IQNA

ট্রাম্পের শুল্ক নীতি, চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার নাকি স্বাধীন দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ?

17:29 - September 21, 2025
সংবাদ: 3478106
ইকনা - ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপান মার্কিন অর্থনৈতিক চাপের মোকাবেলায় পিছু হটলেও চীন, ভারত এবং ব্রাজিল এই তিনটি দেশ স্বাধীন এবং প্রতিরোধী নীতি নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রাসী শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপান মার্কিন আগ্রাসী বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে পিছু হটলেও তিনটি ব্রিকস দেশ চীন, ভারত এবং ব্রাজিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে। পার্সটুডে জানিয়েছে, স্প্যানিশ সংবাদপত্র "এল পাইস" এক প্রতিবেদনে লিখেছে যে এই দেশগুলো শুধু যে আত্মসমর্পণ করেনি তাই নয় একইসাথে বিষয়টি চীনের জন্য ইতিবাচক ফলাফলও এনেছে।

ভারত ও ব্রাজিল, যাদের ওপর শুল্ক সবচেয়ে বেশি (৫০ শতাংশ) চাপানো হয়েছে এবং চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা, যাদের ওপর শুল্ক প্রায় (৩০ শতাংশ) তারা আত্মসমর্পন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

চীনের ক্ষেত্রে, ওয়াশিংটনের ভয় হল অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক। যার মধ্যে রয়েছে বেইজিংয়ের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি এবং বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় শক্তি হিসেবে চীনের উত্থানের ভয়। রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং মস্কো থেকে বিশাল পরিমাণ তেল ক্রয়ের কারণে ভারতও মার্কিন শুল্কের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। ব্রাজিলের ক্ষেত্রে, উদ্দেশ্যগুলি স্পষ্টতই রাজনৈতিক, যার মধ্যে রয়েছে ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বিচার এবং দক্ষিণ আফ্রিকার আফ্রিকান কৃষকদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ।

যাইহোক, এই সমস্ত দেশ ওয়াশিংটনের বাণিজ্য নীতির তীব্র বিরোধিতা করেছে। তারা আলোচনার জন্য প্রস্তুত হলেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মেক্সিকো বা কানাডার তুলনায় অনেক বেশি দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে।

চীন ও ট্রাম্পশুল্ক এবং স্বাধীন বাণিজ্যের জন্য একটি পরীক্ষা

চীন ন্যূনতম ক্ষতি দিয়ে মার্কিন শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। এপ্রিল মাসে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের উপর ১৪৫% শুল্ক আরোপ করে এবং পাল্টা বেইজিংও ১২৫% শুল্ক আরোপ করে। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চীনা রপ্তানি ৬৪% হ্রাস পায় এবং বাণিজ্য কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। এরপর চীন গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের রপ্তানি সীমিত করে, ওয়াশিংটনকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসে। কয়েক দফা আলোচনার পর, শুল্ক হ্রাস করা হয় এবং শুল্কযুদ্ধবিরতি নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

চীন ট্রাম্পের নতুন ভূ-রাজনীতির বিরুদ্ধে গিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছে নিজেকে একটি নির্ভরযোগ্য অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে উপস্থাপন করেছে। এর ফলে ভারতের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।

ভারতকৌশলগত মিত্র থেকে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ট্রাম্পের শুল্ক নীতির বিরোধিতা করার পর ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের উপর শুল্ক ৫০% পর্যন্ত বাড়িয়েছেন। চীন ভারতকে সমর্থন করে প্রতিক্রিয়া জানায় এবং তিন দিন পরে, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনে চীনে শি জিনপিং এবং পুতিনের সাথে দেখা করেন। মার্কিন বাধার মুখে চীনের কূটনীতি আরও জোরদার করার জন্য এই শীর্ষ সম্মেলন ছিল একটি সুযোগ। শুল্ক আরোপের ফলে ভারত ওয়াশিংটন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের আরও কাছে চলে যাচ্ছে, এই পরিবর্তনটি তিয়ানজিন এবং বেইজিংয়ে সাম্প্রতিক সম্মেলনে দেখা গেছে।  

ব্রাজিলরাজনৈতিক চাপ মোকাবেলায় জাতীয়তাবাদী প্রতিক্রিয়া

এক জাতীয়তাবাদী প্রতিক্রিয়ায়, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নিজেকে সম্রাট মনে করার অভিযোগ এনেছেন এবং প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্রাজিলের রপ্তানি ১৮ শতাংশ কমেছে, যেখানে চীনে রপ্তানি ৩০ শতাংশ বেড়েছে। জাতীয় সার্বভৌমত্বের উপর জোর দিয়ে, দা সিলভা ওয়াশিংটনের সাথে আলোচনাকে কেবল বাণিজ্য বিষয়গুলিতে মনোনিবেশ করার শর্ত দিয়েছিলেন এবং ঘোষণা করেছিলেন যে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে তার কোনও সম্পর্ক নেই।#

পার্সটুডে

captcha