
ইকনা (IQNA)-র প্রতিবেদনে আল-আরবি আল-জাদিদ পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়, এসব গ্রন্থাগারে যুগের পর যুগ ধরে সংগৃহীত হাজারো পাণ্ডুলিপি থাকা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক দশকে এই বিষয়ে গবেষণা ও প্রকাশনা কার্যক্রমে গতি ও আগ্রহ হ্রাস পেয়েছে। বহু-খণ্ডে প্রকাশযোগ্য গ্রন্থগুলোও এখন স্থবির অবস্থায় রয়েছে, যা তিউনিসিয়ার সংস্কৃতি ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য উদ্বেগজনক।
পাণ্ডুলিপি প্রকাশের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ
এর একটি দৃষ্টান্ত হলো অষ্টাদশ শতাব্দীর ঐতিহাসিক ও সাহিত্যিক হামুদা ইবন আবদুল আজিজ রচিত পাণ্ডুলিপি “আল-কিতাব আল-বাশি”।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর চলতি বছরের ২০ সেপ্টেম্বর, গবেষক নাদিয়া বুসাইদি বিন জাবর-এর তত্ত্বাবধানে আল-আত্রাশ প্রকাশনা সংস্থা থেকে পাণ্ডুলিপিটির পূর্ণ সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
এর প্রথম খণ্ডটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭০ সালে গবেষক মুহাম্মদ মাধুর-এর সম্পাদনায়, তবে দ্বিতীয় খণ্ড দীর্ঘদিন প্রকাশিত হয়নি।
তিউনিসিয়ার পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণাগার
তিউনিসিয়ার পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ইতিহাসবিদ মুহাম্মদ মাহফুজ-এর “তিউনিসি লেখকদের জীবনী” (১৯৯৪) এবং হাসান হুসনি আবদুল ওয়াহাব-এর “তিউনিসীয় রচনাবলীতে জীবনচিত্র” নামের গ্রন্থ দুটি।
এই কাজগুলো ১৮৮৫ সালে তিউনিসিয়ার জাতীয় গ্রন্থাগারের ভিত্তি স্থাপন করে এবং দেশটির গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক দলিল সংরক্ষণে সহায়ক হয়।
পরবর্তীতে রাকাদা শহরে অবস্থিত জাতীয় পুনর্গঠন ও সংরক্ষণ ল্যাবরেটরি পাণ্ডুলিপি পুনরুদ্ধার ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রকল্প হাতে নেয়।
গবেষণার গতি হ্রাস
তবে এসব উদ্যোগের পরও সাম্প্রতিক দশকগুলোতে পাণ্ডুলিপি-গবেষণার গতি আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে।
১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে এই গবেষণা সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিল। সে সময় ফিকহ, ইতিহাস ও সাহিত্য বিষয়ে বহু মৌলিক রচনা বিশ্লেষণ করা হয়, যেমন—
• “আ‘লাম আল-আ‘ইয়ান লিতাখফিফাত আশ-শর‘ আনিল ‘আবিদ ওয়াস-সিবিয়ান” — আহমদ বারনাজ (১৭শ শতাব্দী)
• দেওয়ান আল-ওয়ারঘি (১৮শ শতাব্দী)
• “ইতহাফ আহলুয যামান ফি আখবার মুলুক তুনিস ও আহদুল আমান” — ইবন আবি আজ-জিয়াফ (১৯শ শতাব্দী)
এই গবেষণাগুলো ব্যক্তিগত নয়, বরং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সংগঠিত প্রকল্প ছিল, যার মধ্যে অন্যতম ছিল “নাফিস পাণ্ডুলিপি সিরিজ” — যেখানে “আল-কিতাব আল-বাশি”-র প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়।
