
ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা এবার জম্মুর মেডিকেল কলেজ থেকে মুসলিম শিক্ষার্থীদের থেকে বাদ দেওয়ার দাবি তুলেছে। জম্মু অঞ্চলে সংঘ পরিবারের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠন কাটরাভিত্তিক শ্রীমাতা বৈষ্ণদেবী ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল এক্সেলেন্সের প্রথম ব্যাচের ছাত্র ভর্তির তালিকা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছে। তাদের মূল দাবি, নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯০ শতাংশ মুসলিম এবং তাঁরা কাশ্মীরের বাসিন্দা।
বিজেপির বিধায়ক আর এস পাঠানিয়া এই বিক্ষোভকে সমর্থন জানিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে রয়েছে ভিএইচপি এবং বজরং দল। তাঁর প্রধান যুক্তি হলো, বৈষ্ণদেবী মন্দিরের দান করা অর্থ দিয়ে যে প্রতিষ্ঠানটি তৈরি হয়েছে, সেখানে মুসলিম সম্প্রদায়ের আধিপত্য থাকা উচিত নয় এবং হিন্দু শিক্ষার্থীদের জন্য আসন সংরক্ষিত রাখতে হবে।
তবে কর্মকর্তারা বলছেন, বৈষ্ণদেবী মেডিকেল ইনস্টিটিউটকে সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়নি। তাই বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী সেখানে হিন্দুদের জন্য আসন সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়।
ভর্তির তালিকা ও বিক্ষোভের কারণ
জম্মু ও কাশ্মীর বোর্ড অব প্রফেশনাল এন্ট্রান্স এক্সামিনেশনস (জেকেবিওপিইই) বৈষ্ণদেবী মেডিকেল ইনস্টিটিউটের জন্য ৫০ জন প্রার্থীর একটি তালিকা প্রকাশের পরই এই বিক্ষোভ শুরু হয়।
নির্বাচিত ৫০ জন প্রার্থীর মধ্যে ৪২ জন কাশ্মীরের এবং ৮ জন জম্মুর। কাশ্মীর থেকে ইতিমধ্যে ৩৬ জন এবং জম্মু থেকে ৩ জন ভর্তি হয়েছেন।
উগ্র হিন্দু্ত্ববাদী ভিএইচপি ও বজরং দল কাটরা ইনস্টিটিউটের বাইরে আজ বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ করেছে এবং বৈষ্ণদেবী মন্দির বোর্ডের প্রধান কার্যনির্বাহী কর্মকর্তার কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে।
ভিএইচপির জম্মু ও কাশ্মীর শাখার সভাপতি রাজেশ গুপ্তা দাবি করেছেন, ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি স্থগিত রাখতে হবে এবং কর্তৃপক্ষকে তাদের ‘ভুল সংশোধন’ করে পরবর্তী ব্যাচে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু শিক্ষার্থী ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে। তিনি এবারের ৫০ জনের তালিকাটিকে ‘মেডিকেল কলেজটিকে ইসলামীকরণের ষড়যন্ত্র’ বলে উল্লেখ করেছেন।
বজরং দলের জম্মু ও কাশ্মীর শাখার সভাপতি রাকেশ বজরঙ্গি জেকেবিওপিইইর তালিকা তৈরির প্রক্রিয়ায় পক্ষপাতের অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, মন্দির বোর্ড যেহেতু সারা দেশের ভক্তদের দানে চলছে, তাই কলেজটির উচিত ছিল কেন্দ্রীয় এনইইটি পুল থেকে সারা ভারতের প্রার্থীদের ভর্তি করা।
বিজেপির বিধায়ক পাঠানিয়া যুক্তি দেন, ‘যেহেতু এই প্রতিষ্ঠান সরকারের থেকে এক পয়সাও অনুদান নেয় না এবং সম্পূর্ণরূপে তীর্থযাত্রীদের দানে চলে, তাই এখানে হিন্দু শিক্ষার্থীদের জন্য আসন সংরক্ষণ করা উচিত।’
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ও বিধিমালা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ন্যাশনাল মেডিকেল কাউন্সিলের (এনএমসি) নির্দেশিকা অনুযায়ী ভর্তিপ্রক্রিয়া হয়েছে এবং এটি সম্পূর্ণ বৈধ। এই নির্দেশিকা অনুযায়ী—
জম্মু ও কাশ্মীরের ১৩টি মেডিকেল কলেজের ১ হাজার ৬৮৫টি আসনে এনইইটির তালিকার ভিত্তিতে ভর্তি করতে হবে।
৮৫ শতাংশ আসন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে এবং ১৫ শতাংশ আসন দেশের বাকি অংশের প্রার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
জেকেবিওপিইইর কাজ হচ্ছে এনইইটি র্যাঙ্কিংয়ের ভিত্তিতে সরকারি কলেজগুলোতে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দাদের কোটা এবং বেসরকারি কলেজগুলোর সব আসনের জন্য তালিকা তৈরি করা।
কর্মকর্তারা আরও বলেন, এই প্রবণতা নতুন নয়। যদিও জম্মু অঞ্চলে কাশ্মীরের তুলনায় বেশি মেডিকেল আসন (জম্মুতে ৯০০, কাশ্মীরে ৬৭৫) রয়েছে, তবু কয়েক বছর ধরে কাশ্মীরের শিক্ষার্থীরাই বেশির ভাগ আসনে ভর্তি হচ্ছেন। তবে ইঞ্জিনিয়ারিং আসনগুলোর ক্ষেত্রে বিপরীত চিত্র দেখা যায়। সেখানে জম্মুর শিক্ষার্থীরা বেশি ভর্তি হন।
ন্যাশনাল কনফারেন্সের প্রতিক্রিয়া
ন্যাশনাল কনফারেন্সের জম্মু প্রদেশের সভাপতি রতন লাল গুপ্ত এই পরিস্থিতির জন্য কলেজ পরিচালনাকারী শ্রীমাতা বৈষ্ণদেবী বোর্ডকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্য এনএমসিতে আবেদন করার সময় তাঁদের সংখ্যালঘু মর্যাদার জন্যও আবেদন করা উচিত ছিল।
যেহেতু মন্দির বোর্ড সংখ্যালঘু মর্যাদার জন্য আবেদন করেনি, তাই জেকেবিওপিইইর কাছে এনইইটি-এ পাওয়া মেধার ভিত্তিতে ছাত্র নির্বাচন করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না। গুপ্ত বলেন, উচ্চ মেধার অধিকারী বেশির ভাগ শিক্ষার্থী কাশ্মীরের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ভুক্ত (মুসলিম) ছিলেন।