
তিনি বলেন, হযরত জয়নাব (সা. আ.)-কে ইসলামের ইতিহাসে “সত্যভিত্তিক গণমাধ্যমের আদর্শ” (حقمحور رسانهداری) হিসেবে বিবেচনা করা যায়, যিনি ধর্মীয় প্রচারের ক্ষেত্রে বুদ্ধিবৃত্তি, অনুভূতি, সাহস ও ঈমানের অনন্য সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন।
কাসেমি আরও বলেন, হযরত জয়নাব (সা. আ.)-এর ভাষণ ও অবস্থান কারবালার পরের ইতিহাসে এক পূর্ণাঙ্গ ধর্মীয় প্রচারের মডেল হিসেবে দেখা যায়। কুফা ও শামে তাঁর ভাষণ শুধু আহলে বাইতের (আ.) মজলুম অবস্থার বিবরণই দেয়নি, বরং তা ছিল গভীর প্রজ্ঞা, বুদ্ধিমত্তা ও আবেগের নিয়ন্ত্রিত প্রকাশের এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, হযরত জয়নাব (সা. আ.) একই সঙ্গে বুদ্ধিবৃত্তিক (عقلانی) ও আবেগীয় (عاطفی) প্রতিক্রিয়ার সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন — যা মানুষের চিন্তা ও হৃদয় উভয়কেই স্পর্শ করেছিল। তিনি দেখিয়েছেন, কার্যকর ধর্মীয় বার্তা শুধু যুক্তি বা প্রমাণে সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা মানুষের হৃদয়, অনুভূতি ও বাস্তব জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে হবে।
হুজ্জাতুল ইসলাম কাসেমি বলেন, “হযরত জয়নাব (সা. আ.)-এর সাহসিকতা কোনো অস্থিরতা বা উত্তেজনা থেকে নয়, বরং ঈমান, সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ থেকে উৎসারিত ছিল। তিনি সত্যকে বলেছিলেন পরিপূর্ণ মর্যাদা, যুক্তি ও নৈতিকতার সঙ্গে — যা এক আদর্শ ‘দায়িত্বশীল সাহসের’ দৃষ্টান্ত।”
তিনি আরও বলেন, বর্তমান যুগ—যা মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগ—সেখানে ধর্মপ্রচারকদের উচিত হযরত জয়নাব (সা. আ.)-এর পদ্ধতি থেকে শিক্ষা নেওয়া। তাঁর শিক্ষায় দেখা যায়, বার্তা তখনই কার্যকর হয়, যখন তা বুদ্ধি ও আবেগ উভয়কে একসাথে স্পর্শ করে। আধুনিক সমাজে শুধু মানসিক বা যুক্তিভিত্তিক যুক্তি যথেষ্ট নয়; মানুষ তার সঙ্গে অনুভূতিও চায়।
কাসেমির মতে, হযরত জয়নাব (সা. আ.) প্রমাণ করেছেন যে নারীরা ইসলামি সমাজে কেবল আবেগীয় ভূমিকার বাহক নন, বরং তারা “সত্য প্রচারের জীবন্ত মাধ্যম” হতে পারেন — এমন মাধ্যম যা ভালোবাসা, জ্ঞান, ও সাহসের মাধ্যমে সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে।
তিনি বলেন, “যখন সমস্ত প্রচারমাধ্যম মিথ্যার নিয়ন্ত্রণে ছিল, তখন হযরত জয়নাব (সা. আ.) কেবল তাঁর ঈমান, যুক্তি ও ভাষার শক্তিতে মিথ্যার জাল ভেঙে দিয়েছিলেন। তাঁর কণ্ঠস্বর ইতিহাসে এমন এক স্থায়ী সত্যের প্রতীক হয়ে আছে, যা আজও মানবতার বিবেককে জাগ্রত করে।”
শেষে কাসেমি বলেন, হযরত জয়নাব (সা. আ.)-এর প্রচারপদ্ধতির তিনটি মূল বৈশিষ্ট্য আজও প্রাসঙ্গিক:
১ সমাজে গ্রহণযোগ্য ধর্মীয় ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে সত্য বলা (যেমন কুরআন, নবীজির সুন্নাহ ও আহলে বাইতের মর্যাদা),
২ নিজের চরিত্র ও মর্যাদাকে “জীবন্ত বার্তা” হিসেবে ব্যবহার করা, এবং
৩ সমাজের পরিচয় ও নৈতিক মূল্যবোধ পুনরুজ্জীবিত করা।
এই তিনটি দিক—বুদ্ধিবৃত্তি, ঈমান ও নৈতিকতা—একসাথে মিলেই হযরত জয়নাব (সা.)-এর বার্তাকে যুগের সীমা পেরিয়ে ইতিহাসের অনন্ত অনুপ্রেরণায় পরিণত করেছে। 4312709#