২৩ জুন (সোমবার) সকালে, আবুল ফাজল বারুতচি তার বাড়ি ও জীবন আল্লাহর হাতে সঁপে দিয়ে তার প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য কর্মস্থলের দিকে রওনা হন। সেই সকালে স্ত্রীর সাথে বিদায়টি হয়ে উঠেছিল তাদের শেষ বিদায়। একইদিন বাসিজ মোস্তাজাফিন সংস্থার কার্যালয়ে ইসরায়েলি বিমান হামলার সময় পরিবারের সেই যুবকটি শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন।
পার্সটুডে জানিয়েছে, গত বছরের শুরুতে পরিবারের মাধ্যমে পরিচয় হয়েছিল আবুল ফাজল ও হানিয়া আহরাবির। ধীরে ধীরে সম্পর্কটি গভীর হয়, প্রেমে পরিণত হয়।
২৭ বছর বয়সী হানিয়া স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, “আমাদের দুজনের পরিবারই একই বিশ্বাস, নীতি ও জীবনধারা অনুসরণ করত। যত সময় গেছে, তত বুঝেছি আমরা কতটা একে অপরের মতো।”
আবুল ফাজলের বয়স ছিল ৩১ বছর। শৈশব থেকেই তিনি শামশিরি এলাকার আলী ইবনে মুসা আল-রেজা (আ.) মসজিদ ও স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী বাসিজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতেন। তিনি ফিকহ ও আইন বিভাগে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। তিনি কিছু সময় আদালতে কাজ করেছিলেন, একটি সময়ের জন্য একটি বেসরকারি কোম্পানির আইনি বিভাগে নিযুক্ত ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত “সেবার প্রতি ভালোবাসা” তাকে টেনে নিয়ে আসে বাসিজের মোস্তাজাফিন সংস্থার সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা দপ্তরে—যেখানে কঠিন পরীক্ষার পর তিনি নিয়োগ পান।
"তিন দিনের জীবন...”
হানিয়া আহরাবি বলেন, “নয় মাস বাগদানের পর আমরা বিয়ের সব প্রস্তুতি শেষ করেছিলাম—বিয়ের হল, পোশাক, ফুল, জুতা—সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হলো। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম ছোট করে ঘর বাঁধব, যুদ্ধ থেমে গেলে অনুষ্ঠান করব। নির্ধারিত তারিখেই আমরা ঘরে উঠলাম, বোমাবর্ষণের মাঝেও আশা হারাইনি, একসঙ্গে ঘর সাজিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের একসঙ্গে থাকা মাত্র তিন দিন স্থায়ী হলো; সোমবার, বিবাহের চতুর্থ দিনেই আবুলফাজল শহীদ হলেন।”
দায়িত্ববোধ ও সেবার তৃষ্ণা
হানিয়া বলেন, “তিনি দায়িত্বশীল, কর্মঠ এবং সেবার আনন্দে ভরা একজন মানুষ ছিলেন। যুদ্ধ আর অনিশ্চয়তার মধ্যেও আমাকে শান্ত করতেন, বলতেন—‘চিন্তা করো না, আল্লাহ মহান, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ একদিন দেশরক্ষার কথা উঠলে তিনি বলেছিলেন—‘যদি আমরা না যাই, তাহলে দেশকে রক্ষা করবে কে?’”
“শহীদ হওয়া ছিল আমাদের জীবনের রিজিক”
দশ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন হানিয়া। শান্ত ও দৃঢ় কণ্ঠে তিনি বলেন, “রাতে যখন স্বামীর পরিবারের বাড়িতে গেলাম, তখনই খবর পেলাম—আবুলফাজল শহীদ হয়েছেন। তিনি নিজের জীবন দিলেন যাতে ভবিষ্যতের সব ঘরবাড়ি, সব নবদম্পতির জীবন নিরাপদ থাকে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের জীবনের ভাগ্যে শুরু থেকেই শহীদ হওয়া লেখা ছিল।”
এই হৃদয়স্পর্শী গল্পটি শুধু এক নবদম্পতির নয়, বরং এক প্রজন্মের, যারা ভালোবাসা, বিশ্বাস ও ত্যাগের মাধ্যমে নিজেদের দেশ ও আদর্শের প্রতি চূড়ান্ত আস্থা প্রদর্শন করে।#
পার্সটুডে