ইমাম হাদী (আ.)'র ওপর নানা ধরনের নির্যাতন সত্ত্বেও তিনি জালিম ও
শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। ফলে ভীত-সন্ত্রস্ত আব্বাসীয়
সরকার তাঁকে বিষ-প্রয়োগের মাধ্যমে শহীদ করে। আজ থেকে ১১৮৩ চন্দ্র-বছর আগে
২৫৪ হিজরির এই দিনে তথা তেসরা রজব আব্বাসীয় খলিফা মুতাজ ৪১ বা ৪২ বছর বয়সের
ইমাম হাদী (আ.)কে বিষ প্রয়োগে শহীদ করে। ফলে বিশ্ববাসী তাঁর
উজ্জ্বল আলো থেকে বঞ্চিত হয়।
যেমন, আব্বাসীয় রাজার কয়েকজন জল্লাদ ও ভৃত্য রাজার নির্দেশে ইমাম (আ.)-কে
আকস্মিকভাবে হত্যা করার উদ্যোগ নিয়ে দেখতে পায় যে ইমামের চারদিকে রয়েছে একশ
জনেরও বেশী সশস্ত্র দেহরক্ষী।
আর একবার রাজা মুতাওয়াক্কিল ইমামকে ভীত-সন্ত্রস্ত করার জন্য তাঁর সামনে
৯০ হাজার সেনার সশস্ত্র মহড়ার উদ্যোগ নিলে ইমাম হাদী (আ.) মুতাওয়াক্কিলকে
আকাশ ও জমিনের দিকে তাকিয়ে দেখতে বললে সে দেখতে পায় যে, আকাশ আর জমিন ভরে
গেছে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত অসংখ্য সশস্ত্র ফেরেশতায় এবং রাজা তা দেখে
অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
একই রাজা ইমামকে অপমান করার জন্য তাঁকে খাবারের দাওয়াত দেয়। ইমাম খাবারে হাত দেয়া মাত্রই রাজার নিয়োজিত এক ভারতীয় জাদুকরের জাদুর মাধ্যমে ওই খাবার উধাও হয়ে যায়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই হাসতে থাকলে ইমাম জাদুকরের পাশে থাকা বালিশে অঙ্কিত সিংহের ছবিকে জীবন্ত হতে বলেন। সিংহটি জীবন্ত হয়ে ওই জাদুকরকে টুকরো টুকরো করে ফেলে। মুতাওয়াক্কিল তাকে আবার জীবিত করার জন্য ইমামকে অনুরোধ করেন, কিন্তু ইমাম বললেন: আল্লাহর শপথ তুমি তাকে আর দেখবে না! তুমি কি আল্লাহর ওলির ওপর আল্লাহর শত্রুকে কর্তৃত্বশীল করতে চেয়েছিলে?
মুতাওয়াক্কিল কখন কিভাবে মারা যাবে তাও ইমাম আগেই বলেছিলেন। ইমামের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ঠিক সেভাবে ও সেই সময়ই মারা গিয়েছিল এই আব্বাসীয় রাজা। মুহাম্মাদ বিন শরাফ থেকে বর্ণিত হয়েছে: ইমাম হাদী (আ.)'র সঙ্গে মদীনার একটি রাস্তায় হাঁটছিলাম। ইমামের কাছে একটি প্রশ্ন করব বলে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু প্রশ্ন করার আগেই ইমাম হাদী (আ.) বললেন: 'আমরা এখন ভিড়ের মধ্যে রয়েছি এবং জনগণ চলাফেরা করছে। এখন প্রশ্ন করার জন্য ভালো সময় নয়।' (বিহারুল আনোয়ার)