তবে সময়ের সঙ্গে এসব বৃহৎ সাংস্কৃতিক প্রকল্প ও প্রকাশনা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ায় গবেষণার গতি কমে যায়।
নতুন প্রতিষ্ঠানের অবদান
পরবর্তীতে নতুন প্রতিষ্ঠান যেমন বাইতুল হিকমাহ (بيت الحكمة), জাতীয় গ্রন্থাগার, এবং ইমাম মালিক পাণ্ডুলিপি ফাউন্ডেশন— এই ঐতিহ্য সংরক্ষণের কাজ অব্যাহত রাখে।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষণা হয় ইবন খালদুনের “আল-ইবর” বা “তারিখ ইবন খালদুন” গ্রন্থ নিয়ে, যা অধ্যাপক ইব্রাহিম শাবুহ-এর তত্ত্বাবধানে বহু গবেষকের যৌথ প্রচেষ্টায় সম্পন্ন হয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে উচ্চ প্রশংসা পায়।
জাতীয় গ্রন্থাগার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরও কিছু অনন্য কাজ করেছে, যেমন—
১৯১৬ সালে আরবি কথ্য তিউনিসীয় ভাষায় লেখা প্রথম উপন্যাস “হাইলাহ ও হুব” (চালাকি ও প্রেম)-এর উপর গবেষণা প্রকল্প।
সূচিপত্র প্রণয়ন ও সমস্যা
গবেষক আবদুল ওয়াহাব দাখলি তার “তিউনিসিয়ার পাণ্ডুলিপি ঐতিহ্যে অবদান” প্রবন্ধে বলেন,
“পাণ্ডুলিপিগুলো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় পূর্ণাঙ্গ সূচিপত্র তৈরি করা কঠিন।
বিশেষত আল-জায়তুনা বিশ্ববিদ্যালয় ধর্মীয় বিষয়ক পাণ্ডুলিপি গবেষণায় সীমাবদ্ধ, ফলে অনেক কাজ তাকের ওপরে থেকেই যায়।”
একইসঙ্গে সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় নতুন পাণ্ডুলিপি আবিষ্কার গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি এনেছে — যেমন,
দাব্বাগ আল-কাইরোয়ানির “মা‘আলিমুল ইমান ফি মারিফাত আহলিল কাইরোয়ান” গ্রন্থের নতুন কপি আবিষ্কার পূর্ববর্তী সিদ্ধান্তগুলোকে পুনর্বিবেচনার সুযোগ দিয়েছে।
ব্যক্তিগত উদ্যোগের উত্থান
সাম্প্রতিক সময়ে কিছু গবেষক ব্যক্তিগতভাবে পাণ্ডুলিপি নিয়ে কাজ করছেন, নিজের অর্থ ব্যয়ে গবেষণা প্রকাশ করছেন।
উল্লেখযোগ্য একটি কাজ হলো শাইখ মুহাম্মদ ইবন সালামা রচিত “আল-আকদুল মুনাদ্দাদ ফি আখবারিল মুশির আল-বাশা আহমদ”, যা ১৯শ শতকে তিউনিসিয়ার আধুনিকতার সূচনালগ্ন নিয়ে রচিত। এই গ্রন্থটি ২০২4 সালে গবেষক আহমদ আত-তুইলি প্রকাশ করেন।
তবে এসব ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা এখনও সরকারি স্বীকৃতি বা প্রাতিষ্ঠানিক উৎসাহ পাচ্ছে না।
বইমেলা বা সরকারি সাংস্কৃতিক উৎসবে “সেরা পাণ্ডুলিপি গবেষণা” নামে কোনো পুরস্কারও নেই, ফলে গবেষকদের আগ্রহ হ্রাস পাচ্ছে।
তিউনিসিয়ার প্রাচীন গ্রন্থাগারগুলো এখনো জ্ঞানের এক অমূল্য ভাণ্ডার বহন করছে।
কিন্তু পর্যাপ্ত বিনিয়োগ, উৎসাহ ও সমন্বিত গবেষণার অভাবে এই ঐতিহ্যের বড় অংশ অপ্রকাশিত ও অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে।
ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই পাণ্ডুলিপিগুলো পুনরুদ্ধার ও প্রকাশ করা গেলে, তিউনিসিয়া আবারও ইসলামী জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে। 4309942#