IQNA

কুরআনে সহযোগিতা / পর্ব ৮ 

কুরআনের দৃষ্টিতে সহযোগিতা বনাম গোত্রবাদ ও আধুনিক দলীয় বিভাজন

15:09 - November 05, 2025
সংবাদ: 3478378
ইকনা - ইসলামী সমাজে সহযোগিতা (تعاون) একটি মৌলিক নীতি — এমন এক নৈতিক দায়িত্ব যা মুসলমানদের সৎকাজে একে অপরকে সহায়তা করতে এবং অন্যায় ও পাপের কাজে সহযোগিতা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেয়। এই কুরআনিক নীতি সরাসরি বিরোধিতা করে দুটি ধ্বংসাত্মক প্রবণতার — জাহেলি যুগের গোত্রবাদ (قبیله‌گرایی جاهلی) এবং আধুনিক দলীয় বা গোষ্ঠীগত পক্ষপাত (حزب‌گرایی مدرن)।
ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে “تعاون” অর্থ হলো সত্য, ন্যায় ও কল্যাণের কাজে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। অন্যদিকে, জাহেলি যুগের গোত্রবাদী নীতিতে বলা হতো: “তোমার মিত্র যদি ظالمও হয়, তবুও তার পাশে দাঁড়াও।”
এই মানসিকতা আজও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বিদ্যমান — যেখানে অনেক দেশ নিজেদের স্বার্থ ও জোট রক্ষায় অন্যায়ের পক্ষেও একে অপরকে সমর্থন করে, ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য না করেই।
কুরআনের শিক্ষা এই নীতিকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করে, এবং ঘোষণা করে যে — সত্য ও ন্যায়ের বিরোধী যে কোনো সহযোগিতা নিজেই পাপ।
যদি ইসলামী সমাজে “تعاون” নীতি বাস্তবায়িত হয় — অর্থাৎ, মানুষ গোত্র, সম্পর্ক বা ব্যক্তিগত স্বার্থ না দেখে শুধুমাত্র সৎকাজে একে অপরকে সাহায্য করে এবং অন্যায়ের সঙ্গে সহযোগিতা না করে — তবে সমাজের অধিকাংশ অস্থিরতা ও অবিচার দূর হয়ে যাবে।
একইভাবে, যদি আন্তর্জাতিক পরিসরে রাষ্ট্রগুলো আক্রমণকারী বা অন্যায়কারীর সঙ্গে সহযোগিতা থেকে বিরত থাকে, তবে দুনিয়া থেকে অত্যাচার ও যুদ্ধ মুছে যাওয়া সম্ভব।
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন — “যখন কেয়ামত হবে, তখন এক ঘোষণাকারী ডেকে বলবে: কোথায় সেইসব জালেম ও তাদের সহযোগীরা?
যেসব ব্যক্তি তাদের জন্য কলমে কালি লাগিয়েছে, ব্যাগের মুখ বেঁধেছে, বা তাদের কাজে সামান্য সহায়তাও করেছে— তাদের সবাইকে জালেমদের সঙ্গেই উঠানো হবে।”
(উল্লেখ: এই হাদীসটি সহযোগিতার নৈতিক সীমানা নির্ধারণ করে দেয় — যে কোনো সহযোগিতা যদি অন্যায়ের পক্ষে হয়, তবে তা জালেমের সহযাত্রী হওয়ার সমান।)
আল্লাহ তাআলা সূরা তাওবা (৯:২৪)-এ বলেন:
قُلْ إِنْ كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ ... أَحَبَّ إِلَيْكُمْ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا ... وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ
“বলুন — যদি তোমাদের পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি, ভাই-বোন, স্ত্রী, আত্মীয়, উপার্জিত সম্পদ, ভয় করা ব্যবসা, অথবা প্রিয় বাড়িঘর — এগুলো আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর পথে জিহাদের চেয়ে প্রিয় হয়ে ওঠে, তবে অপেক্ষা করো, যতক্ষণ না আল্লাহর আদেশ আসে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ফাসিক জাতিকে হিদায়াত দেন না।”
এই আয়াত প্রমাণ করে — আত্মীয়তা, সম্পদ বা ব্যক্তিগত ভালোবাসা সবই সীমিত। কিন্তু যখন তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালোবাসার সঙ্গে সংঘর্ষে আসে, তখন যে পক্ষ পার্থিব ভালোবাসাকে অগ্রাধিকার দেয়, সে “ফাসিক” হয়ে যায় এবং হিদায়াত থেকে বঞ্চিত হয়।
কুরআনের শিক্ষা স্পষ্ট — সহযোগিতা তখনই ইসলামী ও মানবিক হয়, যখন তা সত্য, ন্যায় ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হয়।
কিন্তু যখন সহযোগিতা গোত্র, দল বা ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য হয় — তখন তা অন্যায়ের সহচর হয় এবং সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।
অতএব, ইসলামী সমাজে প্রকৃত “تعاون” মানে হলো — অন্যায়ের বিরোধিতা এবং ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকা। 3495102#
 
captcha