IQNA

ভারতে নতুন নাগরিকত্ব আইন, গণতন্ত্রের দুর্দান্ত চ্যালেঞ্জ

16:56 - March 03, 2020
সংবাদ: 2610342
তেহরান (ইকনা)- জনসংখ্যার অনুপম বৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও ভারতকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করা হত, যা আধুনিক রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে অলৌকিক ঘটনা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞরা এই দেশটিকে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক শৈশবাবস্থা হিসেবে বিবেচনা করেন। এমতাবস্থায়, নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিল পাশ হওয়ার মাধ্যমে ৭২ জাতি’র (সম্প্রদায়) এই দেশকে এ একটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

ভারতে নতুন নাগরিকত্ব আইন, গণতন্ত্রের দুর্দান্ত চ্যালেঞ্জনতুন এই নাগরিকত্ব আইন এবং জাতীয় নাগরিক নিবদ্ধকরণ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ভারতীয় জনগণ তীব্র প্রতিবাদ জানায়। এরফলে এই আইনের সমর্থক এবং বিরোধীদের মধ্যে সহিংস সংঘাত দেখা দেয়। যা দেখটিকে মৌলিক ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। বহুত্ববাদী এবং ধর্মীয় সহনশীলতার দীর্ঘ ইতিহাস সমেত একটি জাতির ভবিষ্যৎ।

 

সংবিধান, বিরোধী উপকরণ
নতুন আইনের প্রতি নাগরিকদের প্রতিরোধ সংবিধানকে তাদের বিরোধিতার মূল উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে সংগঠিত বিক্ষোভগুলোয় জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় সংগীতের মতো সাংবিধানিক দেশপ্রেমের প্রতীক ব্যবহার করা হয়েছে। নাগরিকত্ব আইন এবং জাতীয় নাগরিক নিবদ্ধকরণ পরিকল্পনার (NRC) মাধ্যমে ভারতের পরিচয়ের মূল বিষয়কে হুমকি দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং সংবিধান, যা নিছক সার্বভৌমত্বের কাঠামো হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল, এখন ভিন্ন পদ্ধতির সাথে প্রতিবাদী জনগণের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।

ভারতে নতুন নাগরিকত্ব আইন, গণতন্ত্রের দুর্দান্ত চ্যালেঞ্জ

বিরোধীদের বৌদ্ধিক বৈচিত্র্য
এই বিক্ষোভ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম থেকে শুরু হয়েছে। বিরোধীরা আশঙ্কা করছিলো যে, নতুন এই আইনটি ভারতে অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধের অজুহাতে কয়েক দশকের অশান্তি ছড়িয়ে দেবে। নাগরিকত্ব আইন এবং জাতীয় নাগরিকত্ব নিবন্ধন প্রবর্তনের সাথে সাথে মুসলিম সম্প্রদায়গুলি নিজেকে আগের চেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রকাশ্যে বৈষম্যের শিকার বলে মনে করে। তদুপরি, ভারতে রক্ষণশীল নাগরিক সমাজ, বিশেষত শিক্ষাবিদরা যারা উগ্র জাতীয়তাবাদের দিকে সরকারের অত্যধিক ঝোঁকের বিরোধিতা করেন এবং এটিকে বহুত্ববাদী ও গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য হুমকি হিসাবে দেখেন তারাও এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেছেন।

ভারতে নতুন নাগরিকত্ব আইন, গণতন্ত্রের দুর্দান্ত চ্যালেঞ্জ
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এই বিক্ষোভ বেঁচে থাকার লড়াই। কিন্তু শিক্ষাবিদ ও আধুনিক নাগরিক সমাজের জন্য এটি একটি আদর্শিক বিক্ষোভ। নতুন এই আইনের ভিত্তিতে ভারতীয় মুসলমানদের অস্তিত্ব এবং ধর্মের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

 

দরিদ্রদের অধিকার লঙ্ঘন
নাগরিকত্বের নতুন এই আইনের ফলে প্রতিবেশী তিন দেশের অমুসলিম অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এই কাজের মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে, এসকল অমুসলিম অভিবাসীদেরকে সেদেশের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হতে অনুপ্রাণিত করা হবে। আর এরফলে ভারতীয় মুসলমানরা তীব্র প্রতিবাদ জানায়। মুসলমানদের সাথে একত্বতা প্রকাশ করে অনেক হিন্দু, শিখ এবং খ্রিস্টানরাও এই আইনের বিরোধিতা করেন।
ইন্ডিয়া মজলিশে ইত্তেহাদুল মুসলিমিন-এর (এআইএমআইএম) প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়েসি বলেছেন: “নতুন নাগরিকত্ব আইন এবং জাতীয় নিবদ্ধকরণ প্রকল্পটি ভারতীয় সম্প্রদায়ের দরিদ্র ও দরিদ্রের অধিকারকে পদদলিত করার একটি কর্মসূচি”।

ধর্মান্ধতা এবং সহনশীলতার মধ্যে যুদ্ধ
প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে চরমপন্থি হিন্দু সহিংসতা গত সপ্তাহ থেকে তীব্র হয়েছে। ক্ষমতাসীন ইন্ডিয়ান পার্টির সাথে যুক্ত স্থানীয় রাজনীতিবিদ কপিল মিশ্র যখন ঘোষণা করল, পুলিশ যদি নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তিনি এবং তার সমর্থকরা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে।

ভারতে নতুন নাগরিকত্ব আইন, গণতন্ত্রের দুর্দান্ত চ্যালেঞ্জ

এ কয়েক ঘণ্টা পর তার উগ্রবাদী সমর্থকরা বিক্ষোভকারীদের উপর হামলা চালায়। কয়েক দিনের মধ্যে এসকল উগ্র হিন্দুরা মুসলিম বাড়ি, দোকান ও মসজিদে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই সংঘর্ষের ফলে এ পর্যন্ত ৩৯ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগ মুসলিম।


ক্ষমতাসীন হিন্দু চরমপন্থি দল মনে করে যে, ভারত শুধুমাত্র হিন্দুদের বসবাসের জন্য। ভারতীয় মন্ত্রী গরিয়াজ সিং গতমাসে বলেছে, এদেশের সকল মুসলমানদের পাকিস্তানে পাঠিয়ে দিতে হবে।


ভারতে যা ঘটছে তা কেবল মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে ধর্মীয় দ্বন্দ্ব নয়, বরং ভারতে দুই ধরণের চিন্তার মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব; এই দ্বন্দ্বের দুই গ্রুপের মধ্যে একটি হচ্ছে -ভারতকে একটি উন্মুক্ত ও অ-ধর্মীয় দেশ হিসাবে দেখেন- এবং –অপরটি হচ্ছে ভারতকে শুধুমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে দেখে। এই দুই ধরণের চিন্তাভাবনার মধ্যে কোনটি শেষ পর্যন্ত বিরাজ করে তা কেবল মুসলমানদের জন্যই নয়, সমস্ত ভারতীয়দের ভবিষ্যতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।  iqna

ইকনার সিনিয়র রিপোর্টার মোহসেন হাদ্দাদি

captcha