IQNA

কুরআনের সূরাসমূহ/৩

সূরা আলে ইমরানে শত্রুদের বিরুদ্ধে নবীদের প্রতিরোধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ

4:28 - May 27, 2022
সংবাদ: 3471905
তেহরান (ইকনা): সূরা আলে ইমরান পবিত্র কুরআনের বৃহৎ সূরাসমূহের মধ্যে একটি সূরা। এই সূরায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিশেষকরে হযরত ইয়াহিয়া  (আ.) এবং হযরত ঈসা (আ.)-এর জীবনী তুলে ধরা হয়েছে।তাঁরা শত্রুদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন, যা সকল যুগের জন্য মডেল হিসেবে  বিবেচনা করা হয়।
পবিত্র কুরআনের তৃতীয় সূরার নাম “আলে ইমরান”। এই সূরায় মোট ২০০টি আয়াত রয়েছ। তৃতীয় এবং চতুর্থ পারায় এই সূরা বর্ণিত হয়েছে। এই সূরাটির নামকরণ হয়েছে "আল-ইমরান" এই সূরার দুটি আয়াতে "ইমরান" শব্দের অস্তিত্বের কারণে। ৩৩ নং আয়াতে ইমরানের পরিবারের কথা বলা হয়েছে এবং ৩৫ নং আয়াতে হযরত মরিয়ম (সা. আ.)-এর পিতা ইমরানের কথা বলা হয়েছে।
এই সূরাটির আরেকটি নাম "তাইয়্যিবা", যার অর্থ অপবিত্রতা এবং অভিযোগ থেকে পরিচ্ছন্ন এবং পবিত্র, যা হযরত মরিয়মের (সা. আ.)-এর পাপ ও অপবাদ থেকে পবিত্রতাকে নির্দেশ করে।
এই সূরা ৮৯তম সূরা যা নাযিলের ক্রমানুসারে নবী করীম (সা.) এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল। আলে ইমরান সূরায় তিন জন বিশিষ্ট ব্যক্তির জন্মগ্রহণের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। এই তিন জন বিশিষ্ট ব্যক্তি হলেন: হযরত ইয়াহিয়া (আ.), হযরত মারিয়াম (সা. আ.) এবং হযরত ঈসা (আ.)।
এই সূরাটি মদিনায় নাযিল হয়েছে বলে মাদানী সূরা বলা হয়। 
কিছু মুফাসসিরের মতে, এই সূরাটি বদরের এবং উহুদ এই দুই যুদ্ধের মধ্যে অর্থাৎ হিজরির দ্বিতীয় ও তৃতীয় বছরে (৬২৪ থেকে ৬২৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে) অবতীর্ণ হয়েছিল এবং ইসলামের আবির্ভাবের প্রথম দিকে মুসলমানদের জীবনের সবচেয়ে সংবেদনশীল সময়ের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
কিছু মুফাসসির মনে করেন যে প্রতিটি সূরা একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে নির্দেশ করে এবং বিভিন্ন বিষয়কে মূল বিষয়ের দিকে বিবেচনা করা হয়। এই সূরায় মুসলমানদের জয়-পরাজয়, মুসলমানদের বিভিন্ন পরিস্থিতি এবং অন্যান্য জাতি ও ধর্মের সাথে তাদের সম্পর্ক সম্পর্কিত ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। তাফসির আল-মিজানের মতে, সূরা আল-ইমরানের মূল উদ্দেশ্য হল ইসলামের শত্রুদের মোকাবেলায় ঈমানদারদের ঐক্য, ধৈর্য ও সহনশীলতার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এই সূরার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি হল:
১। তৌহিদ ও মা’য়াদ:
এই সূরার গুরুত্বপূর্ণ অংশ তৌহিদ বা একেশ্বরবাদ এবং মহান আল্লাহর গুণাবলী এবং মা’য়াদ ও ইসলামী শিক্ষা।
২। জিহাদ:
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে জিহাদ এবং এর গুরুত্বপূর্ণ আদেশ। আল্লাহর পথে শহীদদের অনন্ত জীবন এবং সেইসাথে বদর ও উহুদের যুদ্ধের শিক্ষা নিয়ে আলোচনা। 
৩। ইসলামিক বিধি-বিধানের প্রতি মনোযোগ দেওয়া:
এই সূরার একটি অংশে কাবা ঘর ও মুসলমানদের একত্রিত করার প্রয়োজনীয়তা, হজের ফরজ বিষয়সমূহ, সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ, তাওল্লা ও তাবার্রী, আমানত, আল্লাহর পথে দান করা, মিথ্যা পরিত্যাগ করা, কষ্টের মধ্যে ধৈর্য ধারণ করা এবং কঠিন বিপদে মহান আল্লাহ স্মরণ করার কথা বলা হয়েছে।
৪। মুসলমানদের ঐক্যের প্রয়োজন:
এই সূরার কিছু আয়াতে মুসলমানদের ঐক্য এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের কথা বলা হয়েছে। মুসলিম ও কাফেরদের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধের কথা বিবেচনা করে, জিহাদের আহ্বান, মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখা এবং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শত্রুদের প্রতিহত করার বিষয়টি এই সূরায় বিবেচনা করা হয়েছে যা এই সূরার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
৫। নবীদের ইতিহাসের প্রতি ইঙ্গিত:
এই সূরার কিছু আয়াত হযরত আদম (আ.), হযরত নূহ (আ.), হযরত ইব্রাহীম (আ.), হযরত মূসা (আ.), হযরত ঈসা (আ.) এবং হযরত মরিয়ম  (আ.)এর ঘটনা সহ নবীদের ইতিহাস এবং সেইসাথে এই মহান ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত ঘটনাবলী তুলে ধরা হয়েছে। 

 

সংশ্লিষ্ট খবর
captcha