আল-আরাবি টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, উত্তর দারফুর প্রদেশের রাজধানী আল-ফাশেরের "আদ-দারাজা আল-উলা" পাড়ায় ফজরের নামাজের সময় ড্রোন হামলায় ডজনখানেক নিরীহ বেসামরিক মানুষ শহীদ হন। এটি যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
উত্তর দারফুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক খাদিজা মুসা আল-জাজিরাকে বলেন, “অনেক লাশ এখনও শনাক্ত করা যায়নি এবং কিছু মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়ে গেছে। এই দৃশ্য আমাদেরকে দারফুরে অতীতের গণহত্যার কথা মনে করিয়ে দেয়, তবে এবার তা আরও মারাত্মক ও নির্ভুল অস্ত্র দিয়ে ঘটছে।”
মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগের নিন্দা
মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগ ভয়াবহ এ হামলাকে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। সংগঠনের বিবৃতিতে বলা হয়: “এই বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিক নীতিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন। আমরা আবারও আমাদের নৈতিক মূল্যবোধ, আন্তর্জাতিক আইন ও জেদ্দা ঘোষণার প্রতি অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি।”
তারা সুদানের জনগণের প্রতি সমর্থন এবং তাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে সব ধরনের সক্ষমতা কাজে লাগানোর অঙ্গীকারও করেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, উত্তর দারফুরের আল-ফাশেরে পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে এবং এতে আটকে পড়া বেসামরিক মানুষের ঝুঁকি বাড়ছে।
জাতিসংঘের মুখপাত্রের মাধ্যমে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, দ্রুত প্রতিক্রিয়া বাহিনী ৫০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে আল-ফাশেরকে কঠোর অবরোধে রেখেছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে হামলা বেড়েছে এবং বেশিরভাগ অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষ আবুশক শিবির থেকে ক্রমাগত বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণের কারণে পালাতে বাধ্য হয়েছে।
গুতেরেস অবিলম্বে শত্রুতা বন্ধ, বেসামরিকদের সুরক্ষা, বাধাহীন মানবিক সহায়তা পৌঁছানো এবং নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, “এই ধ্বংসাত্মক সংঘাতের সবচেয়ে বড় বোঝা এখনও সাধারণ মানুষই বহন করছে।”
সুদানে জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয়কারী ডেনিস ব্রাউনও এ হামলার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার এক্স (টুইটার)-এ লিখেছেন, “এই হামলা গভীরভাবে মর্মাহত করেছে। লড়াইরত পক্ষগুলো দীর্ঘদিন ধরে মানবিক আইনকে অবজ্ঞা করছে।”
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ হামলাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছে, তারা উপাসনালয় ও নিরীহ বেসামরিকদের লক্ষ্যবস্তু বানানো সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আফ্রিকা বিষয়ক উপদেষ্টা মাসউদ বুলোস এ হামলাকে “বর্বরোচিত” উল্লেখ করে বলেছেন, “এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, সুদানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জন কতটা জরুরি।”
সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও হামলাকে নিন্দা জানিয়ে বলেছে, “এটি আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।” তারা অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
ভয়াবহ মানবিক সঙ্কট
১০ জুন ২০২৪ থেকে আল-ফাশের সম্পূর্ণ অবরোধে রয়েছে। ওষুধ ও খাদ্যের মজুদ প্রায় ফুরিয়ে গেছে। স্থানীয়রা আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে বলছে, অবরোধ ভাঙা না হলে মৃতদের মর্যাদাপূর্ণ দাফন, শোকাহত পরিবারগুলোর ন্যূনতম নিরাপত্তা এবং জীবিতদের রক্ষার সুযোগও পাওয়া যাবে না।
আল-ফাশের দারফুর অঞ্চলের শেষ বড় শহর যা এখনও দ্রুত প্রতিক্রিয়া বাহিনীর দখলে যায়নি। বাহিনীটি মার্চ মাসের শেষে রাজধানী খার্তুম হারানোর প্রতিশোধ নিতে চাইছে। এপ্রিল ২০২৩ থেকে সেনাবাহিনী ও দ্রুত প্রতিক্রিয়া বাহিনীর মধ্যে চলমান যুদ্ধে দশ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং অন্তত ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। 4306106#