IQNA

ইউক্রেনে টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানো নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থান পরিবর্তনের নেপথ্যে

13:37 - October 18, 2025
সংবাদ: 3478272
ইকনা- মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনে টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেছেন।
 

ডোনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ করেই ইউক্রেনে টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর ব্যাপারে তার আগের অবস্থান বদলে দিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে ভূরাজনৈতিক কারণ, সামরিক বিবেচনা এবং রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের জটিলতা।

ওয়াশিংটনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাতে ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করা এই মুহূর্তে অপ্রাসঙ্গিক। তার প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটানো।

সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলার পর ট্রাম্প ইউক্রেনের পক্ষ থেকে রাশিয়ার জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে হামলার সমর্থনে নিজের মত পরিবর্তন করেছেন, তবে ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার বিকল্পটি এখনও খোলা রেখেছেন।

কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, ট্রাম্প তার অবস্থান পুরোপুরি পরিবর্তন করেছেন বলে মনে হচ্ছে না, বরং তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাছাকাছি রয়েছেন এবং সতর্কতার সাথে এই সম্ভাব্য পদক্ষেপের কূটনৈতিক, সামরিক ও প্রযুক্তিগত পরিণতিগুলো বিবেচনা করছেন।  তবুও, বেশ কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে ট্রাম্পের অবস্থান টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানো বিষয়ে কিছুটা বদলেছে।

ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের নেপথ্যে বেশকিছু কারণ রয়েছে। পর্দার আড়ালের কারণগুলো হচ্ছে:

 ১. রাশিয়ার সঙ্গে উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কা:

ট্রাম্পের অবস্থান পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হলো রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘাত বাড়ার আশঙ্কা। তিনি জানেন, মস্কো ইউক্রেনে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোকে রাশিয়াআমেরিকা সম্পর্কের 'রেডলাইন' হিসেবে দেখছে। তাই পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের পর ট্রাম্প ঘোষণা দেন যে, তিনি ইউক্রেনের পক্ষ থেকে রাশিয়ার অবকাঠামোতে সরাসরি হামলাকে সমর্থন দিতে চান না। যদিও তিনি এই বিকল্পটি পুরোপুরি বাতিল করেননি, বরং এটিকে কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ধরে রেখেছেন।

২. যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সক্ষমতা রক্ষার বিষয়ে সতর্কতা:

ট্রাম্প বলেছেন, টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র অত্যন্ত শক্তিশালী অস্ত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এর ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে। তিনি ইরানে হামলার সময় ৩০টি টমাহক ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর প্রয়োজন রয়েছে এবং সেগুলো সহজে অন্য দেশের হাতে তুলে দেওয়া উচিত নয়। এটি তার বৈশ্বিক সামরিক ভারসাম্য ও প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখার ইচ্ছার প্রতিফলন।

৩. প্রযুক্তিগত ও লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ:

আরেকটি বাস্তব বাধা হলো- এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নিক্ষেপের পদ্ধতি। টমাহক মূলত একটি নৌ-ভিত্তিক অস্ত্র, তাই ইউক্রেনকে এগুলো ব্যবহার করতে হলে স্থলভিত্তিক উৎক্ষেপণ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে। তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব নৌবাহিনীর মিশনের জন্য এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর একটি বড় অংশ সংরক্ষিত থাকায় ইউক্রেনে পাঠানোর মতো পর্যাপ্ত মজুদ নাও থাকতে পারে।

৪. হুমকিকে কূটনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার:

জেলেনস্কির সাথে একটি টেলিফোন যোগাযোগে ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে তিনি পুতিনকে একটি আল্টিমেটাম দিতে পারেন: যদি রাশিয়া শান্তি আলোচনায় ফিরে না আসে, তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করবে। এই হুমকি ইউক্রেনকে কেবল সামরিক সহায়তা প্রদানের জন্য নয়, বরং রাশিয়াকে আলোচনায় বাধ্য করার জন্য একটি রাজনৈতিক চাপের হাতিয়ার হিসেবে ট্রাম্প ব্যবহার করছেন।

৫. অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও জনমত:

ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের জনমত ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপও বিবেচনায় রাখছেন। তিনি সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে চান না। ইউক্রেনে দীর্ঘপাল্লার অস্ত্র পাঠানো মার্কিন জনগণের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারেবিশেষ করে যদি এতে ন্যাটো ও রাশিয়ার মধ্যে সংঘাত তীব্র হয়। তাই তিনি সামরিক বিকল্পগুলো হুমকি হিসেবে ধরে রাখতে চান, বাস্তবে প্রয়োগ করতে চান না।

পরিশেষে বলা যায়- ইউক্রেনে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানো নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থান পরিবর্তন মূলত কূটনৈতিক, সামরিক ও রাজনৈতিক বিবেচনার সমন্বিত ফল। তিনি এই শক্তিশালী অস্ত্রকে যুদ্ধ শেষ করার জন্য কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চান, সরাসরি সংঘাতে জড়ানোর উপায় হিসেবে নয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সম্পদ ঝুঁকিতে ফেলতেও চান না।#পার্সটুডে

 

captcha