IQNA

আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী:

“আল্লামা মির্জা নায়িনি (রহ.) ছিলেন বৈজ্ঞানিক নবতর চিন্তার ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অনন্য আলেম”

12:20 - October 24, 2025
সংবাদ: 3478310
 ইকনা- ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলি খামেনেয়ী (দাঃ বাঃ) বলেছেন, আল্লামা মির্জা মুহাম্মদ হুসাইন নায়িনি (রহ.) এমন এক মহান আলেম, যিনি একই সঙ্গে বৈজ্ঞানিক নবতর চিন্তার অধিকারী ও রাজনৈতিক দর্শনে গভীর জ্ঞানসম্পন্ন ছিলেন।

এই মন্তব্য তিনি আন্তর্জাতিক আল্লামা মির্জা নায়িনি (রহ.) সম্মেলনের আয়োজকদের সঙ্গে এক সাক্ষাতে করেছেন। এ বক্তব্য শুক্রবার কোম শহরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের স্থানেই প্রকাশ করা হয়।
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন — “নায়িনি (রহ.) নিঃসন্দেহে প্রাচীন নাজাফ হাওযার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ ছিলেন। তিনি ফিকহ ও উসূলের ক্ষেত্রে এমন নতুন কাঠামো ও শৃঙ্খলা তৈরি করেছিলেন যা তার আগে খুব কম দেখা গেছে। তাঁর চিন্তায় ছিল পরিস্কার যুক্তি, সুনির্দিষ্ট গঠন ও নতুন রীতি।”
তিনি আরও বলেন, নায়িনি (রহ.)-এর পাঠ ছিল এতটাই সুশৃঙ্খল ও বোধগম্য যে, ফারসি ভাষায় পাঠদান সত্ত্বেও আরব শিক্ষার্থীরাও তার ক্লাসে যোগ দিতেন।
সর্বোচ্চ নেতা উল্লেখ করেন — “নায়িনি (রহ.)-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল বহু মহান মুজতাহিদ ও মারজে গড়ে তোলা। নাজাফের তৎকালীন প্রায় সব শীর্ষ আলেম যেমন আয়াতুল্লাহ খুই, আয়াতুল্লাহ হাকিম ও অন্যান্যরা তাঁরই ছাত্র ছিলেন।”
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন — “নায়িনি (রহ.) ছিলেন এমন এক মারজে তাকলিদ, যিনি কেবল ধর্মীয় চিন্তা নয়, বরং রাজনৈতিক চিন্তাধারার ক্ষেত্রেও অগ্রগামী ছিলেন। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘তানবিহুল উম্মা ও তানযিহুল মিল্লাহ’ ইসলামী রাজনৈতিক দর্শনের এক মূল্যবান দলিল।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন যে নায়িনি (রহ.)-এর রাজনৈতিক ভাবনা তিনটি মূল ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল —ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠা: নায়িনি বিশ্বাস করতেন, শাসনব্যবস্থা ইসলামী হতে হবে।“হুকুমতে ওলায়াতিয়া” (Wilayah-based Government): তিনি স্বৈরশাসনের বিপরীতে এমন শাসনব্যবস্থার কথা বলেন, যা আল্লাহর নির্দেশ ও ওলায়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। জনগণের অংশগ্রহণ ও তদারকি: নায়িনি (রহ.)-এর মতে, সরকার জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তত্ত্বাবধানে থাকবে — যাকে তিনি “মজলিসে মাবউসান” বলেন, যা আধুনিক সংসদের সমতুল্য।
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন — “নায়িনি (রহ.) এমন এক রাজনৈতিক কাঠামো কল্পনা করেছিলেন, যা ইসলামী ও গণভিত্তিক — আজকের ভাষায় বলতে গেলে, সেটিই ‘জমহুরিয়ে ইসলামি’ (ইসলামী প্রজাতন্ত্র)।”
তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন যে এই গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থটি বহু বছর অবহেলিত ছিল এবং পরে আয়াতুল্লাহ তালেগানির প্রচেষ্টায় পুনর্মুদ্রিত হয়।
“এই বইতে নায়িনি (রহ.) রাজনৈতিক ধারণাগুলো ফিকহি যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করেছেন। তিনি শুধু মত প্রকাশ করেননি, বরং একজন প্রকৃত ফকিহের মতো দলিল ও কিয়াসের ভিত্তিতে শাসনব্যবস্থার রূপরেখা উপস্থাপন করেছেন।”
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী আরও বলেন, “নায়িনি (রহ.) কেবল একজন মহান ফকিহই নন, বরং ছিলেন আধ্যাত্মিক সাধকও। তিনি আল্লাহভীরু, নৈতিকভাবে পরিশুদ্ধ ও ইরফানের চর্চাকারী ছিলেন। তাঁর রাতের নামাজ ও ইবাদতের গভীরতা তাঁর আত্মার বিশুদ্ধতার প্রতিফলন।”
সর্বোচ্চ নেতা বলেন —“আল্লামা নায়িনি (রহ.) ছিলেন ব্যতিক্রমী আলেম — জ্ঞান, চিন্তা, ও আধ্যাত্মিকতার এক বিরল সমন্বয়। তাঁর চিন্তাধারা আজও ইসলামী সমাজ ও শাসনব্যবস্থার জন্য দিকনির্দেশক।”
তিনি সম্মেলনের আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে আশা প্রকাশ করেন যে এই উদ্যোগ নায়িনি (রহ.)-এর বৈজ্ঞানিক ও রাজনৈতিক উত্তরাধিকারকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেবে। 4312377#

captcha