IQNA

কুরআনে সহযোগিতা (পর্ব–৫)

সম্পদের সামাজিক মালিকানা: কুরআনের দৃষ্টিতে সহযোগিতার ভিত্তি

17:08 - October 25, 2025
সংবাদ: 3478313
ইকনা- ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, সমস্ত মানুষ আল্লাহর বান্দা এবং সব সম্পদ ও ধন-সম্পত্তি আল্লাহরই মালিকানাধীন। তাই সমাজের অভাবগ্রস্ত ও নিরুপায় মানুষের প্রয়োজন মেটানো উচিত পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার ভিত্তিতে।

নিঃসন্দেহে, প্রতিটি সমাজেই এমন মানুষ থাকে যারা কাজ করতে অক্ষম অথবা তাদের আয় এতটাই সীমিত যে জীবনধারণের সব প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হয় না। ইসলামের দৃষ্টিতে, এই প্রয়োজনগুলো যথাসম্ভব পূরণ করা সমাজের দায়িত্ব। কারণ কুরআনের শিক্ষায় সম্পদ আসলে সমাজেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে নিজের প্রতিনিধি (خلیفه) এবং সম্পদের তত্ত্বাবধায়ক (وکیل) হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। এ কারণেই কুরআন মানুষকে দান ও ব্যয়ের নির্দেশ দিয়েছে।

কুরআনের এক আয়াতে আল্লাহ বলেন


«آمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَأَنْفِقُوا مِمَّا جَعَلَكُمْ مُسْتَخْلَفِينَ فِيهِ» (سوره حدید: ۷)

অর্থাৎ, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনো এবং যা কিছু তোমাদেরকে প্রতিনিধি হিসেবে দেওয়া হয়েছে, তা থেকে ব্যয় করো।

অন্যত্র বলা হয়েছে


«وَآتُوهُمْ مِنْ مَالِ اللَّهِ الَّذِي آتَاكُمْ» (سوره نور: ۳۳)

অর্থাৎ, তাদেরকে সেই আল্লাহর সম্পদ থেকে দাও, যা তিনি তোমাদের দিয়েছেন।

আবার মুত্তাকীদের (পরহেজগারদের) পরিচয় দিতে গিয়ে কুরআন বলে


«وَفِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ» (سوره ذاریات: ۱۹)

অর্থাৎ, তাদের সম্পদে প্রার্থনাকারী ও বঞ্চিতদের জন্য একটি নির্ধারিত অধিকার রয়েছে।

এই আয়াতগুলো স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে সমাজে পারস্পরিক সহযোগিতা ও অন্যকে সাহায্য করা ইসলামী নৈতিকতার অপরিহার্য অংশ।

ইসলামের দৃষ্টিতে ধনীরা আল্লাহর প্রতিনিধি ও সম্পদের আমানতদার। তাই সম্পদ তাদের কাছে একটি আমানত, যা ন্যায় ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে।

ইমাম জাফর আস-সাদিক (আ.) এ প্রসঙ্গে বলেন
তুমি কি মনে করো, আল্লাহ যাদের ধন-সম্পদ দিয়েছেন, তাঁদেরকে সম্মানিত করার জন্যই দিয়েছেন, আর যাদের দেননি, তাঁদেরকে অপমান করার জন্য? কখনও নয়! সম্পদ আসলে আল্লাহরই সম্পদ। তিনি তা নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে আমানত হিসেবে রাখেন এবং অনুমতি দেন যাতে তারা তা থেকে সংযমীভাবে আহার, পানাহার, বস্ত্র, বিবাহ, যাতায়াত এবং দরিদ্র মুমিনদের সাহায্য করতে পারে ও তাদের দুঃখ-কষ্ট দূর করতে পারে।

সুতরাং, ইসলামী দৃষ্টিতে সম্পদ ব্যক্তিগত মালিকানার নয়, বরং সামাজিক আমানত। সমাজের প্রতিটি ব্যক্তি যদি এই দায়িত্ব পালনে সচেতন হয়অর্থাৎ অভাবগ্রস্তদের অধিকারকে সম্মান করেতবে সে সম্পদের ন্যায্য ব্যবহারকারী। কিন্তু যদি সে তার দায়িত্ব ভুলে যায় এবং দরিদ্রদের অধিকার অস্বীকার করে, তবে সে সেই সম্পদের প্রকৃত ব্যবহারাধিকারের যোগ্য নয়। 3495055#

 

captcha