আন্তর্জাতিক ডেস্ক: অবশেষে বহু প্রতীক্ষিত ছায়াছবি ‘মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ'র (স.)’ প্রথম পর্বের প্রদর্শন শুরু হয়েছে ইরানের রাজধানী তেহরানসহ দেশটির ১১ টি শহরে।
বার্তা সংস্থা ইকনা: আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে শুরু হয় এই ঐতিহাসিক চলচ্চিত্রের প্রদর্শন। তেহরানের ৪৫টি এবং দেশের অন্যান্য শহরের ৯৮টি (মোট ১৪৩ টি) সিনেমা হলে প্রদর্শন হচ্ছে এই ছায়াছবি। দর্শকদের ভিড় সামলাতে প্রায় প্রতিটি সিনেমা হলে সাধারণ শো'র বাইরে বিশেষ শো'র ব্যবস্থা করা হয়েছে। কানাডার মন্ট্রিল আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও ২ ঘণ্টা ৫৮ মিনিটের এই ছায়াছবি দেখানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এই চলচ্চিত্রের নির্মাতা ও পরিচালক মাজিদ মাজিদি এই উৎসবে যোগ দেয়ার জন্য গতকাল মন্ট্রিলের উদ্দেশে তেহরান ত্যাগ করেছেন।
ইরানের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এ ছবি নির্মাণে ৫৫ কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে। মোহাম্মদ মাহদি হায়দারিয়ান প্রযোজিত এ ছবির চিত্র ধারণ করা হয়েছে ইরান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার শহর বেলা-বেলা’তে।
খ্যাতনামা পরিচালক মাজিদ মাজিদি'র এই ছায়াছবির দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্ব এখনও নির্মাণ করা হয়নি। প্রথম পর্বে বাদশাহ আবরাহার পবিত্র কাবা শরীফ আক্রমণের ঘটনা থেকে শুরু করে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র ১২ বছর বয়সের নানা ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে ঐতিহাসিক এই ফিল্মে।
মহানবীর জীবনীভিত্তিক প্রথম ছায়াছবি নির্মাণ করেছিলেন সিরিয়-আমেরিকান চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা আক্কাদ। ওই ছায়াছবির নাম ‘দ্য ম্যাসেজ’। ১৯৭৬ সালে তা মুক্তি পাওয়ার পর মুসলমান বিশ্বের কোনো কোনো মহল তার কঠোর সমালোচনা করেছিল। দ্বীনের নবীর জীবনীভিত্তিক ছবি নির্মাণকে কেন্দ্র করে বিশ্বের কোনো কোনো মুসলমানের উদ্বেগের বিষয়টি অনুধাবন করে মাজিদ মাজিদি বলেন, “ছবিতে বিকল্পভাবে মহান নবীকে উপস্থাপন করা হয়েছে। চলচ্চিত্রে মহানবী ক্যামেরার দিকে পেছন ফিরে ছিলেন। তাঁর অবয়ব দেখা গেছে। কিন্তু তার চেহারা মোবারক দেখানো হয়নি।”
তিনি বলেন, ‘পুরো ছবিতে নায়কের দুর্দান্ত উপস্থিতি রয়েছে কিন্তু তাঁর চেহারা দেখানো হয় নি- সত্যিই এটা একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ ছিল।‘ এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশেষ পদ্ধতির আশ্রয় নেন মাজিদি এবং তিন তিনবার অস্কার বিজয়ী ইতালির সিনেমাটোগ্রাফার ভিত্তেরিও স্তোরারো।
মাজিদি বলেন, ছায়াছবিতে মহানবীকে তুলে ধরার জন্য বিশেষভাবে তৈরি স্টেডিক্যাম ব্যবহার করা হয়। চলচ্চিত্রটির যে দৃশ্যেই রাসূল (স)-কে দেখানো হয়েছে সেখানেই দৃশ্যটি নবীর দৃষ্টিভঙ্গি অর্থাৎ চলচ্চিত্রের ভাষায় ক্যারেক্টারস পয়েন্ট অব ভিউ বা পিওভি থেকে দেখানো হয়েছে। এমনকি নবীজির শৈশবের দৃশ্যও এ ভাবে চিত্রায়িত হয়েছে বলে জানান তিনি।
মাজিদি বলেন, চলচ্চিত্রটিতে সবাই মুহাম্মদ (স)কে দেখার জন্য উদগ্রীব থাকবে কিন্তু কেউ তাঁর পবিত্র মুখমণ্ডল দেখতে পাবেন না। তাঁর অবয়ব দেখা যাবে বা ক্যামেরার দিকে পেছন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন- এমন দৃশ্যই কেবল দেখা যাবে।
তেহরানে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে ৫৬ বছর বয়সী মাজিদ মাজিদি বলেন, ‘পশ্চিমা বিশ্বে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পবিত্র দ্বীন ইসলামের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।‘
আন্তর্জাতিক নানা পুরস্কার জয়ী মাজিদি একাধারে চলচ্চিত্র নির্মাতা, প্রযোজক ও চিত্র-নাট্য লেখক। ‘বাচ্চেহয়ে অসেমন বা বেহেশতের শিশু’, ‘ রাং-এ বেহেশত বা বেহেশতের রং’ এবং দ্য কালার অব প্যারাডাইজ তার নির্মিত তিনটি বিশ্বনন্দিত ছায়াছবি। ১৯৯৮ সালে নির্মিত ‘বাচ্চেহয়ে অসেমন’ ছবিটির জন্য তিনি সেরা বিদেশী ভাষায় নির্মিত ছবির জন্য Academy Awards এর মনোনয়ন পান।
মাজিদি ১৯৫৯ সালে জন্ম গ্রহণ করেন এবং মাত্র ১৪ বছর বয়সে থিয়েটার গ্রুপে কাজ করেছেন। তিনি পড়াশুনা করেছেন তেহরান নাট্য-শিল্প ইন্সটিটিউটে।
3352963