিবেশে নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। পবিত্রতার প্রতীক ফিরোজা কালারের টাইলস দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন অজুখানা।
 
সুন্দর ব্যবস্থাপনায় এ মসজিদের মনোরম পরিবেশে নামাজ আদায় করতে পেরে গার্মেন্টস শ্রমিক, নারী মুসল্লিরাও দারুণ খুশি। শ্রমিকদের কল্যাণে নির্মিত এত সুন্দর মসজিদের জন্য মুসল্লিরা কৃতজ্ঞ এবং কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান, দোয়া করেন নির্মাতার মরহুমা মায়ের জন্য।
 
মসজিদের ইমাম হাফেজ মুফতি মো. শফিকুল ইসলাম জানান, সারা দিন গার্মেন্টসের ভেতরে কাজের বিরতিতে মসজিদের মনোরম পরিবেশে নামাজ আদায় করলে শ্রমিকদের মন প্রফুল্ল থাকে। মালিকপক্ষ শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে এত সুন্দর মসজিদটি নির্মাণ করেছে, যা দৃষ্টান্তমূলক হয়ে থাকবে।
 
মসজিদটির নকশাকারী স্টুডিও মরফোজেনেসিসের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক স্থপতি সায়কা ইকবাল মেঘনা বলেছেন, একজন নারীর নামে নামকরণ থেকেই আমি এমন একটি স্থাপনা নির্মাণের ধারণা পাই, যেটি পোশাক শ্রমিকদের জন্য একটি সফট শেল্টার (বিকল্প আশ্রয়স্থল) হতে পারে। তিনি আরো বলেন, ‘এ জায়গাটি সব পোশাক শ্রমিকের হওয়া উচিত। একজন স্থপতি হিসেবে এটি আমার একটি বড় অর্জন।’
 
বস্তুত এমন উদ্যোগ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত উক্তি স্মরণ করায়—
 
‘...কত দরবেশ ফকির রে ভাই, মসজিদের আঙ্গিনাতে
 
আল্লার নাম জিকির করে লুকিয়ে গভীর রাতে,
 
আমি তাদের সাথে কেঁদে কেঁদে
 
আল্লার নাম জপতে চাই।’
 
লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
 
ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ
 
কাপাসিয়া, গাজীপুর
 
captcha