যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন মুসলিম নারীকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। লেবার পার্টির রাজনীতিবিদ শাবানা মাহমুদ (Shabana Mahmood) এই গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় ব্যাপক পরিবর্তন আনেন। এ প্রেক্ষিতে শাবানা মাহমুদকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়। এর আগে উপ-প্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেইনার ব্যক্তিগত বাড়ির কর কেলেঙ্কারির কারণে পদত্যাগ করলে এই পরিবর্তনের পথ সুগম হয়।
শাবানা মাহমুদ ১৯৮০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পারিবারিক শিকড় পাকিস্তানের কাশ্মীর অঞ্চলের মিরপুরে। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লিংকন ল’ কলেজ থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং সেখানকার ছাত্র কমিটির সভাপতি ছিলেন। পরে তিনি পেশাদার ক্ষতিপূরণ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে যোগ্যতাসম্পন্ন আইনজীবী হন।
২০১০ সালে তিনি বার্মিংহাম-লেডিওয়েড আসন থেকে ১০ হাজার ১০৫ ভোটে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি রুশনারা আলী ও ইয়াসমিন কোরেশির সঙ্গে প্রথম মুসলিম নারী এমপি হিসেবে ইতিহাস গড়েন।
শাবানা মাহমুদ লেবার পার্টির সক্রিয় সদস্য। গত বছরের জুলাই মাসে তিনি প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে যুক্তরাজ্যে বিচারমন্ত্রী নিযুক্ত হন।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে শাবানা মাহমুদ বরাবরই ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তবে তিনি মনে করেন, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক বজায় রাখা প্রয়োজন। তার মতে, সহিংস কর্মকাণ্ড ফিলিস্তিনি আন্দোলনের ক্ষতি করে।
গত জুলাইয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে আহ্বান জানান যেন যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়। তার মতে, এটি ইসরাইলের প্রতি শক্ত বার্তা পাঠাবে এবং শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেবে।
২০১৪ সালে তিনি ইসরাইলি দখলদার বসতিগুলোর পণ্য বিক্রির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন। এ ঘটনার পর যুক্তরাজ্যের কিছু ইহুদি মহল তার সমালোচনা করেছিল।
সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, তার নির্বাচনী এলাকা বার্মিংহাম-লেডিওয়েডের কিছু ভোটার বিশেষত ফিলিস্তিন প্রশ্নে তার অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ফলে ভবিষ্যতে তাদের ভোট সমর্থনে প্রভাব পড়তে পারে।
শাবানা মাহমুদের নিয়োগ শুধু ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক বহুমাত্রিকতার প্রতীক। প্রধানমন্ত্রী স্টারমার তাকে এক শক্তিশালী ও নির্ভরযোগ্য নেতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি মানবাধিকারের পক্ষেও দৃঢ় থাকবেন। 4303883#